শনিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বের অন্যতম অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ

মোহাম্মদ হেলাল হোসেন পিএএ

‘বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ ভাগে নেমে এসেছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, ইনশা আল্লাহ আরও এগিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ইনশা আল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’- প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সত্যিই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে এক বিরল বিস্ময়। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বের এক অনুকরণীয় রাষ্ট্রনায়ক। যুগে যুগে বিশ্বনেতারা মানবকল্যাণ ও মানবমুক্তির নিমিত্ত বিভিন্ন অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিংশ শতাব্দীতে বর্ণবাদ নিরসনে দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার সংগ্রাম, ভারতীয় উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলন ও বাংলাদেশের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ মানবকল্যাণের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে থেকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন সমীকরণের মধ্যে থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের সীমিত ভূখন্ডে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আর এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে অর্জন করেন Mother of Humanity হিসেবে অনবদ্য স্বীকৃতি।

বিশ্বে বিরল অনন্যসাধারণ মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ সামনে রেখে সমগ্র বিশ্বে আরেকটি মাইলফলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগের মাধ্যমে সবার জন্য আশ্রয়ের নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগমন সম্ভব হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের মূল প্রতিপাদ্যের (No One Leave Behind) সফল বাস্তবায়নে সমাজের সবচেয়ে অসহায়, দরিদ্র, ভূমিহীন ও ঘরহীন জনগোষ্ঠীকে ঘর প্রদানের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব হবে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে এবং বিশ্বে বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধানমন্ত্রীর এ যুগান্তকারী উদ্যোগের তাৎপর্য অপরিসীম।

Welfare State হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত ইংল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, কানাডার মতো ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোয় জনগণের মৌলিক প্রয়োজন পূরণে সরকারিভাবে সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে সেসব দেশে বিভিন্ন শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে জনগণকে সরকারিভাবে বাসস্থানের সুযোগ প্রদান করা হলেও মালিকানা সরকারের কাছেই থেকে যায়। সেখানে জনগণ নামমাত্র মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে জীবদ্দশায় অবস্থান করে কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর সেসব বাসস্থানের মালিকানা পুনরায় সরকারের কাছে ফিরে যায়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ যথেষ্ট ব্যতিক্রম; এ ক্ষেত্রে ভূমিহীন ও ঘরহীনদের ভূমি ও ঘরের মালিকানা স্থায়ীভাবে প্রদান করা হচ্ছে। দরিদ্র ও ঘরহীন মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে তাদের ঘর প্রদান মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। কেননা ঘরের নিশ্চয়তাবিধান মানুষের উন্নত জীবনযাত্রায় চালিত করে। এর মাধ্যমে তারা কর্মে আগ্রহী হয়, শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করে, সামাজিক মর্যাদা লাভ করে এবং সর্বোপরি উন্নত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সংজ্ঞানুসারে একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নচিত্র প্রতিফলনের সূচক হচ্ছে মানব উন্নয়ন সূচক। শুধু অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং জনগণের জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মাথাপিছু আয়ের বহুমাত্রিক উন্নয়নের সামষ্টিক প্রতিফলন ঘটে মানব উন্নয়ন সূচকের মাধ্যমে। ২০২০ সালে UNDP-এর পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশ HDI সূচকে বিশ্বের ১৩৩তম দেশ, যা গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ ওপরে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের আগে বাংলাদেশ ছিল ১৪১তম অবস্থানে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে HDI সূচকেও ক্রমে উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।

ঘরহীন জনগণকে ঘর প্রদানের মাধ্যমে তাদের কর্মে আগ্রহী করা হয় এবং তারা কর্মের মাধ্যমে নিজেদের ক্রমেই দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। আজকের বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে থাকা চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে যে বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ববহ অর্থাৎ ঘরের অধিকার ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে মানবসম্পদ উন্নয়ন তথা HDI এর উন্নয়ন সম্ভব হবে।

ঘরহীনদের ঘর প্রদানের মাধ্যমে তাদের সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করা হচ্ছে এবং সমাজের অগ্রসরমান জনগোষ্ঠীতে তারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ঘরহীনদের ঘর প্রদানের মাধ্যমে তাদের শোভন কর্মে উদ্বুদ্ধ করা ও এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা সম্ভব হবে। ফলে GNI এর উন্নয়ন তথা HDI-এর অগ্রগমন সম্ভব হবে। স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৭০%, সেখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ২০%-এর নিচে নেমে আসে। কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ২০২০-এ দারিদ্র্যের হার কিছুটা বাড়লেও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর অন্ন ও বস্ত্রের পর মানুষের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হচ্ছে বাসস্থানের অধিকার। বিশ্বের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুজিব শতবর্ষ সামনে রেখে সমস্ত গরহীন মানুষকে আবাসনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে মানবতার এক নজির স্থাপন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’- এ উদ্ভাবনী মানবকল্যাণমূলক প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সমগ্র দেশে মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে ঘরহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কার্যক্রম। দীর্ঘমেয়াদে মানব উন্নয়ন সূচক ও মানবিক উন্নয়নে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করবে। নিঃসন্দেহে সমগ্র বিশ্বে প্রধানমন্ত্রীর এ যুগান্তকারী উদ্যোগ বিরল অনুকরণীয় নজির হয়ে থাকবে।

লেখক : জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, খুলনা।

সর্বশেষ খবর