আজগর ক্লাস থ্রিতে পড়ে। একটু মোটাসোটা গড়নের শীরর ওর। একেবারে নাদুসনুদুস। হাঁটার সময় থপাস থপাস শব্দ করে হাঁটে। এক সাথে হাঁটলে মনে হয় পাশে দিয়ে একটি গণ্ডার হাসফাস হাসফাস করে হেঁটে যাচ্ছে। এই নিয়ে বন্ধুমহলে ওকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়। কখনো কখনো বন্ধুরা বলে ওঠে, এই দেখ দেখ মটু আসছে। কিরে মটকা কেমন আছিস? নানান কথা। এমনকি ব্যঙ্গ করে কখনো গণ্ডার, কখনো হাতি, আবার কখনো অজগর নামেও ডাকা হয়। এই নামগুলো আজগরের ভালো লাগে না। ওর সহ্য হয় না। খুব রেগে যায়। এগুলো দেখে বন্ধুরা আরও বেশি ব্যঙ্গ করতে থাকে। নাকে চোখে জল না আসা পর্যন্ত ছাড়ে না। নাস্তানাবুদ করেই ছাড়ে। এই বিষয়ে সে ক্লাস শিক্ষককে অনেকবার নালিশ দিয়েছে। শিক্ষকরা ওর সহপাঠীদের বকাঝকা করেছেন। বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে বলেছেন। কারও নাম ব্যঙ্গ করতে নেই। নাম বিকৃতি বা ব্যঙ্গ করে ডাকা খুবই খারাপ কাজ। কে শোনে কার কথা? যেই না শিক্ষকরা ক্লাসের বাইরে বের হয়েছে আবার শুরু হয়ে গেছে। অ তে অজগরটি আসছে তেড়ে, আ তে আমটি মটু খাবে পেরে। বলতে বলতে কান ঝালাপালা করে দিত। আজগর তা কিছুতেই মেনে নিতে পারত না। যথারীতি রেগেমেগে খুন হতো। এভাবেই চলতে থাকে ওর স্কুলের দিনগুলো। এক দিন ক্লাস শেষে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে গেল আজগর। বাবা-মাকে জানিয়ে দিল ও আর স্কুলে যাবে না। বাবা কারণ জানতে চাইল। এসব বিষয়ে বাবাকে বিস্তারিত খুলে বলল সে। বাবা বুঝতে পারল। আজগরকে সান্ত্বনা দিল। তোমার বন্ধুরা তোমাকে বিভিন্ন খেতাবি নামে ডাকছে। এতে মন খারাপের কিছু নেই। তুমি মন খারাপ করলে অথবা রেগে গেলে ওরা আরও বেশি মজা করবে। বেশি বেশি বলতে থাকবে। মনে রাখবে, রেগে গেল তো হেরে গেলে। তুমি কি জানো? অনেক বিখ্যাত মানুষদের এরকম খেতাবি নাম আছে। এই যেমন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছদ্মনাম ব্যাঙাচি। সৈয়দ মুজতবা আলীর ছদ্মনাম সত্যপীর। আবার কালীপ্রসন্ন সিংহয়ের ছদ্মনাম হুতোম পেঁচা। আরও অনেক নাম আছে। ওরা যখন তোমাকে বিভিন্ন খেতাবি নামে ডাকবে তুমি মন খারাপ করবে না। রাগবে না। বরং ওদের সাথে তুমিও এই নামগুলো নিয়ে মজা করবে। দেখবে ওরা আর বলবে না। বাবার কথাতে সান্ত্বনা পেল আজগর। পরের দিন স্কুলে গেল। সবাই ক্লাসে এসেছে। ওর আসতে একটু দেরি হয়েছে। ক্লাসে এখনো স্যার প্রবেশ করেনি। এই মুহূর্তে আজগর ক্লাসে ঢুকেছে। বন্ধুরা সবাই বলতে থাকে, কে এসেছে? কে এসেছে? সহপাঠীদের উত্তরের আগেই সে বলে ওঠে-অজগর, অজগর। সবাই তাজ্জব হয়ে যায়। সবাই হতবাক! এটা কি সেই আজগর? বাবার কথামত আজগর বন্ধুদের সাথে খেতাবি নামগুলো নিয়ে হাসিখুশি মিশতে থাকে। এভাবে কিছুদিন চলার পর আর কেউ ওকে খেতাবি নামে ডাকে না। আর ডাকলেও সেটা নিয়ে সে ভিশন মজা করতে থাকে।