শনিবার, ১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

রমজানের শিক্ষা ও ঈদপ্রস্তুতি

মুফতি মিজানুর রহমান সিনিয়র পেশ ইমাম

সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামিনের জন্য যিনি তাঁর বান্দাদের রমজানের মতো একটি মহান মাস দান করেছেন। সালাত ও সালাম মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যিনি ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান রেখে ও সওয়াবের আশায় রমজানের  রোজা রাখবে আল্লাহতায়ালা তার পেছনের জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ রমজান আমাদের কাছে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিল, দেখতে দেখতে আমরা রমজানের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছি। সময় হয়েছে হিসাব মেলাবার- আমরা রমজান থেকে কতটুকুন্ড উপকার নিতে সক্ষম হয়েছি। নাকি এখনো গাফিলতে বিভোর হয়ে আছি। মাহে রমজানের সবচেয়ে বড়ু শিক্ষা হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতির শিক্ষা। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩। এ আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে, রোজাদার যদি তার রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনে সফল না হয়, তবে রোজার এ কষ্ট-ক্লেশ ব্যর্থ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা কেবল ক্ষুধার্ত থাকার নামান্তর। আর এমন অনেক রাত জেগে ইবাদতকারী আছে, যার ইবাদত কেবল রাত জাগার নামান্তর।’ মুসনাদে আহমাদ।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সব ধরনের নাফরমানি থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া। আল্লাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদার পরিমাপক হচ্ছে তাকওয়া। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে যে মুত্তাকি তথা তাকওয়াবান।’ সূরা হুজুরাত। রোজাদার একমাত্র আল্লাহভীতি বা তাকওয়ার ভিত্তিতেই রোজা পালন করে। লোক দেখানোর জন্য বা কারও কাছে থেকে বাহ্বা হাসিলের জন্য নয়। রমজানে সে দিনের বেলায় দরজা বন্ধ করে পানাহার করে না। কারণ সে জানে সবার অলক্ষ্যে সে যাই করুক না কেন, আর কেউ না দেখলেও মহান আল্লাহ দেখছেন! তার অন্তরের এ অনুভূতিই তো তাকওয়া। সুতরাং যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে পারলেই রোজা পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা নিজেকে একজন সৎ ও আল্লাহভীরু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে।

রোজা মুসলমানদের আদর্শ চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়। সত্যিকার মুমিন হিসেবে গড়ে ওঠার অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রুহণের মাস রমজানুল মোবারক। মাহে রমজান আমাদের পরিমার্জিত জীবনাচরণ ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে সাহরি গ্রুহণ আবার সময়মতো ইফতার করা, যথাসময়ে তারাবি নামাজ আদায়সহ অন্য অনেক আমল পালনে সময়ানুবর্তী হওয়ার মহান শিক্ষা আমরা রমজানকে কেন্দ্র করে পাই। সাহরি ও ইফতারেও আমরা এক সেকেন্ড বা এক মিনিটও এদিক-সেদিক করি না। এমন সূক্ষ্ম নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে আমরা রমজানের যে সময়টুকুন্ড পার করি, তার কিছুটাও যদি আমরা আমাদের বাকি জীবনে চর্চা করি, তবে আমরা সফল হব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রমজানের পরই ঈদ, কার জন্য এ ঈদ? ছোট্ট একটি ঘটনা বলি। ওমর (রা.)-এর ঘটনা। ঈদের দিন। ঈদের জামাতের সময় বয়ে যায়। কিন্তু যিনি ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন সেই আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর তখনো আসেননি ঈদগাহে। সবাই চিন্তিত, বিচলিত! কোথায় গেলেন খলিফা? অন্বেষণে বের হলেন কয়েকজন। খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে তাকে পাওয়া গেল ক্রন্দনরত অবস্থায় নিজের ঘরের অভ্যন্তরীণ এক কক্ষে। দেখা গেল তিনি আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে অঝর ধারায় চোখের পানি ফেলছেন। মোনাজাত শেষ হলে প্রশ্ন করা হলো, হে আমিরুল মুমিনিন! খলিফাতুল মুসলিমিন! আজ ঈদের দিন, খুশির দিন। অথচ আপনি কাঁদছেন! হজরত ওমর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আজ তো খুশি ওই ব্যক্তির জন্য, যে নিশ্চিত হয়েছে তার বিগত তিরিশটি রোজা, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।

সর্বশেষ খবর