রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ

সম্রাট হুমায়ুনের জীবদ্দশায় আফগান নেতা আদিল শাহের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপতি হিমু চুনার দুর্গ রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। হুমায়ুনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তিনি দিল্লি ও আগ্রার দিকে ধাবিত হন। এ সময় হিমু ৫০ হাজার অশ্বারোহী ও ৫০০ হস্তীসহ ইবরাহিম শূরকে আক্রমণ ও পরাজিত করে আগ্রা অধিকার করেন। বাহ্যিকভাবে তিনি আদিল শাহের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলেও মুঘলদের বিরুদ্ধে তার রণোš§ত্ততার গোপন উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। আগ্রা অধিকার করার পর তিনি দিল্লি আক্রমণ করেন। দিল্লির শাসনভার তখন তারদি বেগ নামক এক সেনাপতির হাতে ন্যস্ত ছিল। তারদি বীরত্বের সঙ্গে লড়েও শেষ পর্যন্ত হিমুর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারলেন না। বৈরাম খান পরাজয় সহ্য করতে না পেরে তারদি বেগকে মৃত্যুদ- দেন। এদিকে দিল্লি অধিকার করায় হিমুর আকাক্সক্ষা বেড়ে গেল। তিনি নিজেকে স্বাধীন রাজা হিসেবে ঘোষণা করে ‘বিক্রমজিৎ’ বা ‘বিক্রমাদিত্য’ উপাধি গ্রহণ করলেন। তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে সার্বিক বিজয় লাভের জন্য আরও অগ্রসর হতে থাকেন। হিমুর সেনাবাহিনীতে ১ লাখ সেনা ছাড়াও দেড় হাজার রণহস্তী ছিল। কিন্তু বৈরাম খান এতে দমলেন না। তার অনুপ্রেরণায় আকবরের সেনাবাহিনী ঐতিহাসিক পানিপথ প্রান্তরে হিমুর মোকাবিলা করল (১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর)। যুদ্ধে মুঘল বাহিনী যখন পরাজয়ের মুখে তখন দুর্ভাগ্যবশত একটি তীর হিমুর চোখে বিদ্ধ হয়। হিমু সংজ্ঞা হারালে তার সেনাবাহিনী  উৎসাহহীন ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। হিমু ধৃত ও নিহত হলেন এবং তার সেনাবাহিনী পরাজিত হলো। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, আকবর নিজেই তাকে হত্যা করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, হিমু বৈরাম খানের তরবারিতে প্রাণ দিয়েছেন। আকবর মৃতপ্রায় হিমুকে হত্যা করতে অস্বীকার করলে বৈরাম খান নিজের তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করেন। অতঃপর হিমুর মস্তক কাবুলে পাঠানো হয় এবং অনুরূপ বিরুদ্ধবাদীদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ তার খ-িত দেহ দিল্লিতে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ ভারতে মুঘলদের ইতিহাসে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলে ভারতে প্রভুত্ব বিস্তারের জন্য মুঘল-আফগান সংঘর্ষের অবসান হয় এবং হিন্দুদের ক্ষমতা অধিকারের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মুঘলরা অল্পকালের মধ্যে দিল্লি ও আগ্রা অধিকার করে সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলেই মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল এবং মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার শুরু হয়েছিল বলা যেতে পারে। পানিপথের যুদ্ধের পর আকবর সিংহাসনের দাবিদারদের প্রতি নজর দিলেন। সিকানদার শূর পাঞ্জাবের মানকোটের সুরক্ষিত দুর্গে অবস্থান করছিলেন। তাকে এমন দুর্দশার সম্মুখীন হতে হলো যে, আট মাস অবরোধের পর তিনি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। পূর্ব-প্রদেশে আকবর তাকে একটি জায়গির দান করেন এবং ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ১৫৫৭ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গের রাজার সঙ্গে সংঘর্ষে মুহাম্মদ আদিল শাহের মৃতু ঘটে।

বৈরাম খান (Bairam Khan) : শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত বৈরাম খান সে সময়ে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। হুমায়ুনের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদের সময় তিনি তার পাশে ছিলেন ও তার পলায়মান জীবনের সকল প্রকার কষ্টের অংশীদার হয়েছিলেন। একদা হুমায়ুন বৈরাম খানকে বলেছিলেন, ‘আমাদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে আপনার মতো সাহায্যকারী আর কেউ নেই।’

            জাফর খান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর