শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মহররম মাস ও আশুরার ফজিলত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ যাবতীয় প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি সূর্য ও চন্দ্রকে (দিন, মাস ও বর্ষ) গণনার মাধ্যম বানিয়েছেন। তারকা ও গাছপালাকে তার অনুগত বানিয়েছেন। দিন ও যুগ সৃষ্টি করেছেন এবং মাস ও বছর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে তার গণনায় মাসগুলোর সংখ্যা বার। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক তার কোনো শরিক নেই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রসুল। যিনি মহররম মাসের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রসুল এবং তার পরিবারবর্গ ও সাহাবার ওপর রহমত-বরকত নাজিল করুন। নতুন হিজরি সনের শুরুতে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি গোটা উম্মতে মুহাম্মদীকে রহমত ও বরকত দিয়ে ঢেকে দেন।

আপনারা জেনে রাখুন যে, মহরমম আল্লাহর কাছে সম্মানিত একটি মাস, এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক হাদিস বর্ণিত আছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : রসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন তিনি সেখানকার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা পালন করতে দেখলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এদিনে রোজা রাখছ কেন? তারা উত্তর করল এটা এক বিরাট সম্মানিত দিন। এদিনে আল্লাহ হজরত মুসা (আ.) ও তার উম্মতকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফিরাউন ও তার বাহিনীকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেন। তাই হজরত মুসা (আ.) এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এদিন রোজা পালন করেন বিধায় আমরা এ দিনে রোজা রাখি। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হজরত মুসা (আ.)-এর নাজাতে কৃতজ্ঞতা আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা তোমাদের চেয়ে বেশি উপযুক্ত ও অধিক হকদার। অতঃপর রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে ওই আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং মুমিনদেরও রোজা পালনের হুকুম দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের রোজার পর মহররমের রোজার ফজিলতই সবচেয়ে বেশি। তিনি আরও বলেছেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং এ বিষয়ে ইহুদিদের চেয়ে ভিন্ন নিয়ম পালন কর। অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে আশুরার রোজা আগের এক বছরের গুনার কাফফারা হয়ে যাবে। আমরা আল্লাহর কাছে কামনা করি তিনি যেন আমাদের এসব হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দেন।

মুসলিম মিল্লাতের ইতিহাসে মহররম ও আশুরার গুরুত্বের অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো এই যে, রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) রসুলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ রক্ষার জন্য এ মাসেই নিজের জীবন কোরবান করেছিলেন। ইয়াজিদের মনগড়া শাসনব্যবস্থার বিরোধিতা করে তিনি মুসলিম জাতির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত এক জ্বলন্ত উদাহরণ রেখে গেছেন। তার ওই মহান সংগ্রামের ফলে এ কথাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ইয়াজিদের শাসনব্যবস্থা প্রিয় নবীর আদর্শের অনুক‚লে ছিল না। তিনি তার মোকাবিলা না করলে ইয়াজিদের শাসনব্যবস্থার পক্ষে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়িদের ইজমা ছিল বলে প্রমাণিত হতো। পবিত্র আশুরার দিনে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্রের শাহাদাত যুগে যুগে মুসলিম জাতিকে দীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কোরবানির প্রেরণা জোগায়। হে আল্লাহ! হিজরি সনের এ নতুন বছরটি তোমার নবীর উম্মতের জন্য কল্যাণকর বানাও। তারা যেন নতুন প্রেরণা নিয়ে নিজেদের জীবন রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে গড়ে তোলে এবং দীনকে বিজয়ী করার চেষ্টা চালায় আর মানব জাতির কল্যাণ কামনা ও তাদের আল্লাহর পথে ডাকার দায়িত্ব পালন করে। আমিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর