গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল পরীক্ষা ডোপ টেস্ট। ফলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, নতুন চাকরি বা সরকারি কাজে প্রয়োজনীয় সনদ নিতে এসে বিপাকে পড়ছেন সনদপ্রত্যাশীরা। বাধ্য হয়ে অন্য জেলায় গিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে তাদের, যাতে বাড়ছে সময় ও খরচ দুটোই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডোপ টেস্ট কিটের অভাবে এ সেবা বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে পেশাদার চালকদের লাইসেন্স পেতেও এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে এ পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় সাত মাস ধরে সেবাটি বন্ধ রেখেছে। মাসের পর মাস ডোপ টেস্ট করাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, চাকরি আবেদন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রত্যাশীরা খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কিট না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকে রংপুর বা বগুড়ায় গিয়ে করাচ্ছেন টেস্ট। এতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা, পাশাপাশি একাধিক দিন নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন জেলার সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিনেও সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সনদ প্রত্যাশিরা।
জেলা হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করাতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডোপ টেস্ট করাতে হাসপাতালে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। যেতে হবে বগুড়া না হয় রংপুর। কি যে করি?’
ভুক্তভোগী সেলিম মিয়া বলেন, ‘যে টাকা ডোপ টেস্ট করাতে খরচ হতো এখন তার চেয়ে দ্বিগুন টাকা অন্য জেলায় যাওয়া আসাতে খরচ হয়েছে। সাথে যোগ হয়েছে সময় ও ভোগান্তি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু পেশাদার চালক বা সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা নন, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেও এখন ডোপ টেস্টের সনদ লাগে। অনেক আসামিরও পরীক্ষা করাতে হয়। কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন এসে ফিরে যাচ্ছেন। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
গাইবান্ধা জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালেব সরকার বকুল অভিযোগ করে জানান, প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তারা দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ডোপ টেস্ট বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি পরিবহন শ্রমিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বিআরটিএ গাইবান্ধা সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক কামাল আহমেদ কাজল জানান, জেলায় ডোপ টেষ্ট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। সকল কাজ সঠিক সময়ে শেষ করলে টেষ্ট সনদ পেতে দেরি হওয়ায় নতুন লাইসেন্স বা নবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ উর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনলায় থেকে ডোপ টেস্ট কিট সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেবা দিতে পারছেন না তারা। সেই সাথে নতুন করে কিট কেনার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক