শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

হজের সুবাস ছড়ায় বাইতুল্লাহর মুসাফির

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হজের সুবাস ছড়ায় বাইতুল্লাহর মুসাফির

আল্লাহপাকের কাছে হাজার শুকুর হজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করি, আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকের হজ কবুল করেছেন। হাজীরা এখন বিদায়ের দিন গুনছেন। কেউ কেউ বাড়ি ফিরেছেন। রসুল (সা.) এর ঘোষণা অনুযায়ী সুন্দরভাবে হজ সম্পাদনকারী প্রতিটি হাজীই সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ। এ জন্যই রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজ শেষ করে কেউ যদি আমার কবর জেয়ারত করতে আসে, তাহলে সে যেন আমার সঙ্গে জীবিত অবস্থায় দেখা করল।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, ‘হজ শেষ করার পর মানুষ নিষ্পাপ মাসুম হয়ে যায়। তাই সে যখন পবিত্র আত্মা নিয়ে রসুল (সা.) এর রওজার পাশে দাঁড়ায়, তখন রসুল (সা.) এর রুহ তার সঙ্গে দেখা করে। অবস্থা এমন হয় যেন, দুজনে তারা জীবিত অবস্থায় দেখা করল।’

হে কাবাপ্রেমিক আল্লাহর বান্দা! এখন থেকে আপনার নতুন জীবন শুরু হলো। যে জীবনের সঙ্গে দুনিয়ার জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। গত সময়গুলোতে এ দুনিয়াবিমুখ জীবনের চর্চাই আপনি করেছেন। কাফনের কাপড়ের মতো দুই টুকরো সাদা ইহরামে নিজেকে জড়িয়ে আপনি ঘোষণা করেছেন, লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইকে, হে আল্লাহ! রঙিলা দুনিয়ার রঙের জীবন থেকে আমি ফিরে এসেছি। ফিরে এসেছি তোমার কাছে। লাব্বাইক  আল্লাহুম্মা লাব্বাইক!

এ দুনিয়ার পোশাক খুলে কবরের পোশাক পরে আত্মসমর্পণের যে ট্রেনিং আপনি নিয়েছেন, এখন  বাস্তব জীবনে এসে সেই ট্রেনিং অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। আপনি যখন ব্যবসায় নেমে যাবেন, তখন আগের মতো আর ভেজাল ও দুনম্বরী কাজ করতে পারবেন না। চাকরিতে আপনি ঘুষ-অপরাধ-অন্যায়ের সঙ্গে জড়াতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, ব্যক্তি জীবনেও কারও সঙ্গে মন্দ ব্যবহার, জোর-জুলুম করা আপনার জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। অন্যায়ভাবে, অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন তো তারা করে, যারা ভুলে গেছে কবরের কথা। কিন্তু আপনি কেন মিথ্যা বলে, দুনম্বরী করে পয়সা উপার্জন করবেন? যদিও আপনি দুনিয়াতেই বাস করছেন, কিন্তু আপনি তো আরাফার ময়দানে, মুজদালিফার প্রান্তরে ফকিরের বেশে মরার পোশাক পরে জানিয়ে দিয়েছেন, এ দুনিয়ার সঙ্গে, দুনিয়ার মানুষগুলোর সঙ্গে আপনার আগের মতো কোনো সম্পর্ক নেই।

হজ মূলত এ শিক্ষাই মানুষকে দেয়। দুনিয়ায় থেকেই দুনিয়াবিমুখ জীবনযাপন করতে হবে। দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত জীবনযাপন চাট্টিখানি কথা নয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘হুব্বুদদুনিয়া রাসিন কুল্লু খাতিয়াহ। দুনিয়াসক্তিই সব গুনাহ ও দুর্গতির মূল।’ একজন হাজী দুনিয়াসক্ত জীবনযাপন করবে, আবার আল্লাহর প্রিয় হওয়ার দাবি করবে এটা কখনোই হতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের সমাজে এমন হাজীর সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। আমরা বছরে বছরে হজ করি, কিন্তু হজের কোনো প্রভাব আমাদের সমাজে পড়ে না। দুনিয়ার প্রতি প্রেম-মহব্বত থেকেই যায়। এর কারণ কী ভেবে দেখতে হবে।

রসুল (সা.) খুব আফসোসের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন, এমন এক সময় আসবে মানুষ হজ করবে কিন্তু হজের কোনো প্রভাব তাদের জীবনে পড়বে না। আমার প্রিয় ভাই, রসুলের এই আফসোস বাণী যেন আপনার জীবনে সত্য না হয়। আপনার জীবনে যেন সেই বাণীটিই সত্য হয়ে ফুটে উঠে যেমনটি রসুল (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন হজ করে আসে, তখন সে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। কবুল হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।

হে বাইতুল্লাহর মুসাফির! হজের ঘ্রাণ এখনো আপনার শরীরে লেগে আছে। হজের সুবাস এখনো আপনার আত্মায় বিরাজ করছে। আপ্রাণ চেষ্টা করুন, যেন মৃত্যু পর্যন্ত এ ঘ্রাণ-সুবাস ধরে রাখতে পারেন। যদি একটু চেষ্টা করে হজের ঘ্রাণ আত্মায় জারি রাখতে পারেন, তবে বেলা শেষে চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গে রসুল (সা.) এর ঘোষণা অনুযায়ী জান্নাতের মেহমান হয়ে যাবেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে হজের ঘ্রাণ নিয়ে জীবনযাপন করার তৌফিক দিন। মৃত্যুর পর অনন্য সুন্দর জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। 

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসিসর সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর