বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
‘রবির কিরণে সিক্ত শৈলজারঞ্জন মজুমদার’

ধন্যবাদ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে

আমিনুল ইসলাম বেদু

ধন্যবাদ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে

রবির কিরণে সিক্ত শৈলজারঞ্জন মজুমদার শীর্ষক বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সুলিখিত রচনাটির জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে অপারগ বিধায় দেশের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনের শরণাপন্ন হচ্ছি। শৈলজারঞ্জনের মতো একজন মহান ব্যক্তি যিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রতি অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধায় সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বিজ্ঞানের চৌকস ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও কবিগুরুর ডাকে সাড়া দিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক পদে যোগ দেন। তারপর কবিগুরুর নির্দেশে রবীন্দ্রসংগীতের সুর সৃষ্টিতে আত্মনিয়োগ করেন। রবীন্দ্রসংগীত হয়ে গেল তাঁর ধ্যানজ্ঞান-সাধনার ধন। তিনি হলেন রবীন্দ্রসংগীতের সুরস্রষ্টা এবং শিক্ষক। রবীন্দ্রনাথও তাঁকে সস্নেহে কাছে টেনে নিলেন এবং স্বীকৃতি দিলেন। এসব কথা বিচারপতি হাসান বিশদভাবে তাঁর সুললিত ভাষায় সশ্রদ্ধভাবে বর্ণনা করেছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২৫ জুলাই, ২০২১ সংখ্যায় এ-সংক্রান্ত লেখায় শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে বুদ্ধিদীপ্তভাবে সসম্মানে প্রদীপের পাদপীঠে আনার জন্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানানোর জন্য কিছু কথা বলার প্রাণের তাগিদ অনুভব করছি।

শৈলজারঞ্জন মজুমদার আমার পরম শ্রদ্ধেয় রবীন্দ্র-অন্তঃপ্রাণ একজন যাঁর কারণে আজকে রবীন্দ্রসংগীত সবার এত প্রিয়।

শৈলজারঞ্জন আর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ। এ কারণে যে তিনি শৈলজারঞ্জন-প্রাজ্ঞ শুধু নন, তিনি জানেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার একজন বিরল গুণের মানুষ। যাঁর খ্যাতি সব মহলে। শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে যাঁকে স্মরণ করেন রবীন্দ্রভক্তরা।

তিনি আমাদের একটি আনন্দের সংবাদ দিয়েছেন। হয়তো তাঁর প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেদখল হয়ে যাওয়া বাড়ি ও সম্পত্তি উদ্ধার করে সেখানে ‘শৈলজারঞ্জন মজুমদার সংস্কৃতি কেন্দ্র্র’ স্থাপন করার জন্য ৪০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ। শৈলজারঞ্জন মজুমদার সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। আমরা যারা রবীন্দ্রপ্রেমী আমাদের কাছে আনন্দের, এর চেয়ে গৌরবের আর কী হতে পারে।

আমি শৈলজারঞ্জন মজুমদারের একজন ভক্ত ও অনুরাগী। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সঠিক বলেছেন, ১৯৭৫ সালে শৈলজারঞ্জন মজুমদার ঢাকায় এসেছিলেন আমার নিমন্ত্রণে। ঢাকায় আমি আতিক সংগীত একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে দিয়ে এটা উদ্বোধন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৮ জুন সাত দিনের জন্য ঢাকায় আমার অতিথি হিসেবে আসেন। ১৮ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত পাঁচ দিন তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। আমার বাড়িতে নয়, ধানমন্ডি প্রিন্সিপ্যাল ইবরাহিম খাঁর দক্ষিণ হাওয়া নামক বাড়িতে। ২০ জুন, ১৯৭৫-এ নিজ স্বাক্ষরে শৈলজারঞ্জন মজুমদার তাঁর লিখিত রবীন্দ্রসংগীত প্রসঙ্গ এবং শ্রীপ্রফুল্ল কুমার দাসের বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত গ্রন্থমালা প্রথম খন্ড, দ্বিতীয় খন্ড ও তৃতীয় খন্ড মোট চারটি বই আমাকে উপহার দেন। বই চারটি এখন পর্যন্ত যক্ষের ধনের মতো হৃদয়ের পরম পাওয়া হিসেবে রক্ষা করতে পেরেছি। হয়তো এখন এগুলো আমার আর কোনো প্রয়োজন হবে না। আমি বই চারটি আমার এই অসুস্থ অন্তিম সময়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হাতে সমর্পণ করব যা তিনি সযতনে শৈলজারঞ্জন মজুমদার সংস্কৃতি কেন্দ্রে আমার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রক্ষা করবেন, এটা তাঁর কাছে আমার চাওয়া। তিনি যে বলেছেন ১৯৭৫ সালে শৈলজারঞ্জন মজুমদার আমার আমন্ত্রণে ঢাকায় এলে তাঁর ইচ্ছায় তাঁরই পূর্বপরিচিত একটি বাসায় তিনি গিয়েছিলেন। তাঁদের কেউ এসে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ২২-২৩-২৪ জুন, ১৯৭৫ পর্যন্ত তিন দিন তিনি সেই বাড়িতে ছিলেন। ২৫ জুন সকালে তিনি চলে আসেন এবং আমরা একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জানাই। বিকালে তিনি চলে যান বিমানে।

তখন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বয়স হয়তো ১৭ হবে। তার পরও তিনি যে এত সুন্দরভাবে সব কথা মনে রেখেছেন তা শৈলজারঞ্জন মজুমদারের প্রতি তাঁর ভক্তি ও শ্রদ্ধা থেকে উৎসারিত।

তবে তিনি যে বলেছেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু তাঁকে বাংলাদেশে থেকে যেতে বলেছিলেন তা আমি তাঁর কাছ থেকেই শুনলাম। আমরা এ রকম কোনো ব্যবস্থা করিনি। হয়তো তাঁদের বাড়িতে যে তিন দিন ছিলেন তাঁদের বাড়ির কেউ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বিচারপতি হাসান শৈলজারঞ্জন মজুদারের প্রতি যে শ্রদ্ধানিবেদিত রচনাটি লিখেছেন তা আমাকে অভিভূত করেছে। আমি তাঁকে আবারও আমার অন্তর থেকে অভিবাদন জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, আমি তিন মাস যাবৎ ‘শৈলজারঞ্জন মজুমদার : আমার স্মৃতিপটে’ নামের একটি পুস্তিকা লেখার চেষ্টা করছি। আমি জানি না অসুস্থ শরীরে তা সমাপ্ত করতে পারব কি না। তাঁর রচনা আমার এ বই লেখায় সহায়ক হবে। আমি মনে করি তাঁর প্রচেষ্টায় এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বদান্যতায় কিশোরগঞ্জে শৈলজারঞ্জন মজুমদার সংস্কৃতি কেন্দ্র নামক যে স্থাপনা সৃষ্টি হলো তা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শৈলজারঞ্জনের প্রতি যথার্থ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের তাজমহল; যা কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে এবং আমরা বলব- শৈলজারঞ্জন, আমরা তোমাকে ভুলি নাই, ভুলি নাই। তুমি রবীন্দ্রসংগীতের যে সুধারস দিয়ে গেছ তা কবির ভাষায়- ‘এ সংগীতরসধারা নহে মিটাবার/দীন মর্তবাসী এই নরনারীদের/প্রতিরজনীর আর প্রতিদিবসের/তপ্ত প্রেমতৃষা?’

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা : আতিক সংগীত একাডেমি ও অধুনালুপ্ত রবীন্দ্র একাডেমি, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর