কেউ নাচছে গানের তালে তালে। কেউ বা আবার গান গাইছে নিজের সুরে। অনেকেই দৌড়ে বেড়াচ্ছে মাঠজুড়ে। বাবা-মা হীন এসব এতিম শিশুদের আনন্দ ও কোলাহলে ঈদের দিন সকাল থেকেই মুখর হয়ে ওঠে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। সারাদিন চলে শিশুদের এই আনন্দ উৎসব। এভাবেই তারা উদযাপন করে ঈদের আনন্দ।
এছাড়া কোরবানির উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্বাসন কেন্দ্রে এতিম শিশুদের জন্য একটি গরু উপহার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ওই গরু এতিম শিশুদের আনন্দ বাড়িয়েছে বহুগুণ। ঈদের আগের দিন রাতে কোরবানির গরুটি যখন শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঢোকে তখন সেটি দেখতে ভিড় জমায় শিশুরা।
জানা গেছে, অন্যসব শিশুদের মতই ঈদের দিনটি খুশির বার্তা নিয়ে আসে এসব এতিম শিশুদের মধ্যেও। যাদের চার দেয়ালের মধ্যে কাটে বছরের পুরোটি সময় সেইসব বাবা-মা হীন শিশুদের নিষ্পাপ মুখ বাধভাঙা উল্লাসে রঙিন হয়ে ওঠে ঈদের এই দিনটিতে। কারও বাবা নেই, কারও মা নেই, কেন্দ্রটিতে রয়েছে এমন প্রায় ৩০০ শিশু।
অন্যসব শিশুদের মতই ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তাদের গোসল করিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয় নানা রঙের বাহারি পোশাক। এরপর বাঙালির চিরায়ত নিয়ম মেনে দেওয়া হয় সেমাই ও খিচুড়ি। এরপর শিশুরা যোগ দেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। যে যেমন খুশি অংশ নেয় অনুষ্ঠানে আবার কেউ বা শুধু উপভোগ করে।
আরও জানা গেছে, এরপর দুপুরে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয় এতিম এসব শিশুর মাঝে। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, গরুর মাংস, ডাল, সালাদ, দই, মিষ্টি ও সেভেনআপ।
বিকালে তারা শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিশু পার্কে আনন্দঘন সময় কাটায়। পার্কের বিভিন্ন রাইড এ চড়ে তারা আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
রাতে তাদের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
এভাবেই শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৩০০ শিশুর ঈদ কেটে যায়।
শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে সাদিয়া নামে এক শিশুর সাথে কথা হয়। সে জানায়, ঈদে আমরা এখানে খুবই আনন্দ করি। ইচ্ছামত নাচ গান করি। সকাল,দুপুর ও রাতে আমাদের জন্য স্পেশাল খাবার ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গরুটি পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত।
মারিয়া নামে এক শিশুর সাথে কথা হলে সে বলে, ঈদের দিনটা আমাদের অনেক আনন্দ হয়। অন্যরা যেমন পরিবারের সাথে ঈদ করে আনন্দ পায় আমরাও এখানে তেমন আনন্দ করি। কখনও মা বাবার জন্য কষ্ট হলে তখন শিক্ষিকাকে মা বলে ডাকি।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তত্বাবধায়ক শিলা সাহা বলেন, আমি এখানে আসার পর শিশুদের সাথেই ঈদ উদযাপন করি। ওদের আনন্দই আমার আনন্দ এখন। এখানকার তিনশ’ শিশুর মা আমি। ঈদের দিন সকালে ওরা ঘুম থেকে ওঠার পর গোসল শেষে নতুন পোশাক পরেছে। এরপর সেমাই ও খিচুড়ি খেয়েছে। এরপর তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যে যার মত আনন্দ করছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গরু ও ঈদ উপহার শিশুদের ঈদের আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়েছে। এখানে শিশুরা উৎসব মুখর পরিবেশে নিজেদের মতো করে ঈদ উদযাপন করেছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম