শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ওনারা রাজনীতিতে নাক গলাবেন না

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

ওনারা রাজনীতিতে নাক গলাবেন না

একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামরিক বাহিনীর উদ্দেশ্য হলো দেশকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হুমকি থেকে রক্ষা করা। পাকিস্তানে রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রধান কারণ হিসেবে সামরিক কর্মকর্তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থ, নিজেদের মাঝে সংহতি, নিজেদের আলাদা শাসন ও সংস্কৃতি এবং নির্দিষ্ট আয়ের বিপরীতে অধিক অর্থের হাতছানি প্রভৃতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেসামরিক সংস্থাগুলো এমনকি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনাবাহিনীর আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আগস্ট ১৯৯০, এপ্রিল ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বেসামরিক সরকারগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার তথা বিরাজনীতিকরণের জন্য প্রভাব বিস্তার করেছিল ও প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। তবে এতে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং জনশৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়। পাকিস্তানে শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অভাবের নেপথ্যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপকে দায়ী করা হয়। এখন পর্যন্ত স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এবং সেনাবাহিনীকে সমানভাবে দায়ী বলে বিবেচিত। ১৯৭৭, ১৯৯০, ১৯৯৩, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলো ছিল বিতর্কিত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক একটি কালো অধ্যায়। এসব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কারচুপির জন্য সামরিক বাহিনীকে সরাসরি দায়ী করা হয়।

আদর্শগতভাবে জনগণের দায়িত্ব হলো দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করা। জনগণের কল্যাণে দেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব। পাকিস্তানের সামরিক করপোরেট স্বার্থ কখনই এ ধরনের প্রক্রিয়াকে এগোতে দেয়নি। অন্যান্য সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তারা মূলত নিজ স্বার্থই নিশ্চিত করেছে। সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি করে রাষ্ট্র ও সমাজের ওপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনসাধারণের অর্থ সে দেশের সামরিক তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এভাবে সামরিক বাহিনীকে তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য তথা দেশ রক্ষার জন্য প্রশিক্ষণের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে আয় সম্প্রসারণের দিকে গুরুত্ব দেয়। ঘন ঘন সংবিধান, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রত্যক্ষ ফলাফল। তাই বলা হয় যে, পাকিস্তানে গণতন্ত্র কখনই পুরোপুরি শিকড় গাড়তে পারিনি এবং গণতন্ত্রের বৈধতার ওপর ভর করে সেখানে চলেছে সামরিক একনায়কত্ব।

পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তানের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬৯ মিলিয়ন, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ২৫০ থেকে ৩৩৫ মিলিয়নের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হয়, যা পাকিস্তানকে জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের চতুর্থ বা পঞ্চম বৃহত্তম দেশ করে তুলবে। এই বিশাল জনসংখ্যার অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে তাই বৈশ্বিক হুমকি বিবেচনা করা হয়। এই বিশাল জনসংখ্যা সন্ত্রাসবাদ বা অস্ত্র নিয়ে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে গেলে গোটা বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত ভুল হাতে পারমাণবিক অস্ত্র চলে গেলে কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাই নয়, বৈশ্বিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। বিগত বছরগুলোতে পাকিস্তানে স্থানীয় ও আঞ্চলিক, উভয় প্রকার জঙ্গিগোষ্ঠী ঘাঁটি গেড়েছে এবং দেশটিকে “বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান” এবং “বৈশ্বিক জিহাদিদের শ্রেষ্ঠ প্রজনন ক্ষেত্র”-এর মতো তকমা দিয়েছে। তাই বলা হয়, সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার কথা বলা সত্ত্বেও রাষ্ট্রটি সেনাবাহিনীর প্রভাবেই পরিচালিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, পাকিস্তানে গণতন্ত্র কখনই পুরোপুরি শিকড় গাড়তে পারেনি এবং গণতন্ত্রের ছায়ায় সামরিক একনায়কত্বই ছিল দেশের চালিকাশক্তি।

এখন সময় এসেছে পাকিস্তানের জনগণের নিজেদের ক্ষমতার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার এবং দেশের আয়তন, ভৌগোলিক অবস্থান এবং জনগণের সামর্থ্যকে বিবেচনা করে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার। এতদিন পাকিস্তানের রাজনীতির লক্ষ্য ছিল কৌশলগত স্থান নির্ধারণের পরিবর্তে কৌশলগত সুবিধা নেওয়া ও স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভ। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বছরের পর বছর। দেশের অর্থনীতি কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান মানব সম্পদ দ্বারা প্রভাবিত ও উপকৃত হয়েছিল। আবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল এই বিপুল সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে দেশের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় ধর্মীয় উগ্রবাদ আজ দু-ধারী তরবারিতে পরিণত হয়েছে। যে মুসলমান যোদ্ধারা জিহাদের নামে আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়েছিল এবং ১৯৮৯ সালে ভারতকে আঘাত করেছিল, তারাই এখন ভারতের চেয়ে পাকিস্তানেই বেশি আঘাত করে। একসময় সেনানিবাসের কাছেই লাদেনের আস্তানা ছিল, যেখানে আমেরিকার কমান্ডোরা আচমকা আঘাত হানে। আজ পাকিস্তানি ভূখণ্ডে আল-কায়েদা এবং এর সহযোগীদের একত্রিত হওয়া, আফগানিস্তানে তালেবানের শিকড় গভীরতর করা, পাঞ্জাব ও উপজাতীয় অঞ্চলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামে পাকিস্তানি তালেবানের সংখ্যা বৃদ্ধি, লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)-এর মতো ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর আদর্শগত প্রচারণা ও প্রতিপত্তির দ্রুত বৃদ্ধিজনিত ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর মনে সন্দেহ জাগিয়েছে। কার্যকরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত মোকাবিলা, অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা বা অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদানের বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ আজ পাকিস্তানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা পাকিস্তানের উপকারার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব পালন কঠিন করে তুলতে পারে, যার ফলে পাকিস্তানেরই অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো আরও জটিল হতে পারে।

পাকিস্তান নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা অত্যন্ত কঠিন। মাত্র কয়েক বছর আগে জেনারেল মোশাররফ সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দাবি করে যে আইনজীবী আন্দোলনের উত্থান হয়েছিল, পূর্বে কেউ তা অনুমানও করতে পারেনি। পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে একটি শক্তিশালী ও বহুমুখী তালেবান আন্দোলনের উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণীও কেউ করতে পারেনি। আজ এই তালেবানরা পশতুন এবং পাঞ্জাবি      জঙ্গিদের একত্রিত করেছে। নতুন নামকরণ করা খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ঐতিহাসিকভাবে শান্তিপূর্ণ হাজারা বিভাগে প্রাণঘাতী দাঙ্গার প্রাদুর্ভাব নিয়েও কেউ আগাম ভাবেনি। ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর সময় যে কেউ স্পষ্টতই সতর্ক থাকে। তবে পাকিস্তানের সামরিক আধিপত্যের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে মন্তব্য করার সময় বিশ্লেষকদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয়।

রাজনীতিবিদদের বিরোধ নিষ্পত্তি, সংস্কার সমর্থন এবং সন্ত্রাস ও দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানোর জন্য ঐকমত্য প্রয়োজন। এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অপরিবর্তনীয় নয়। দুর্বল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং অনাবশ্যক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে মসজিদ ও মাজারেও অনেক মূল্যবান প্রাণহানি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যে সহনশীল রাষ্ট্রটি কল্পনা করেছিলেন, বর্তমান পাকিস্তান তার সঙ্গে খুব কমই সাদৃশ্যপূর্ণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশগত পরিবর্তন, সীমানা বিরোধ বা যুদ্ধ হলেও পাকিস্তানের ভূখণ্ডেই এদেশের জনগণকে থাকতে হবে। সর্বোপরি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো পাকিস্তানেই থাকবে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, পাকিস্তান নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার আগে অন্তত এক বা দুই প্রজন্মের বেড়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পাকিস্তানিদের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো তাদের দেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করা, যেখানে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং ধর্মীয় সংঘাতের অভিশাপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে বেসামরিক এবং সামরিক প্রশাসনের মধ্যে যৌক্তিক সম্পর্ক বজায় থাকে, যা রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের জনগণের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনীয়তাগুলো মিটাতে সহায়তা করে। যখন একটি রাষ্ট্র অন্য দেশের ছত্রছায়ায় থাকে বা সামরিকতন্ত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন দেশটির রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতার ফলে দেশটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের সম্পদ আছে। এখন পাকিস্তানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে, যা প্রবৃদ্ধি বাড়াবে এবং সরকারের ওপর জনগণের বৃহত্তর অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে। পাকিস্তানের জনসংখ্যা, যা এখন বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে বিবেচিত হয়, সেই জনসংখ্যাই  জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং পাকিস্তানের যে কোনো স্থানে বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে একটি সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। পাকিস্তানের নাগরিকরা কী ধরনের রাষ্ট্র কল্পনা করে তা নিয়ে একটি জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রয়োজন। অন্য কথায়, পাকিস্তানের পক্ষে নিজের জন্য উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং কাছের বা দূরের অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজের সম্পদ দিয়ে সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে। কার্যত একশ্রেণির পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের স্বল্পমেয়াদি দৃষ্টিকোণ এবং সামরিক বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাবের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের বিতর্ক করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। পাকিস্তান বছরের পর বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে পরিকল্পনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে, অর্থনৈতিক ব্যর্থতার জন্য অন্যদের দোষারোপ করেছে এবং ভোটের বাজারে কল্পনাপ্রসূত অর্থনৈতিক সাফল্যের দাবি করছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ধনীদের তেমন কর দিতে হয় না। নেতারা মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণকে শিক্ষিত করার জন্য সর্বাধিক বাজেট বরাদ্দ করতে রাজি নয়। প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা ব্যয় বাজেটের ওপর বড় ভাগ বসায়।

যে কোনো মূল্যে পাকিস্তানকে গণতন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যতই ক্যারিশম্যাটিক হোক না কেন, সামরিক বা বেসামরিক স্বৈরাচারের নেতৃত্বে দেশটিকে আর চলতে দেওয়া যায় না। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থেই পাকিস্তানের সাফল্য নিশ্চিত করা ও ব্যর্থতা রোধ করা প্রয়োজন। ভারতসহ গোটা বিশ্বই পাকিস্তান নিয়ে চিন্তিত। কারণ পাকিস্তানে সুশাসনের অভাব পারমাণবিক অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারে। এ কারণেই পাকিস্তান বিভক্ত করার প্রস্তাব অবাস্তব এবং বিপজ্জনক। পশ্চিমা শক্তি, চীন, রাশিয়া, আরব বিশ্ব এবং ভারতের প্রতিবেশীদের একটি সমন্বিত নীতি থাকা দরকার, যা পাকিস্তানের সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে শক্তিশালী করবে, সামরিক বাহিনীকে একটি গঠনমূলক ভূমিকা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে, অর্থনীতির উন্নতি করবে এবং অত্যাবশ্যকীয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য সক্ষম করে তুলবে। এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, চীন তার নিজের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং সে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খেলা খেলছে। নীতিনির্ধারকদের এই অঞ্চলে আমেরিকান হস্তক্ষেপের মূল্য সম্পর্কেও সাবধান হতে হবে।

অতিসম্প্রতি পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া অতীতে রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে সেনাবাহিনী “রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ” বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিরক্ষা ও শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে সেনাবাহিনী কদাচিৎ সমালোচিত হয়। কিন্তু পাকিস্তানে সেনাবাহিনী প্রায়শই সমালোচনার শিকার হয়।’ তিনি মনে করেন যে, রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার কারণেই এ সমালোচনা। তিনি ঘোষণা দেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক মহল সেনাবাহিনীকে সমালোচনার মুখে ফেলেছেন এবং কদর্য ভাষা ব্যবহার করেছেন।  রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা জনগণের অধিকার, তবে এক্ষেত্রে ভাষা ব্যবহারে সবার সতর্ক থাকা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।  বিদায়ী সেনাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, যাতে জাতি এগিয়ে যেতে পারে। জেনারেল বাজওয়ার কথাগুলো বাস্তবে সত্যি হোক এই কামনা করার সময় এসেছে।

লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক এবং কলামিস্ট।

email : [email protected]

সর্বশেষ খবর