শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

আজান ও ইকামতের সওয়াব অপরিসীম

আবদুর রশিদ

মুয়াজ্জিনরা আজান দেন। মানুষকে সালাত বা নামাজের উদ্দেশে ডাকেন। তারা নিজেদের পক্ষ থেকে নয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আহ্‌বান জানান। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি শয়তান সালাতের আজানের শব্দ শুনে পলায়ন করতে করতে রাওহা পর্যন্ত ভেগে যায়। আমাশ বলেন, আমি আবু সুফিয়ানকে রাওহা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এ স্থানটি মদিনা থেকে ৩২ মাইল দূরে অবস্থিত।’ মুসলিম।

হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে কোনো মানুষ, জিন অথবা যে কোনো বস্তুই যত দূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনবে সে কিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দেবে।’ বুখারি।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন সালাতের আজান দেওয়া হয় তখন শয়তান পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে। আজান শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে। আবার যখন ইকামত দেওয়া হয় তখন সে পলায়ন করে। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে এবং মুসল্লির মনে সংশয় সৃষ্টি করতে থাকে। সে তাকে বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর। অথচ এ কথাগুলো সালাতের আগে তার স্মরণও ছিল না। শেষ পর্যন্ত মুসল্লি এমন এক বিভ্রাটে পড়ে যে সে বলতেও পারে না কত রাকাত সালাত আদায় করেছে।’

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ১২ বছর আজান দেয় তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার জন্য তার প্রতি আজানের বিনিময়ে লেখা হয় ৬০ নেকি এবং প্রতি ইকামতের বিনিময়ে লেখা হয় ৩০ নেকি।’ ইবনে মাজাহ।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর যত দূর পর্যন্ত যায় তাকে তত দূর ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তাজা ও শুকনো প্রতিটি জিনিসই তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে। আর কেউ জামাতে হাজির হলে তার জন্য ২৫ ওয়াক্ত সালাতের সওয়াব লেখা হয় এবং এক সালাত থেকে আরেক সালাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ আবু দাউদ।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল! মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের ওপর মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুয়াজ্জিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। এরপর আজান শেষ হলে (আল্লাহর কাছে) দোয়া করবে। তখন তোমাকেও তাই দেওয়া হবে। তোমার দোয়া কবুল হবে।’ আবু দাউদ।

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘(মসজিদে নববিতে) এমন একটি (খেজুর গাছের) খুঁটি ছিল যার সঙ্গে হেলান দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়াতেন। (অর্থাৎ দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন), এরপর যখন তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করা হলো তখন আমরা খুঁটি থেকে ১০ মাসের গর্ভবতী উটের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বর থেকে নেমে এসে খুঁটির ওপর হাত রাখলেন, তখন খুঁটিটি কান্না বন্ধ করল।’ বুখারি। হজরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি পেল তখন হজরত ওসমান (রা.) জুমার সানি আজানের নির্দেশ দেন। এর আগে জুমার দিন ইমাম যখন মিম্বরে বসতেন শুধু তখন আজান দেওয়া হতো।’ বুখারি।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর