বুধবার, ১৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

চিকিৎসায় বিদেশনির্ভরতা

আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে

বাংলাদেশ থেকে রেকর্ডসংখ্যক রোগী বিদেশে যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠলেও আস্থার সংকটে অনেকেই চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিদেশমুখী হওয়াকে নিরাপদ মনে করছেন। কারও কারও মতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে চিকিৎসা ব্যয় কম এবং নিরাপদ। যে কারণে মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্তরাও ছুটছেন ভারতে। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে যারা ভারত সফর করেন তার সিংহভাগ যান চিকিৎসার জন্য। ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে দেখিয়েছে, প্রতি বছর ৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এর বেশির ভাগেরই গন্তব্য ভারত। পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায়ও যাচ্ছেন অনেকে। মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ২৫-৩০ হাজার। এরা যাচ্ছেন মূলত ক্যান্সার, চোখ, দাঁত, কিডনি প্রতিস্থাপন, হৃদরোগ ও কসমেটিক সার্জারির জন্য। ভারতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ২ লাখের কাছাকাছি। দেশটির নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরেই চিকিৎসার জন্য ভারতে পাড়ি জমান ১ লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশি। মেডিকেল ট্যুরিজম থেকে ভারতের আয়ের প্রায় অর্ধেক জোগান দিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশি রোগীরা ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যয় করেছেন ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। বলা যায় চিকিৎসা খাতে বিদেশি মুদ্রার যে অপচয় ঘটছে তার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের বিদেশ সফরের প্রধান কারণ দেশের চিকিৎসকদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি আস্থার অভাবও মানুষকে বিদেশমুখী হতে বাধ্য করছে। দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সিংহভাগ রোগীকে সময় দেন না। কোনো কোনো চিকিৎসক গভীর রাতে চোখে ঘুম নিয়েও রোগী দেখেন। সরকারি হাসপাতালগুলোয় দলবাজ চিকিৎসক ও ইউনিয়নবাজ কর্মচারীদের রাজত্ব চিকিৎসার পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সেবা নয়, পকেট কাটাকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। চিকিৎসা খাতে বিদেশ গমন নিরুৎসাহিত করতে হলে এ বৈরী অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর