শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ জামদানি

বাংলাদেশের ভৌগোলিক পণ্যের স্বীকৃতি লাভ

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র জামদানি আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গাইজেশনের কাছ থেকে জিওগ্রাফিক্যাল ইনডেকেশন বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে জামদানি শাড়িই শুধু নয়, জামদানির কাজ করা সব বস্ত্র এবং ঘর সাজানো সরঞ্জামের ওপর বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে এই জিআই স্বত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলে সেটিকে সে দেশের ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জামদানিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ বলে ভাবা হয় শত শত বছর ধরে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রাচীন ভারতীয় অর্থশাস্ত্রবিদ কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্র বইয়ে ঢাকাই মুসলিন ও জামদানির কথা উল্লেখ হয়েছে। ইবনে বতুতাও ১৪ শতকে তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে জামদানি তৈরির কথা তুলে ধরেছেন। সেই প্রাচীনকালেই বাংলাদেশের জামদানি বস্ত্রের চাহিদা ছিল বাইরের দেশগুলোতে। ইউরোপসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সে সময়ও জামদানি রপ্তানি হতো। স্মর্তব্য, এ বছরের ৫ আগস্ট জিআই নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর তাদের নিজস্ব জার্নালে বাংলাদেশের জামদানির জন্ম, উৎপাদন, বিস্তার এবং বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ২৬ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। আশঙ্কা ছিল নেপাল ভারত পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আপত্তি আসতে পারে। কিন্তু গত দুই মাসেও আপত্তি না আসায় এ ব্যাপারে বাংলাদেশের একক দাবি স্বীকৃতি পেয়েছে। জামদানি যে বাংলাদেশের পণ্য এর আগে জাতিসংঘের ঐতিহ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কোর কাছ থেকেও ২০১৩ সালে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী জিআই মেধাস্বত্বের আলাদা স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল। তা অর্জিত হওয়ায় পণ্যটি এখন দুনিয়ায় বাড়তি নজর পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জিআই স্বীকৃতির ফলে জামদানি নিয়ে গবেষণায় উৎসাহ সৃষ্টি হবে এমনটিও আশা করা যায়। পাশাপাশি এই বস্ত্র আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠার উপযোগিতাও সৃষ্টি হবে। জামদানি শিল্পীদের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে তা ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সর্বশেষ খবর