শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নষ্টদের নিয়ে নানাজনের নস্টালজিয়া

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

নষ্টদের নিয়ে নানাজনের নস্টালজিয়া

আগস্টজুড়ে মনটা নিজের অজান্তেই ভারী হয়ে ওঠে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরে সপরিবারে হত্যা, ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে একযোগে দেশের ৬৪ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ; এসবই ঘটেছে বছরগুলোর আগস্ট মাসে। তবে সব ছাপিয়ে যে শোক হৃদয়ে রক্ত ঝরায় তা হলো ১৫ আগস্ট পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর বেদনা। ইতিহাস কিংবা রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক একবারে স্বীকার করবেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মূলত এক পরশমণি। এই পরশমণি জাতিকে ঘুম থেকে জাগিয়েছে, গামছা-লুঙ্গি পরা আমজনতাকে সশস্ত্র যোদ্ধা বানিয়েছে, নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য নেতা বানিয়েছে সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। তাই স্বাধীন-সার্বভৌম, স্বয়ংসম্পূর্ণ উন্নত বাংলাদেশ যাদের চক্ষুশূল তারাই ষড়যন্ত্র করে কেড়ে নিল সেই পরশমণিরূপী জাতির পিতার জীবন। পরশমণিকে সরিয়ে দীর্ঘদিন দেশ ও জাতির মধ্যমণির ভূমিকায় আবর্তিত হলো বিতর্কিত ব্যক্তি, বাহিনী, সংগঠন, অপশক্তি জোট, পরাশক্তি প্রভৃতি। এ জঞ্জাল দূরে সরিয়ে দেশ যখন এক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দ্রুত ধাবমান, তখনই দৃশ্যপটে এলো ‘পরীমণি’ নামক এক নষ্টচক্র। পরশমণি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যারা মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছিল, তাদেরই পেতাত্মা যেন ক্রমেই গ্রাস করছে দেশের ক্রীড়াভিত্তিক সংগঠন, যেখানে ক্যাসিনো ঢুকে গেল। চিকিৎসাজগতে শুরু হলো মিঠু, মালেক, সাহেদ, সাবরিনাদের যুগ। শিক্ষাদীক্ষা ঢুকে গেল অনলাইনের গোলকধাঁধায়, আর শিল্প, সাহিত্য, নাটক, মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে আবিভর্‚ত হলো পরীমণিরা। প্রিয় পাঠক ক্ষমা করবেন। এই বয়সে, এই শোকার্ত আগস্টে, এই প্ল্যাটফরমে একজন পরীমণি, পাপিয়া, মৌ, পিয়াসাকে নিয়ে লেখা আমাকে মানায় না। তবু প্রসঙ্গটা তুলতেই হলো শুধু এটুকু বোঝানোর জন্য যে একটি দেশ, জাতি বা সমাজ হঠাৎই নষ্ট হয় না। নষ্ট হয় সময় নিয়ে; ধীরে ধীরে। তবে মাছ বা ফলের পচন ঠেকাতে পয়সা খরচ করে ক্ষতিকারক ফরমালিন কেনা হলেও সমাজের পচন ঠেকাতে কার আগ্রহ কতটুকু? এ প্রশ্ন সামনে এনে দিয়েছে বেশ কিছু হুঁশিয়ারি বার্তা বা সাবধানবাণী, যার প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারিনি। তেমনি কিছু অবহেলিত শব্দমালা কিংবা কাঙালের কথাই আজ সংকলন করতে চাই ওইসব লেখক ও প্রকাশকের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে।

২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে একটি গবেষণা করাকালে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে মৃত্যুবরণ করেন বাংলা ভাষার প্রথাবিরোধী কবি ও লেখক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ। একই বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফুটপাথে সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত হন তিনি। বিতর্কিত এই কবি, শিক্ষক এবং লেখককে আজ মনে পড়ল ঠিক ৩৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে তাঁর লেখা ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ শিরোনামে কবিতার জন্য। সব বয়সী পাঠকের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান জানিয়ে তাঁর কল্পনার পরীমণি, পাপিয়া, মৌ, পিয়াসাদের উদ্দেশে লেখা। মূল অংশটি বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করছি-

‘আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে...

কড় কড়ে রৌদ্র আর গোল গাল পূর্ণিমার চাঁদ

নদীরে পাগল করা ভাটিয়ালি, খড়ের গম্বুজ

শ্রাবণের সব বৃষ্টি, নষ্টদের অধিকারে যাবে...

চলে যাবে সেই সব উপকথা : সৌন্দর্য-প্রতিভা-মেধা :

চলে যাবে, কিশোরীরা চলে যাবে,

আমাদের তীব্র প্রেমিকারা

ওষ্ঠ আর আলিঙ্গন ঘৃণা করে চলে যাবে,

নষ্টদের উপপত্নী হবে...

আর বাঙলার বনের মত আমার শ্যামল কন্যার

রাহুগ্রস্ত সভ্যতার অবশিষ্ট সামান্য আলোক-

আমি জানি তারা সব নষ্টদের অধিকারে যাবে।’

প্রথম  আলোর অনলাইন ভার্সনে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির পৃষ্ঠায় আলিয়া রিফাতের লেখা একটি প্যারোডি কবিতা আছে, যা হুমায়ুন আজাদের এ কবিতার আলোকেই লেখা, তবে প্রেক্ষাপট ‘শিল্পী’ বা ‘মডেল’ নামের নষ্টরা নয়, ছাত্রছাত্রী নামের ‘অছাত্র’ নষ্টরা। প্যারোডির একটি অংশে রয়েছে-

‘হল আর সিটগুলো চলে গেছে, ক্লাসও যাবে,

ছাত্রের সমস্ত স্বপ্ন আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে একদিন

পুরো ভার্সিটিই অছাত্রদের অধিকারে যাবে।

সবচেয়ে মেধাবী ছেলে বারান্দায় শুয়ে সারা রাত

মারবে এডিস মশা; সব বড়ভাইদের দখলে

ধরা থাকবে প্রতিটি একক রুম। চলে যাবে,

ছাত্ররা চলে যাবে, আমাদের মেধাবী ছেলেরা

বই আর খাতাগুলো ঘৃণা করে চলে যাবে,

নেতাদের সাগরেদ হবে। এইসব চেয়ার টেবিল, কম্পিউটার,

শহীদ মিনারের ফুল, রাজনীতি, খেলার মাঠ,

ক্রিকেট, ফুটবল, আমার সমস্ত বন্ধু-বান্ধবী, দোস্ত,

আর গ্রাম থেকে আসা বাবার হাবা গোবা ছেলে-

দখল করা হলের অবশিষ্ট সামান্য জায়গা-

আমি জানি তারা সব অছাত্রদের অধিকারে যাবে।’

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে দুর্দশার শুরু হয় ভর্তি পর্ব দিয়ে। একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক দিনে একেক স্থানে ভর্তি পরীক্ষার নামে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি আর কোচিং বাণিজ্যের অবসান ঘটাতে এগিয়ে এসেছিলেন শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হকসহ একদল শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক। এগিয়েও ছিলেন বেশ কিছুটা। কিন্তু নষ্টদের পাল্লায় ভেস্তে যায় সবকিছু। প্রতিবাদ জানিয়ে ২৭ নভেম্বর ২০১৩ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন প্রথিতযশা এই শিক্ষাবিদ দম্পতি। ঘটনার আকস্মিকতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে একই দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ শিরোনামে কলাম লেখেন কলামিস্ট চিত্ররঞ্জন সরকার। এ কলামের একটি অংশে ছিল- ‘আমাদের সবকিছুই কি নষ্টদের দখলে যাবে?... দিন যতই যাচ্ছে আমাদের সমাজের কিছু লোক যেন তত জংলি হচ্ছে। যে দেশ গুণীর সম্মান দিতে জানে না, সে দেশে গুণী জন্মায় না। আমরা ভবিষ্যতে এমন একটা দেশে বাস করব যে দেশে আমাদের কোনো আইডল থাকবে না, এমন একটা দেশই কি আমরা চেয়েছিলাম?’

একই পোর্টালে (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারিতে প্রবীণ সাংবাদিক আবেদ খানের লেখা প্রকাশিত হয় মতামত বিভাগে, যার শিরোনাম ছিল ‘সবই কি চলে যাবে নষ্টদের অধিকারে’। এ লেখার প্রেক্ষাপট ছিল ঊনসত্তরের ১২ আগস্ট জন্ম নেওয়া প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু। ওই বছর (২০১৫) জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুবরণ করেন। শোকার্ত মা বেগম খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে যান তাঁর গুলশানের বাসায়। সমগ্র দেশবাসী টেলিভিশনের কল্যাণে সরাসরি প্রত্যক্ষ করল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না সেই বাসায়। বলা হলো ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। শোকার্ত খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি সত্ত্বেও এ ঘুম পাড়ানোর তথ্য ঘুম পাড়ানি গানের সঙ্গেই তুলনা করেছিলেন বিশ্লেষকরা আর আবেদ খান লিখেছিলেন-

‘তা হলে দাঁড়াচ্ছে এই যে, সততা পরাজিত শঠতার কাছে, সত্য পরাজিত মিথ্যার কাছে, শালীনতা পরাজিত অশালীনতার কাছে, বিবেক পরাজিত বিবেকহীনতার কাছে, নীতিবোধ পরাজিত অনৈতিকতার কাছে। বুঝি না, এভাবেই কি সব নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে? কোথাও কি কোনো সাহসী শিশু চিৎকার করে বলবে না- অ্যাই রাজা, তোর কাপড় কোথায়?’

প্রশ্নবোধক চিহ্ন যুক্ত করে ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে?’ শীর্ষক নিবন্ধ লেখেন বিশিষ্ট ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ, ১৩ জুলাই ২০২০-এ ‘বাংলা ট্রিবিউন’-এর কলাম বিভাগে। তাঁর লেখার শেষটা ছিল এ রকম- ‘অনেকের মতে, ছোট্ট একটি ভূখন্ডে আমাদের মিলেমিশে থাকতে হবে যেমনটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কিছুসংখ্যক লোক ছাড়া সবাই আমরা একসঙ্গে ছিলাম। তার মানে কি আমাদের শত্রু নেই, সবাই আমাদের বন্ধু। প্রায় বারো বছর একটি সরকার আছে, তারা অনেক জায়গায় বেশ ভালো করেছে। তবে বারো বছরেও আমরা সামাজিকভাবে অনেক পিছিয়েছি। পাপুল, পাপিয়া, সম্রাট, সাহেদ আর সাবরিনাদের নির্মাণশিল্প দেখি আরও বড় হচ্ছে। অনেক অনেক বড়, অনেকটা আনম্যানেজেবল মনস্টারের মতো, তার যেন শুরু আছে শেষ নেই।’

দেশের অন্যতম প্রাচীন পত্রিকা ইত্তেফাক। লেখক, বিশ্লেষক ও গবেষক আবদুল মান্নান ইত্তেফাকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০-এ প্রশ্ন তোলেন, ‘সবকিছু কি নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে?’ লেখার এক পর্যায়ে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম মেয়র নির্বাচনে মঞ্জুরুল আলমের কাছে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরাজয় প্রসঙ্গে লেখেন, ‘ভোট শেষে যখন গণনা চলছিল তখন মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্বাচনী ক্যাম্পে নেতা-কর্মীর ভিড় সামলানো কঠিন ছিল। রাত ১২টায় আমিসহ আরও দু-এক জন কর্মী অবশিষ্ট ছিলাম। বাকিরা নীরবে সটকে পড়েছিল।’ লেখার শেষাংশটি ছিল এ রকম, ‘প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি দুটি বিষয়ে পৃথকভাবে দুটি বক্তব্য দিয়েছেন। প্রথমটি ছিল আওয়ামী লীগে যদি এত নেতা-কর্মীই থাকে, তাহলে ১৫ আগস্ট আমার বাবার লাশ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ৩০ ঘণ্টা কেন পড়ে ছিল?’ আর দ্বিতীয়টি করেছেন সম্প্রতি মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে দলীয় অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মা যাদের রান্না করে খাওয়াতেন তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে!’ বক্তব্য দুটি খুবই প্রণিধানযোগ্য। শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, ‘আমাকে ছাড়া সবাইকে কেনা যায়।’ ঘটনাপরম্পরায় মনে হচ্ছে তাঁর এ বক্তব্য শতভাগ সত্য। বঙ্গবন্ধু ঘরের শত্রু চিনতে পারেননি...।

চট্টগ্রামেরই দৈনিক আজাদী পত্রিকার সাংবাদিক রতন বড়ুয়া ২৩ আগস্ট ২০১৪ সালে অনলাইন পোর্টাল প্রেস বার্তায় ‘সবকিছুই নষ্টদের দখলে’ শিরোনামে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও রাজনীতি বিষয়ে লিখেছেন, ‘...চট্টগ্রাম বারবার মন্ত্রী পেয়েছে, মন্ত্রীদের অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। তবে চট্টগ্রামবাসীর অবস্থার আর পরিবর্তন হয়নি। অথচ এই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীগণ যে সুযোগ পেয়েছিলেন তা কাজে লাগালে বা আন্তরিকতা থাকলে চট্টগ্রাম আজ সত্যিই প্রাচ্যের রানী হতে পারত।... তবে আর যা-ই হোক, একটি ক্ষেত্রে রাজনীতিকরা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তা হলো সব ক্ষেত্রে অপরাজনীতি মিশিয়ে নিজেরা তো আছেনই, পাশাপাশি গুটিকয়েক মানুষকে লুটেপুটে খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন।...’

মো. মাহমুদুর রহমান মূলত একজন ব্যাংকার। তিনি বিবেকের তাড়নায় মাঝেমধ্যেই কলম ধরেন। ২৮ জুন ২০১৪ সালে দৈনিক যুগান্তরে তারও প্রশ্ন ছিল, ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে,’ এ লেখার মধ্যে রয়েছে ‘আমাদের নেতা-নেত্রীরা নষ্ট হওয়ায় জনগণ নষ্ট হয়েছে, না নষ্ট জনগণের কারণে নেতানেত্রীরা নষ্ট হয়েছেন, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।... তবে দেশটি আপাদমস্তক অসত্য, অসুন্দর ও অশুভ নোংরা জলে নিমজ্জিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সত্য, সুন্দর ও শুভ্রতা টিকে থাকতে পারছে না অসত্যের জোয়ারে।... এসবই হচ্ছে যেনতেনভাবে অর্থ উপার্জনের নেশার কারণে। এ মরণনেশা পুরো জাতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। যে যেভাবে পারছে অবৈধ টাকা উপার্জনের দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে। চুরি-ডাকাতির মতো আগের অ্যানালগ পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ব্যাংক ডাকাতির পরিবর্তে ঋণের নামে ব্যাংক লুট করা হচ্ছে। ... চুরির পরিবর্তে টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর সরকারি চাকরিজীবীরা এখন ঘুষ নেন না। তারা কমিশন বা স্পিড মানি গ্রহণ করে থাকেন। মেধা নয়, টাকাই সর্বত্র রাজত্ব করায় মেধাবীরাও টাকার পেছনে ছুটছে।... অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হতে কেউ প্রস্তুত নয়।’... এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার মন্ত্র শুনিয়েছেন আরেক কবি রফিক আজাদ। তার ভাষায়-

প্রিয় মিথ্যা বলা শিক্ষা নাও

বিক্রি করে দাও তোমার বিবেক

উচ্চারণ করো না এমন শব্দ,

যা শুনে আহত হবে না তারা

নত হও, নত হতে শেখ;

তোমার পেছনে রয়েছে যে

বর্বর মন ও মস্তিষ্ক,

তাকে অনুগত দাসে পরিণত হতে বল।

প্রিয় কবি আমরা তো নত হয়েই অনুগত দাসের মতো বেঁচে আছি, শুধুই একটি ছোট্ট প্রশ্ন, আর কতকাল আমরা দাসত্বের বোঝা বহন করব।

নূরলদীনকে আমি দেখিনি তবে ছোটবেলায় একবার বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। চলছে আগস্ট মাস। শোকার্ত হৃদয়ে তাই দীর্ঘদেহী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মনে পড়ে। দেশের কবি, সাহিত্যিক, ব্যাংকার, ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট, গবেষক সবাই যখন বছরের পর বছর ‘সব নষ্টদের অধিকারে যাবে’ কি না প্রশ্ন করছেন, তখনো আমরা ঘুমিয়ে থাকি আর পাপিয়া, পাপুল, পরীমণি, মৌ, পিয়াসা, সাবরিনা, সাহেদ, মিঠুদের দৌরাত্ম্য দেখি, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করি না। নূরলদীন বলেছিলেন, ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?’ আর জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’ এ ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার উত্তরসূরি এবং তাঁর আদর্শের প্রকৃত সৈনিকরা কী বলেন, সেদিকে আজ দৃষ্টি সবার। স্বাধীন এই দেশে বর্গি, ইংরেজ বা পাক হানাদার নেই সত্য, তবে তাদের পেতাত্মা রয়েছে। এই পেতাত্মা বা নষ্টদের বীজ সমূলে ধ্বংস করার সুদৃঢ় প্রত্যয় আর দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হোক জাতির পিতার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য আর শততম জন্মবার্ষিকীতে প্রকৃত ভালোবাসার উপহার।

লেখক : কলামিস্ট, গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

সর্বশেষ খবর