ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্যের বিরুদ্ধে মুসলিম ফকির (সুফি) ও হিন্দু যোগী-সন্ন্যাসীদের সম্মিলিত সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন। ১৭৬০ সালে এ আন্দোলন শুরু হয় এবং চার দশকের অধিক তা অব্যাহত থাকে। ফকির ও সন্ন্যাসীদের এ অব্যাহত প্রতিরোধের কারণ প্রকৃতই দুর্বোধ্য। সম্ভবত কোম্পানি প্রবর্তিত রেগুলেশন দ্বারা মুসলিম ফকির ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের জীবনযাত্রা বিভিন্নভাবে ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত হয় এবং এরই ফলে তারা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফকির ও সন্ন্যাসীরা প্রধানত গ্রামাঞ্চলে তাদের অনুসারী ও সহমর্মী জনগণের কাছ থেকে দান নিয়ে তার ওপর ভিত্তি করেই জীবনধারণ করতেন। কোম্পানি শাসকরা দেশের ধর্মীয় রীতিনীতি ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে মোটেও অবগত ছিল না; আর সে কারণেই ফকির-সন্ন্যাসীদের দান গ্রহণকে তারা জনসাধারণের কাছ থেকে অননুমোদিত অর্থ আদায় বলে মনে করত। কাজেই কোম্পানি ফকির -সন্ন্যাসীদের সংগঠিত দল কর্তৃক দান গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে ফকির-সন্ন্যাসীরা ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করে। এ প্রতিরোধ আন্দোলন দেশের কৃষক শ্রেণির স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন লাভ করে। কারণ তারাও কোম্পানি কর্তৃক প্রবর্তিত নতুন ভূমি রাজস্ব নীতির অধীনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
আন্দোলনকারী ফকিররা ছিল মাদারিয়া সুফি তরিকার অনুসারী। এ তরিকা সতেরো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শাহ সুলতান সুরিয়া বুরহানার নেতৃত্বে বাংলায় প্রসার লাভ করে। সন্ন্যাসীরা ছিল বেদান্তীয় হিন্দু যোগী ও একদন্ডী সন্ন্যাসবাদের গিরি ও পুরী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ফকির ও সন্ন্যাসীরা যথাক্রমে খানকাহ ও আখড়ায় বাস করত। সুফি ফকির ও যোগী সন্ন্যাসীদের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও ধর্মাচরণে যথেষ্ট সাদৃশ্য ছিল। এ সাদৃশ্য ও একাত্মতা কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে সহায়ক হয়েছিল।