শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুনাফিকের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

মুনাফিকের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

মুখের কথার সঙ্গে অন্তরের ভাবনার যার মিল নেই সে মুনাফিক। হাদিসের ভাষায় এ বদভ্যাসকে বলা হয় ‘নিফাক’ যার অর্থ দ্বিমুখিতা ও কপটাচার। অন্তরে কুফরি রেখে মুখে ইসলাম ঘোষণা করাকে নিফাক বলা হয়। অর্থবিত্ত ও পার্থিব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের জন্য তারা এ ঘৃণ্যপথ অবলম্বন করে। ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। তাদের অন্তর কলুষিত ও ব্যাধিগ্রস্ত। মুনাফিকরা মুখে ইমানের দাবি করলেও মুমিন নয়; তারা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়; তারা বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলে। মুনাফিকদের জন্য ইশার ও ফজরের নামাজ কঠিন বোঝাস্বরূপ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার মধ্যে চারটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে সে নির্ভেজাল মুনাফিক। এক. আমানত রাখলে আত্মসাৎ করে ফেলে দুই. কথা বলার সময় মিথ্যার আশ্রয় নেয় তিন. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং চার. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল মন্তব্য করে; যদিও তারা নামাজ পড়ে, রোজাও রাখে এবং মনে করে তারা মুসলমান। মুনাফিকের পরিচয় দিতে গিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা বানডাকা ছাগলের মতোÑ দুই ছাগপালের মধ্যে অবস্থান করে একবার এ পালের দিকে দৌড়ায় আবার ওই পালের দিকে দৌড়ায়। মিশকাত। মুনাফিকরা যুদ্ধে শরিক হয় না এবং ছলেবলে-কৌশলে জাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকে।

ইসলামের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে শত্রুর চাইতে মুসলিম বেশধারী মুনাফিকরা ইসলামের ক্ষতিসাধন করেছে সবচেয়ে বেশি। মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জমানায় মদিনার পরিবেশ বিষিয়ে তোলে, আউস-খাজরাজ এবং আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিবাদ তৈরি করে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে দুর্বল করার ব্যর্থচেষ্টা চালায়। স্পেনে আমর ইবনে হাফসুন, পশ্চিমবঙ্গে মীরজাফর এবং দাক্ষিণাত্যে মীর সাদিক শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বধর্ম, স্বজাতি ও স্বদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে এবং মুসলমানদের ঐক্যের পরিবেশ নষ্ট করে দেয়, শত্রুর হাত শক্তিশালী করে, বৈদেশিক আগ্রাসী শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে। আল্লাহতায়ালা ওহির মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুনাফিকের পরিচয় ও অবস্থান চিহ্নিত করে দিতেন। ফলে তিনি তাদের চক্রান্ত ও কর্মকান্ড আগেভাগে অবগত হয়ে যেতেন। তিনি সাহাবি হজরত হুজাইফা (রা.)-কে মদিনার মুনাফিকদের একটি তালিকা প্রদান করেন। এ কারণে তাকে ‘সাহিবু সিররে রসুল’ বা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর গোপন তথ্য জানা ব্যক্তি বলা হতো।

মুনাফিকের পরিচয় সময়ের ব্যবধানে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল উহুদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে ৩০০ অনুসারী নিয়ে পালিয়ে যায়।     

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

সর্বশেষ খবর