বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুর নাম হোক শেখ হাসিনা সেতু

মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

পদ্মা সেতুর নাম হোক শেখ হাসিনা সেতু

একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের আর কোনো দেশের সরকার এত দ্রুত তার জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি, যেমনটি পেরেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যার সর্বশেষ উদাহরণ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। বলা হচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম।

যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন আরও বড়। আর এ কারণেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছার খবর জানাতে এসে উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। জানালেন নিজের দূরদর্শী স্বপ্নের কথা। তাঁর ভাষায়, ‘এখন আমার বয়স ৭৫ বছর, ২০৪১-এ হবে ৯৫। তখন আমি নিশ্চয় ক্ষমতায় থাকব না, হয়তো বেঁচেও থাকব না। কিন্তু আগামী ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ যাতে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারে তার জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা ও কর্মসূচি আমি রেখে যাচ্ছি।’ তিনি এও বলেন, ‘এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন ডলার জিডিপি ছিল, ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে দারিদ্র্যের হার ৪৮.৯ শতাংশ এবং হতদারিদ্র্যের হার ৩৪.৩ শতাংশ ছিল। ২০১৯ সালে সে হার কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২০.৫ ভাগ এবং ১০.৫ শতাংশে। আরও পেছন ফিরলে দেখা যায়, ১৯৭৫-এ মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৮ ডলার; বর্তমানে তা ২ হাজার ৬৪ ডলারে পৌঁছেছে। এ উন্নতির ৭৩ শতাংশই হয়েছে গত ১০ বছরে। যেখানে গত ১০ বছরে প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৭ শতাংশ ছিল সেখানে তার আগের দুই দশকের গড় ছিল মাত্র ৫ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ সরকারের এ উন্নয়ন শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বমহলেও আজ প্রশংসিত। বাংলাদেশ যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, খোদ সে দেশটিরই এক উন্নয়নবিষয়ক আলোচক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উদ্দেশে বলেছেন, ‘অন্য কোনো দেশের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই, পাকিস্তানের উচিত প্রথমে বাংলাদেশ হওয়ার চেষ্টা করা। তা হতে কমপক্ষে ১০ বছর লাগবে।’ ঈর্ষান্বিত ভারতও। সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে ‘শাহের উইপোকা বাংলাদেশ অর্থনীতিতে টপকাচ্ছে ভারতকে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’। প্রতিবেদনে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। যদিও ‘উইপোকা’ শব্দের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে দৈনিকটি। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, অন্য অনেক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এখন ভারতের রোল মডেল।

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত কাজ শুরুর প্রাক্কালেই হয়েছিল। মূল সেতু প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আজগুবি দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংককে অনুসরণ করে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাইকা। কিন্তু কেন? কোনো সংস্থা তো তখনো অর্থের ছাড় দেয়নি। বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী এবং অর্থনৈতিক উপদেষ্টাসহ প্রকল্পের সবাইকে সরিয়ে মামলার আওতায় আনার জোরালো হুঙ্কার ছিল। দুদকের তৎকালীন কমিশনার থাকার সুবাদে এসব ষড়যন্ত্র এবং তার জবাবে শেখ হাসিনার অদম্য স্পৃহায় পথচলার সাক্ষী ও সারথি ছিলাম আমি। সত্য উদঘাটনেও আমি পুরোটা সময় সংশ্লিষ্ট ছিলাম। মিথ্যা, ভিত্তিহীন, সৃজিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে এতটুকু বিচলিত হতে দেখিনি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে।

বিশ্বব্যাংকের অন্যায় আবদার ও ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ বারবার উপেক্ষা করায় প্রথম শ্রেণির একটি জাতীয় দৈনিক আমাকে নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ব্যঙ্গচিত্রও প্রকাশ করেছিল। উল্লেখ্য, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের তদন্তে অসার, মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নিছক গালগল্প মর্মে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। জাতীয় দৈনিকটির উচিত ছিল দুদকের প্রতিবেদন নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা। বিশ্বব্যাংকের সব কল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও এ নিয়ে (ব্যঙ্গচিত্র) তারা দুঃখপ্রকাশ পর্যন্ত করেনি। প্রকৃত অর্থে পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শেখ হাসিনা সরকার ও বাংলাদেশকে হেয় করা। যা-ই হোক, পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বব্যাংকের আজগুবি গল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশসহ মর্মাহত হলেও মনোবল হারাননি। অদম্য সাহস ও দৃঢ়তায় ঘোষণা দিলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করার। সে সময় বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘নিজেদের টাকায়ই আমরা পদ্মা সেতু গড়ব।’ স্বল্পোন্নত একটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক হয়েও বিদেশি কোনো সাহায্য ছাড়া ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণের যে পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন, সত্যিই তা দুঃসাহসিক পদক্ষেপ ছিল। স্বপ্নও বলা যায়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তা করে দেখালেন। পদ্মা সেতু শুধু নিছক সেতু নয়, আমাদের গর্ব, উন্নয়ন ও অহংকারের নিদর্শন। আত্মসম্মান, আত্মপরিচয়, সক্ষমতা সর্বাপরি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়প্রত্যয়ের ফসল। গৌরব ও অহমের এ সেতুর নামকরণ নিয়ে সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনা সেতু’ কেন নয় মর্মে হাই কোর্টে রিট হয়েছে। বারবার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে সংসদে, সংসদের বাইরে। তবে প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রী বিনয়ের সঙ্গে হাত ও মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক উত্তর দিয়েছেন। এটা শেখ হাসিনার উদারতা-মহানুভবতা। কিন্তু জাতি কি এটা মানতে পারে? কারণ ভালো কাজ কিংবা উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করার ইতিহাসও বিশ্বে অহরহ আছে। তা ছাড়া এই যে বিশ্বের কাছে দুর্নীতির কালিমা থেকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে শেখ হাসিনা দৃঢ়তা, দূরদর্শী নেতৃত্ব, অসীম সাহসিকতা ও সততার রক্ষাকবচ দিয়ে রক্ষা করলেন এবং সব ষড়যন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করলেন; একসঙ্গে এতগুলো প্রকল্প হাতে নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন, এসব কারণে হলেও পদ্মা সেতুর নামকরণ শেখ হাসিনার নামে করা যৌক্তিক বলে আমি মনে করছি।

           

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা

সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ খবর