ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের সবকটি নদনদীর পানি উঠা-নামা করছে। তবে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিদিন নদ তীরবর্তী অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পক্ষান্তরে কমছে তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি যা গত কয়েকদিন ধরে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন তা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীসমুহে পানি কমা বাড়ার কারণে চরাঞ্চলগুলোতে নতুন করে রাস্তাঘাট বাড়িঘরে পানি উঠে বন্যায় কবলিত হচ্ছে বেশ কিছু পরিবার।
দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি সংকট। পাশাপাশি চরের উচু স্থানে শৌচাগারগুলোতে পানি উঠায় নারী ও কিশোরীরা পয়:নিস্কাশনে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। কোথাও কোথাও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেখানকার লোকজন কলার গাছের ভেলা ও নৌকায় যাতায়াত করছেন।
শুক্রবার বিকেলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ১৬ সে.মি নিচ দিয়ে, চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ২ সে.মি নিচ দিয়ে, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ৫২ সে.মি নিচ দিয়ে এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ২৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চরের বাসিন্দা ফুলমতি বেওয়া বলেন, 'তিনদিন হয় বানের পানিত পায়খানা ডুবি গেইছে। খাবার পানির কল তলে আছে বাহে, কেমন করি চলাফেরা ও পায়খানা পেসাব করি। খুব সমস্যা হইছে বা।'
সদরের পাঁচগাছী এলাকার চরের আরেক বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, 'বানের পানিত টিউবওয়েল ডুবি গেইছে।কয়েকদিন থাকি পানি খাওয়া কষ্ট হইছে।' উলিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের খেয়ার আলগা চরের বাসিন্দা আলো খাতুন বলেন, 'স্বামী বাড়িতে নাই, শহরে কাজে গেছে। বাচ্চা ৩ টা ছোট, বাচ্চা ৩টাক ধরে নিজে নৌকা চালায় যাচ্ছি। কি করবো চলাফেরা তো করা নাগবে। খুব কষ্ট হইছে।'
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, আমার এলাকার কয়েকটা চরে ব্রহ্মপুত্রের পানিতে প্রায় ৭শ পরিবার পানিবন্দী। সরকারের থেকে ৪ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬২ মে. টন চাল, সাড়ে ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা ভিত্তিক ইউএনওদের মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল