আত্মীয় ছাড়া আমাদের জীবন অচল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক অপরিসীম। আত্মীয়দের ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমবেদনা নিয়েই আমরা এ পার্থিব জীবনে বেঁচে আছি। আত্মীয় হলো নিজ রক্তের এবং বৈবাহিক সম্পর্কীয় লোকজন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোর না। নামাজ ভালো করে আদায় কর এবং জাকাত দাও। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ।’ বুখারি, হাদিস নম্বর ১৩০৯। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করবে এবং মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে।’ সুরা বাকারা, আয়াত ৮৩। সুরা নিসায় বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক কোর না। আর সদ্ব্যবহার কর পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, দূর প্রতিবেশী, মুসাফির ও অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে।’ ওই, আয়াত ৩৬। স্পষ্টতই এ আয়াতে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আল্লাহ সবার সঙ্গে ন্যায় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন আত্মীয়স্বজনদের হক আদায় করার জন্য।’ সুরা নাহল, আয়াত ৯০। তাহলে আমাদের মনে এখন প্রশ্ন আসে আত্মীয়স্বজনের হক কী?
আত্মীয়স্বজনের হক বলতে সহজে যা বলা হয়েছে তা হলো- তাদের সঙ্গে দেখা করা, খোঁজখবর নেওয়া, তাদের আর্থিক সংগতির প্রতি লক্ষ্য রাখা, বিপদে সাহায্য করা, অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করা, তাদের যথাযথ সম্মান করা, উপহার ও উপঢৌকন দেওয়া, দরিদ্র আত্মীয়কে দান করা, দুঃসংবাদে সহমর্মী হওয়া, মৃত্যুতে জানাজায় শরিক হওয়া। এক কথায় আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট ও মজবুত রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রিজিক প্রশস্ত হওয়া ও আয়ু বৃদ্ধির আশা করে সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে।’ বুখারি, হাদিস নম্বর ৫৯৮৬)। আল্লাহ বলেন, ‘আর আত্মীয়স্বজনদের দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদেরও।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৬। এ আয়াতে আত্মীয়দের হক বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক আত্মীয়ের হক আদায় করতে হবে। তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে জীবনযাপন ও সদ্ব্যবহার করতে হবে। যদি তারা অভাবগ্রস্ত হয় তবে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যখন তার কোনো রুগ্ন মুসলমান ভাইকে দেখতে যায় তখন সে যেন জান্নাতের বাগানে ফল আহরণ করতে থাকে, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।’ মুসলিম। দুঃখ-কষ্টে, আত্মীয়স্বজনের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা জানানো নেকির কাজ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মোমিন ভাইয়ের বিপদে এগিয়ে এসে সান্ত্বনা দেবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাকে সম্মানের পোশাক পরিয়ে দেবেন।’ ইবনে মাজাহ। সহিহ হাদিসসমূহে আরও বর্ণিত হয়েছে যে আত্মীয়তার অধিকারের ক্ষেত্রে অন্য পক্ষ থেকে সদ্ব্যবহার আশা করা উচিত নয়। যদি অন্য পক্ষ সম্পর্ক ছিন্ন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তবু তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনেকেই সাধারণ বিষয় নিয়ে নিজ রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ ও কথাবার্তা বন্ধ রাখি। যা কাম্য নয়। এতে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ববোধ ক্ষুণ্ণ হয়। ইসলাম সব সময় আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।