শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও আচরণ

মো. আমিনুল ইসলাম

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও আচরণ

মানুষ সামাজিক জীব। আর মানব জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক হতে হবে ভালোবাসার ও ভ্রাতৃত্বের। তাদের সঙ্গে কখনই খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। অথচ আজকাল আমাদের সমাজে প্রতিবেশীর সঙ্গেই আমাদের সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক। কেউ কারও খোঁজ নিই না। সামান্য বিষয় নিয়ে হয় বিবাদ-কলহ, ঝগড়া। অথচ ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর প্রতি উত্তম আচরণ ও ভালো ব্যবহার করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঘরবাড়ির চারপাশে যারা বসবাস করেন তারাই আমার নিকটতম প্রতিবেশী। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো, যারা তোমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতিম, মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী, কাছের প্রতিবেশী, পাশের লোক, পথচারী ও তোমার অধিকারভুক্ত দাস-দাসী তাদের সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করো’ (সুরা নিসা-৩৬)। এই আয়াতে আল্লাহ পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো আচরণ করার পাশাপাশি নিকটবর্তী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিবেশীরাই বিপদের দিনে সবার আগে এগিয়ে আসে।

রসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে লোকগণ, মুসলমানকে, তোমরা জান কি?’ তাঁরা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, ‘সেই ব্যক্তিই উত্তম মুসলমান, যার হাত এবং অনিষ্ট থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে’ সুবহানাল্লাহ। তাহলে একজন মুমিন মুসলমানের জন্য কত বড় উপদেশবাণী এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার জন্য প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা জরুরি। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ প্রতিবেশীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা গুরুতর অন্যায় ও গুনাহের কাজ। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না।

প্রতিবেশীর সঙ্গে কখনই ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। এতে দুজনেরই ক্ষতি এবং উভয়েরই পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। রসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে ঝগড়াটে দুই প্রতিবেশীর মোকদ্দমা পেশ করা হবে।’ রসুল (সা.) বলেন, হজরত জিবরাইল (আ.) সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে এত বেশি উপদেশ দিতেন, এমনকি পরিশেষে আমি মনে করতে লাগলাম, প্রতিবেশীকে  সম্পত্তির ওয়ারিশ করা হয় কি না? রসুল (সা.) সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রতিবেশীর অধিকার কী? তা কি তোমরা জান? প্রতিবেশীর অধিকার হলো, তোমার প্রতিবেশী সাহায্য চাইলে তাকে সাহায্য করবে, ধার চাইলে ধার দেবে, অভাবী হলে অভাব দূর করবে, অসুস্থ হলে সেবাদান করবে, মৃত্যু হলে জানাজায় অংশ নেবে। আনন্দে অভিনন্দন ও দুঃখে সমবেদনা জানাবে। সীমানা দেয়াল উঁচু করে বাতাস চলাচল বন্ধ করবে না। ফল ক্রয় করলে তার ঘরে পাঠিয়ে দেবে। পাঠাতে না পারলে গোপন রাখবে। রান্নাঘরের ধোঁয়া দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দিও না।’ রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, সে ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রসুলুল্লাহ কে সেই লোক? তিনি বললেন, যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়’ (বুখারি)। ‘মানুষ দোষ ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। ভালো ও মন্দ গুণ নিয়েই মানুষ। প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব হলো তার প্রতিবেশীর দোষত্রুটি গোপন রাখা। রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কারও দোষ গোপন রাখে কেয়ামতের দিন আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ। প্রতিবেশীর সঙ্গে রাগ করে কথাবার্তা বন্ধ করা যাবে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ ও ব্যবহার করতে হবে। তার মনে কষ্ট দেওয়া যাবে না। অসহায় গরিব প্রতিবেশীকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

সর্বশেষ খবর