শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উইলিয়াম কেরি

উইলিয়াম কেরি

বাংলাদেশে ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছিলেন ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির উইলিয়াম কেরি। শ্রীরামপুরে তিনি তাঁর আস্তানা গাড়েন। বাংলা ভাষার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এই গুণী মানুষটি। বিদেশিদের বাংলা শেখা ও দেশিদের খ্রিস্টসাহিত্য পড়ার সুবিধার্থে তাঁরা একটি অভিধান ও একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ প্রণয়ন করেন এবং বাইবেলেরও অনুবাদ করেন। শ্রীরামপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন দিগ্দর্শন ও সমাচার দর্পণ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সংবাদপত্রের সূচনা করে; দি স্টেটসম্যান পত্রিকার পূর্বপুরুষ দি ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া প্রকাশও তাঁদের এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

কেরি শ্রীরামপুরে উদ্ভিদবিদ্যা ও কৃষিবিদ্যায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি সেখানে বাগান তৈরি করেন এবং বিদেশ থেকে বীজ এনে নতুন জলবায়ু গ্রহণে সক্ষম বৃক্ষ উৎপাদন করেন। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি অ্যাগ্রি-হর্টিকালচার সোসাইটি অব ইন্ডিয়া স্থাপনেও নেতৃত্ব দেন। শ্রীরামপুরের যাজকরা সমকালীন হিন্দুসমাজে প্রচলিত অমানবিক আচরণ, যেমন সাগরদ্বীপে শিশুহত্যা, সতীদাহ ইত্যাদির বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও সরকারকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন; এসবের ওপর তাঁরা একটি গবেষণাও চালিয়েছিলেন।

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর বাংলায় ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির অনুসরণে যে প্রটেস্ট্যান্ট মিশনারি সোসাইটিগুলো কাজ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : লন্ডন মিশনারি সোসাইটি, চার্চ মিশনারি সোসাইটি ও চার্চ অব স্কটল্যান্ড। চার্চ মিশনারি সোসাইটি ছিল ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। এটি ভারতে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালনকারী মেরি অ্যান কুককে ১৮২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রাথমিক সমর্থন জানিয়ে আসছিল। এরপর ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ পাদরি আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতা আসেন এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য নতুন পর্যায়ের কাজ শুরু করেন। তিনি একটি স্কুল স্থাপন করেন যা দ্রুত ও দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য লাভ করে এবং শেষ পর্যন্ত স্কটিশচার্চ কলেজ নামে সুপরিচিত হয়। ডাফ আবৃত্তিমূলক শিক্ষা অনুমোদন করেন এবং ছাত্রদের মধ্যে আগ্রহ ও বোধ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের গুরুদায়িত্বের ওপর জোর দেন। তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ মানব তৈরি এবং শরীরচর্চা ও খেলাধুলার সুযোগ তৈরির প্রতিও উৎসাহী ছিলেন। ইংরেজিকে শিক্ষার মাধ্যম করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী ও অনমনীয়।  অন্য মিশনারিরাও এ কাজ শুরু করেছিলেন এবং তাঁর এ উদ্যোগের কারণেই সরকার ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। আধুনিক বাংলার উন্নয়নে খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের ভাষাভিত্তিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে তাঁরা প্রধানত ধর্মযাজকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসব করতেন। তাঁরা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করতেন যে, তাঁদের মুক্তি একমাত্র খ্রিস্টধর্মেই নিহিত, যদিও এ ক্ষেত্রে তাঁদের সফলতা ছিল খুবই কম।         

আবীর খান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর