রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলা

১৯০৯ সালের এপ্রিলে ভাওয়ালের রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ  রায়  স্ত্রী বিভাবতী দেবী, শ্যালক সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জমিদার মহলের এক বহর ভৃত্যসহ স্বাস্থ্য উদ্ধারের লক্ষ্যে বায়ু পরিবর্তনে দার্জিলিং যান। একদিন ভাওয়ালের লোকজন জানল, রমেন্দ্রনারায়ণ দার্জিলিংয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন; সেখানে তাঁকে যথারীতি দাহ করা হয়েছে এবং তাঁর স্ত্রী ও অন্যরা তাঁর মৃত্যুতে শেষকৃত্য করার জন্য ঘরে ফিরে এসেছেন। কিন্তু ১৯২০ সালে রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ সন্ন্যাসীবেশে ঢাকায় আবির্ভূত হন। অনেকে তাঁকে শনাক্ত করলেও রাজা নিজের থেকে আপন পরিচয় দেননি। তিনি এ কথাও বলেননি যে তিনি ভাওয়াল রাজ্যের তিন অংশীদারের একজন। যাঁরা তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন তাঁরা ১৯২২ সালে তাঁকে ভাওয়ালে নিয়ে আসেন এবং তখনই তিনি আত্মপরিচয় ঘোষণা করেন। পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে রাজবাড়ির প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে তিনি কতখানি পরিচিত এটি প্রমাণের জন্য বেশ কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রদর্শন করেন। কিন্তু পরিবার তাঁকে প্রকৃত রমেন্দ্রনারায়ণ রূপে মেনে নিতে অস্বীকার করে। তাঁদের দাবি, রমেন্দ্র ১৯০৯ সালে দার্জিলিংয়ে মারা গেছেন। এদিকে রাজা নিজে তাঁর পরিচয়ের ব্যাপারে কোনোরকম তৎপরতা না দেখানোয় যাঁরা তাঁকে রাজবাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা রমেন্দ্রের সত্যিকারের পরিচয় প্রতিষ্ঠায় প্রথমে অসুবিধায় পড়েন। তবে একটি সুবিধা ছিল এই যে তিনি রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন জিনিস চিনতে পারেন এবং সেসবের বৃত্তান্ত তাঁর জানা আছে বলে দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত সন্ন্যাসী বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে বলেন, তিনি ভাওয়াল রাজ্যের এক তৃতীয়াংশের মালিক। কিন্তু তাঁর পরিবার সঙ্গে সঙ্গে এ দাবি নাকচ করে দেয় এবং সন্ন্যাসীবেশী রমেন্দ্রকে একজন বিপজ্জনক মিথ্যা দাবিদার হিসেবে গণ্য করে। রাজ পরিবার এ ভ- নাগা সন্ন্যাসীর হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানায়। রমেন্দ্রের কলকাতানিবাসী স্ত্রী সন্ন্যাসীকে তাঁর স্বামী হিসেবে মেনে নিতে বারবার অস্বীকৃতি জানান।

আপসে সমাধানের সব প্রয়াস ব্যর্থ হলে রমেন্দ্রনারায়ণ ১৯৩৫ সালে ঢাকা জজ কোর্টে একটি উত্তরাধিকার মামলা দায়ের করেন। পান্নালাল বসুর কোর্টে তাঁর মামলা পরিচালনার জন্য ব্যারিস্টার বি সি চ্যাটার্জিকে নিয়োগ করা হয়। কোর্টে সাক্ষ্য-প্রমাণ দেওয়ার জন্য বহুসংখ্যক দেশি ও ইউরোপীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তালিকাবদ্ধ করা হয়। প্রত্যেকে নিজ নিজ সাক্ষ্যে শনাক্ত করেন সন্ন্যাসী আসলেই রমেন্দ্রনারায়ণ। কোর্টে রমেন্দ্রনারায়ণ দাবি করেন, তিনি তাঁর শ্যালক সত্যেন্দ্রনাথের  ষড়যন্ত্রের শিকার। আদালতের রায়ে রমেন্দ্রনারায়ণ ভাওয়ালের রাজা হিসেবে স্বীকৃতি পান। এ রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী কলকাতা হাই কোর্টে আপিল করেন। তবে হাই কোর্টে তা নাকচ হয়ে যায়।

জাফর খান

সর্বশেষ খবর