শিরোনাম
সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

কমিউনিটি ক্লিনিক

মো. তোফাজ্জল হোসেন

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার      ২ নম্বর বুধহাটা ইউনিয়নে ‘শেখ আবদুস সোবহান কমিউনিটি ক্লিনিক’ নির্মাণে দুই দফা বাধা দিয়েছে বেউলা গ্রামের কার্তিক মুখার্জির পরিবার। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের সুচিকিৎসার জন্য সাংবাদিক শেখ মেহেদী হাসানের উদ্যোগে এ ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার সরকারি অনুমোদন পায়। সব বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও মি. মুখার্জি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ক্লিনিকের জন্য দানকৃত জমির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এখন আইনি জটিলতায় ক্লিনিক নির্মাণ অনিশ্চতার মুখে পড়েছে। জুনের মধ্যে নির্মাণ সম্ভব না হলে অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে, বঞ্চিত হবে গ্রামের সাধারণ দরিদ্র মানুষ।

কার্তিক মুখার্জি তার প্রতিবেশী মৃত বলাই কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র সুকুমার ব্যানার্জির সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ যুগ্ম জজ আদালত-২ এ ষড়যন্ত্রমূলক দেওয়ানি মামলা (মামলা নম্বর ৮১/২০) করেন। ক্লিনিকের জন্য দানকৃত জমি ওই প্রতিবেশীর কাছ থেকে ১৯৯৬ সালে কেনা। জমির দলিল, এসএ রেকর্ড, বিএস রেকর্ড, খাজনা পরিশোধের সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। ক্রয়কৃত ৩৩ শতাংশ জমির পশ্চিম পাশে ক্রেতা শেখ কিয়ামুদ্দীন ও তাঁর স্ত্রী ছায়রা বিবির কবর রয়েছে। মি. মুখার্জির নানান তদবিরে আদালত বিব্রত হয়ে মামলাটি যুগ্ম জেলা জজ ১ এ বদলি করে। সেপ্টেম্বর ২০২১ এ দরিদ্র মানুষের জনস্বাস্থ্যর বিষয় বিবেচনার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত দেওয়ানি ৮১/২১ নম্বর মামলা শুনানি শেষে আইন মেনে এবং প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে দানকৃত ৮ শতাংশ জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের আদেশ দেন। আদেশ হাতে পেয়ে সরকারি প্রকৌশলী ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নির্মাণের জন্য গেলে মি. মুখার্জির পুত্র সৃষ্টিধর ওরফে সুমন ও পয়াসর মুখার্জি বাধা দেন। কার্তিক মুখার্জি ওই অদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজের কাছে আপিল আবেদন করেন। আদালত ৪৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির আদেশ দেয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও আদালতের আদেশ না হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

কার্তিক মুখার্জি ইতোপূর্বে বেউলা শ্যামা মন্দিরের জমির দলিল জাল করে স্থানীয় জোবায়ের-এর কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন। এ জন্য মন্দিরের পুরোহিত পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত হতে হয়। তিনি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন, আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর ‘অবৈধভাবে কমিউিনিটি ক্লিনিক নির্মাণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে এক লিখিত আবেদন করেন। জনস্বার্থবিরোধী এসব কাজের তদবির করেন তার পুত্র সুমন মুখার্জি, কন্যা চৈতালী মুখার্জি, আশীষরঞ্জন দাশ ও তাদের আত্মীয় শ্যামল মুখার্জি।

কার্তিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন ২৯ নভেম্বর ২০২০-এ সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সাব-রেজিস্ট্রার, আশাশুনির কাছে সংশ্লিষ্ট জমির বৈধতা যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেন। ভূমি অফিস দানকৃত জমির বৈধতা নিশ্চিত করে। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ৭ ডিসেম্বর ২০২০ (স্মারক নম্বর ৪৫১) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, “...সাব-রেজিস্ট্রার অফিস আশাশুনি, সাতক্ষীরার ক্রমিক নম্বর-১৮৯৯ বহি নম্বর-১ দলিল নম্বর ১৮৯৮ দানপত্র দলিলের গ্রহীতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মাননীয় সচিব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ...মৌজা-বেউলা, জেএল নম্বর ৫৫, হাল ৩১ নম্বর এসএ ৮৫৫ নম্বর খতিয়ানের রেকডীয় মালিক বলাই কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর নিকট হইতে ০৮/০৬/১৯৯৬ খ্রিঃ তারিখ অত্রাফিসের ২৩২৭ নম্বর রেজিস্ট্রিকৃত কোবলা দলিলমূলে দাতাদ্বয়ের পিতা কেয়ামুদ্দীন শেখ ও মাতা ছায়রা বিবি একত্রে ৩৩ শতক জমি খরিদ করিয়া বর্তমান জরিপে চূড়ান্ত প্রকাশিত বিএস ১২৮১ নম্বর খতিয়ানে ১৮১৭ দাগে বাড়ি ৮ শতক রেকর্ড সৃষ্টি করিয়া দাখিলা প্রাপ্ত হন। ...” এর পরও কার্তিক মুখার্জি সমুদয় কাগজপত্র পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনে পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ঢাকা অত্র কাগজপত্রের শুদ্ধতা নিশ্চিত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সাক্ষ্যও দিয়েছেন।

কার্তিক মুখার্জির পরিবারের সঙ্গে একাধিক বিচারকের নিবিড় সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। এ সম্পর্কের সূত্রে তারা বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে থাকেন বলে স্থানীয় পত্রিকায় নানা সময় খবর ছাপা হয়েছে। মি. মুখার্জির বাড়িতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ গভীর রাতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির এবং নাশকতা মামলার আসামিদের নিয়ে সভা হয়। তার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে, ফেসবুকে প্রচার হয়েছে।

১৯ জুলাই ২০২০ এ সুকুমার ব্যানার্জির বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ নিয়ে (মামলা নম্বর ৩৫৯/২১) চলমান মামলার পিবিআই তদন্তে সুকুমারের কন্যা ঐষী ব্যানার্জি (১০) অন্যতম আসামি হিসেবে সুমন মুখার্জি ও তার স্ত্রী মিতালী মুখার্জিকে চিহ্নিত করেন। সুমন বিভিন্ন সময় আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকার নাম ভাঙিয়ে এলাকার একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা, হুমকিসহ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, সিভিল সার্জনের উদ্যোগে সাব-রেজিস্ট্রার, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন, পুলিশের ফরেনসিক বিভাগের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট জমির বৈধতা নিশ্চিত করেছে। তাহলে কার প্রশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উন্নয়ন উদ্যোগের অন্যতম কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে বাধা দেওয়া, তারা এর প্রতিকার চায়। একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলার কারণে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মতো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হতে পারে না। তাদের একটাই দাবি, দ্রুত আইনি জটিলতা নিরসনপূর্বক কমিউনিটি ক্লিনিকটি নির্মিত হোক। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চতর আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। তারা মনে করেন, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে অন্যায়কারী যেই হোক না কেন।

                লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর