মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

২২তম রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

২২তম রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন জনাব সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তাঁর কর্মময় জীবন যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। ধীরস্থির একজন সদালাপী মানুষ হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। আওয়ামী লীগ এমন একজন যোগ্য সজ্জনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। ১৮ কোটি মানুষের দেশ। যে দেশের জন্মের বেদনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছি সেই দেশের সর্বোচ্চ পদ ‘রাষ্ট্রপতি’। সেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদের দায়িত্ব যথাযথ আন্তরিকভাবে অন্তর দিয়ে জনাব সাহাবুদ্দিন চুপ্পুু পালন করবেন এই আশা ব্যক্ত করে তাঁকে আমার, আমার পরিবার এবং আমার দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও গভীর শুভকামনা জানাচ্ছি। পরম করুণাময় আল্লাহ জনাব সাহাবুদ্দিন চুপ্পুুকে দেশের প্রধান হিসেবে পবিত্রতার সঙ্গে সুস্বাস্থ্যে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দান করুন।

পুরো সপ্তাহই অস্থির চঞ্চলতায় কেটে গেল, তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে যেভাবে কিয়ামতের আলামত দেখলাম এ এক অবিশ্বাস্য। এভাবে মুহূর্তে সবকিছু তছনছ বিলীন হয়ে যাওয়া অভাবনীয়। এ যেন সেই ইসরাফিল (আ.) সিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলার মতো। যেখানে ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে কিয়ামতের চাইতে কম কিছু হয়নি। দিনে ভূমিকম্প হলে হয়তো কিছু মানুষ কম মারা যেত। তবে দিনে হলে হয়তো বাচ্চাকাচ্চারা স্কুলে এবং কিছু মানুষ কর্মক্ষেত্রে থাকত। সে জায়গা ভূমিকম্পের আওতায় না পড়লে হয়তো আরও কিছু মানুষের প্রাণহানি কম হতো। শুধু মানুষ কেন, কত জীবজন্তু মারা গেছে, সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে যে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তা অভাবনীয়। এ পর্যন্ত ৩৫-৩৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আরও অনেক প্রাণহানি ঘটবে। তবে আশার কথা, ১৫৯ ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে এটাই আল্লাহর লীলা। আল্লাহ যার যতটা হায়াত রেখেছেন যে যেখানেই থাক যেভাবেই থাক আল্লাহ তাকে অবশ্যই রক্ষা করবেন। তুরস্ক ও সিরিয়া তার ব্যতিক্রম নয়। তবে দুর্গতদের জন্য আমরা কে কী করছি এটাই বড় কথা। দেশ নিয়ে সত্যিই গর্ব হয়। আমরা তুরস্কের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। এমনকি আমাদের উদ্ধারকারী দল এ পর্যন্ত কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদার ৩০-৩১ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ফ্যাসাদ করে হত্যা করে এমন ছাড়া কেউ একজনকে হত্যা করলে সে যেন সারা পৃথিবীকে হত্যা করল। ঠিক তেমনি কেউ যদি একজনকেও রক্ষা করে তাহলে সে যেন সারা দুনিয়ার মানুষকে রক্ষা করল।’ আমার কাছে আজ তেমনই মনে হচ্ছে। আমাদের উদ্ধারকারী দল মনে হয় সারা পৃথিবীকে উদ্ধার বা রক্ষা করেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেনে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের বছরপূর্তি কয়েক দিন   বাকি। ইউরোপ এবং ন্যাটো জোট হাজার হাজার লাখ লাখ ডলারের মারণাস্ত্র ইউক্রেনে সরবরাহ করছে। অথচ তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি তাদের সহযোগিতা কী, ব্যবহার কী, কতটা পাশে দাঁড়িয়েছেন? তুরস্ক ও সিরিয়ায় কতটা সাহায্য সহযোগিতা করেছে ইউরোপীয় জোট? এসব প্রশ্ন এসেই যায়। তবে গর্ব তো করতেই হয়, এই মহাদুর্যোগে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট তাঁর এক মাসের বেতন তুর্কি-সিরিয়ার এ দুর্যোগে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া ত্রাণসামগ্রীসহ উদ্ধার তৎপরতায় টিম পাঠিয়েছেন তারা। এমন ঐতিহাসিক কর্মকা-কে অবশ্যই প্রাণভরে অভিনন্দন জানানো উচিত। সারা বিশ্বের কাছে দুর্গতের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে তাইওয়ান। অনেক দেশে অনেক ক্ষেত্রে অনেক দুর্যোগে অনেক সংস্থার কর্মচারীরা একদিনের বেতন দান করেন। কিন্তু এটা একদিনের নয়, এক মাসের পারিশ্রমিক তুরস্ক ও সিরিয়ার দুর্গতদের জন্য প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এ এক নতুন নজির। পরম করুণাময় আল্লাহ তুরস্ক ও সিরিয়ার দুর্গতদের তার পবিত্র ছায়াতলে রাখুন সেই সঙ্গে তাইওয়ান ও তাইওয়ানবাসীদের নিরাপদে রাখুন।

৭০-৮০টা দেশ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অনেক আগেই অংশ নিয়েছে। এটা খুবই গর্বের কথা, ভূমিকম্পের চার দিন পর বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েই একজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এটা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্য এবং গৌরবের। আমাদের উদ্ধারকারী দল তুরস্কে পাঠানো বর্তমান সরকারের সবচাইতে উত্তম সঠিক সিদ্ধান্ত। এক সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বর্তমান সরকারপ্রধান বোন হাসিনা মানবতার দরবারে যে উচ্চাসনে আহরণ করেছিলেন। মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে তিনি শাশ্বত বাঙালির উদার মনের পরিচয় দিয়েছিলেন। আশ্রয়-পরবর্তী সবাইকে নিয়ে এক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার চাইতেও অনেক বড় কাজের কাজ হতো। ঠিক সেভাবে সত্যিকার অর্থে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা হয়নি বা সবাইকে দেশের কাজে লাগানো যায়নি। তাই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন এক সমস্যার আকার ধারণ করেছে। মানবতার সেবায় পথ চলতে হলে কমবেশি কষ্ট সবাইকে করতে হয়। মানুষের জীবন সম্পদ রক্ষা করতে পারলে অসহায় মানুষকে ছায়া দিলে স্রষ্টা খুশি হন। স্রষ্টার খুশি যাদের কাম্য তারা সব সময় মানবিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে থাকেন। মানুষকে ভালোবাসেন, আশ্রয় দেবেন, বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ তাই করেছে। ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে কিছু কষ্ট তো করতেই হবে। তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৩৫-৩৬ হাজারের বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। মৃতের সংখ্যা হয়তো আরও বাড়বে। কিন্তু ভারী যন্ত্রপাতি ছাড়া যেভাবে উদ্ধার অভিযান চলছে সেটাও এক বিস্ময়। মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষকে বাঁচাতে। এটাই মানবতা। বিজ্ঞানের জমানায় বা বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় মোবাইল ফোনের কল্যাণে ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা অনেকেই তাদের উদ্ধারে আকুল বার্তা পাঠাচ্ছে। বার্তা পেয়ে কাউকে কাউকে উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু যাদের উদ্ধার করা যায়নি, মৃত্যুপুরীতে পড়ে আছে তাদের কেমন লাগছে আর যারা বিপদগ্রস্তের আকুল কান্নায় সাড়া দিতে পারছেন না তাদের অবস্থা কী- ভাবতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আল্লাহ এ জগতের সবকিছুর স্রষ্টা। জগৎ স্রষ্টার কি লীলাখেলা আমাদের বোঝার বাইরে। বিজ্ঞানের কল্যাণে কত কিছু দেখছি। উদ্ধারকারী দল একটি বাচ্চাকে উদ্ধার করে জয়ধ্বনিতে উতলা হয়ে ওঠে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ছোট্ট একটা বাচ্চার জ্বলজ্বলে দুটো চোখ। উদ্ধারকারীরা তাকে বোতলের ঠোসে একটু একটু পানি খাওয়াচ্ছে। পানি মুখে দুই-তিন বছরের ছোট্ট শিশুর মুখের হাসি তারার মতো জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল দুচোখ বিশ্বের সব সৌন্দর্যের চাইতে শ্রেষ্ঠ সুন্দর। এমন স্বর্গীয় সৌন্দর্য বিশ্বের এক বিস্ময়। ইট-পাথরের স্তূপে চাপা পড়া ছোট্ট এক ভাইকে তার বোন মাথার ওপর হাত রেখে রক্ষার চেষ্টা করছে। ছোট ছোট ভাইবোনের চার চোখ জ্বলজ্বল করছে। এই চার চোখের সৌন্দর্যের সামনে পৃথিবীর সব উজ্জ্বলতা ম্লান। আল্লাহর কি কুদরত সে ভাইবোন দুটিকে উদ্ধারকারীরা উদ্ধার করেছেন। যদিও তুরস্কের কাছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার কাছে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে তেমন কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি, ভারী কোনো যন্ত্রপাতি দেখা যাচ্ছে না। যেমনটা কয়েক বছর আগে আমাদের সাভারের রানা প্লাজা ধসে দেখা যায়নি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বোধ আমাদের তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছিলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনকারীরা রানা প্লাজার দেয়াল ধরে নাড়াচাড়া করেছে তাই ধসে পড়েছে।’ এমন বুড়বক বোধহীন বাংলাদেশে দ্বিতীয় কেউ আছে বলে মনে হয় না। সেই রানা প্লাজার     ধ্বংসস্তূপ থেকে মাঝে মাঝে দুু-চারজন জীবিতকে উদ্ধার করে উদ্ধারকারী দল ‘আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি তুলে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলত। কেউ কাউকে শিখিয়ে দেয়নি। পরম আনন্দে তারা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি তুলেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরাও কত জায়গায় ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি তুলে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলেছি। কাছাকাছি থাকা হানাদাররা অনেক সময় আমাদের কণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবর’ শুনে চিৎকার করত চেঁচামেচি গালাগালি করত ‘শালে লোক জয় বাংলা ভি বলতা হ্যায়, আউর আল্লাহু আকবর ভি বলতা হ্যায়। শালা লোক কিইস্যা আদমি হ্যায়।’ আমার এখনো মনে পড়ে, ’৬২-তে শরিফ শিক্ষা কমিশন বাতিল আন্দোলনে সাদত কলেজের ভিপি ফজলুল করিম মিঠু, ফজলুর রহমান ফারুক, শওকত তালুকদার, আল মুজাহিদী, লতিফ সিদ্দিকী, আবু মোহাম্মদ আনোয়ার বক্স, বুলবুল খান মাহবুব, আতিকুর রহমান সালু। জনাব শাজাহান সিরাজের নাম লিখলাম না এ জন্য যে তখন পর্যন্ত তাকে আমি দেখি নাই। তাকে দেখেছি ’৬৪-’৬৫-এর পরে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর যখন মিছিল হতো তখনো মাঝেসাজে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দেওয়া হতো। আমরা কেউ তখন সেই ধ্বনিকে সাম্প্রদায়িক ভাবি নাই। ভেবেছি শক্তি। তখন দেশের মানুষ এমন ছিল না। অনেক ন্যায়-নীতি ছিল। কিন্তু এখন সেসব কোথায় মিলিয়ে গেছে এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে শ্রেষ্ঠ ছিলাম। এখন আমরা আবার সেই নৈতিকতা কীভাবে ফিরে পাব বুঝতে পারছি না। পাকিস্তানিদের কাছে অনেক আঘাত পেয়েছি, যুদ্ধক্ষেত্রে গুলি খেয়েছি, রক্ত দিয়েছি। আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে এখন কেউ যদি বলেন ‘বাই চান্স’ তাকে কী বলি? স্বাধীনতায় যাদের বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই তাদের এরকম রাষ্ট্রবিরোধী মানবতাবিরোধী কথাবার্তা ভালো লাগে না। এসবের বিচার হওয়া উচিত। আবার আর এক নেতা বলেছেন, ‘এর চাইতে পাকিস্তানই ভালো ছিল।’ সত্যিই আপনার কাছে যদি পাকিস্তান ভালো লাগে তাহলে রক্তে ভেজা বাংলাদেশে কেন, পাকিস্তানে যান। পাকিস্তানে গিয়ে লাফালাফি চিৎকার ফাৎকার করুন। কেউ বাধা দিবে না। বাংলাদেশে খাবেন আর পাকিস্তানের কীর্তন করবেন- এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। পাকিস্তানের জন্য এত দরদ, পাকিস্তানি হতে চান যান না পাকিস্তান। একবার ঝাপসা চোখ মুছে পাকিস্তানের দিকে তাকান। দেখুন, আজকের পাকিস্তানের অবস্থা। যেভাবে চলছে পাকিস্তান সেভাবে চললে কয় টুকরো হবে বলা যায় না। পাকিস্তানে কখনো গণতন্ত্র নিরাপদ ছিল না। গণতান্ত্রিকভাবে পাকিস্তান কখনো চলেনি। এখনো চলছে না। ইমরান খান বিশ্বখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড়। তিনি পাকিস্তানকে ক্রিকেটে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেতাব এনে দিয়েছিলেন। একজন প্রকৃত নেতার যে গুণাগুণ থাকা দরকার তার প্রায় সবই আছে। তাকে নিয়ে কি খেলাই না হচ্ছে- জনতা তার দিকে মানুষ তার দিকে। কিন্তু সরকার তাকে পদে পদে নাজেহাল করার চেষ্টা করছে। সেই পাকিস্তানে যদি কারও যেতে ইচ্ছে করে তাহলে কে বাধা দিবে। তবে এটা বলতে পারি শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায় তারা কোনো দিন কোনোভাবে সফল হবেন না। কারণ বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে বাংলার মানুষ রক্ত দেয়নি, মা-বোন সম্ভ্রম দেয় নাই। তাই সরকার বিরোধী রাজনীতি করলেই যা খুশি তা বলা যাবে, করা যাবে এটা ঠিক না। এ রকম কথাবার্তা চিন্তা করে বলবেন, বাংলার মানুষ কখনো গ্রহণ করবে না। তাই সাধু সাবধান। সীমার বাইরে যাবেন না। সীমা লঙ্ঘনকারীকে দয়ালু স্রষ্টা পছন্দ করেন না, সাধারণ মানুষও করে না। মনে রাখবেন সব সময় সবকিছু অর্থ বিত্ত বা গায়ের জোরে চলে না। পাকিস্তানিদের গায়ের জোর অস্ত্রের জোর আমাদের চাইতে হাজার গুণ বেশি ছিল। কিন্তু তবু কেন তারা আমাদের হাতে পরাজিত হলো। কারণ আমরা ছিলাম ন্যায় ও সত্যের পক্ষে, পাকিস্তানিরা ছিল অন্যায় ও অসত্যের দিকে। তাই তারা পরাজিত হয়েছে। পাকিস্তানিরা হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে। গরু-ছাগল-কুকুর-বিড়াল-কীটপতঙ্গ পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। শুধু মানুষ হত্যার জন্য নয়, আল্লাহর সৃষ্টি যে কোনো জীব হত্যার জন্য আল্লাহর শাস্তি নির্ধারিত। পাকিস্তানিদের আগুন দেওয়া বাড়িঘরে তেলাপোকা-টিকটিকি-উইপোকা-ঘুণ পুড়ে মরেনি? নিশ্চয়ই মরেছে। তারা আল্লাহর কাছে বিচার চায়নি? অবশ্যই চেয়েছে। সেই আল্লাহর বিচারে পাকিস্তানিরা আমাদের হাতে পরাজিত হয়েছে। প্রিয় নবী (সা.) এর সময় বদরের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীতে ৩১৩ জন ছিল। অন্যদিকে আক্রমণকারীরা ছিল হাজারের ওপরে। কিন্তু তারা মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি। কারণ অমুসলিম বাতিলদের আল্লাহ পছন্দ করেননি। তাই তারা হেরে গেছে। আল্লাহকে নাখোশ করে কেউ কোনো দিন জয়ী হতে পারেনা, কোনো দিন পারবেও না। তাই যারা দেশকে নিয়ে টানাটানি করেন, দেশকে ধ্বংস করতে চান তারা কোনোমতেই সফল হবেন না।

অগ্নিগর্ভা বিশ্বের পরিস্থিতি দেখে আমরা খুবই শঙ্কিত। দেশ মোটেই ভালো না। বাজারের দিকে তাকানো যায় না। সাধারণ মানুষের সবকিছুতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। তেলের দাম, বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম প্রতিদিন ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি- এর অশুভ ফল ফলতে বাধ্য। উচ্চ পদের অনেকের বেপরোয়া ভাব মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। চাল-ডাল-নুন-তেল-মরিচ-পিঁয়াজ সবকিছুই দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের নাগালের বাইরে। জিনিসগুলো অত্যন্ত যত্ন নিয়ে দেখা দরকার। বিরোধী দলের শুধু সমালোচনা করলেই এর কোনো সমাধান বা প্রতিকার হবে না। এর প্রতিকারের জন্য সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। বিএনপির সমালোচনা আর সব বিরোধী দলের সমালোচনা এক নয়। সমালোচনা আর শত্রুতাও এক কথা নয়। সমালোচনা আর গালাগাল সেও এক কথা নয়। বিষয়গুলো সবাইকে ভাবতে বলছি। যারা আজ বড় বড় নেতা, ক্ষমতাধর, আলিশান প্রাসাদের বাসিন্দা বাংলাদেশ না হলে তারা অনেকেই পিয়ন দারোয়ানের চাকরিও পেতেন না। তাই দেশকে, মুক্তিযুদ্ধকে, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের তাচ্ছিল্য বা অপমান করবেন না, একটু সম্মান করার চেষ্টা করুন।

সেদিন দেখলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিরো আলমকে নিয়ে কথা বলেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলবেন, কথা বলার জন্যই তিনি আওয়ামী লীগের মতো একটা অত বড় দলের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু তাই বলে হিরো আলমের মতো একজন মানুষকে এত গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। হিরো আলমকে দেশের মানুষ কমবেশি চিনে। তাই তাকে তার মতো থাকতে দিন। রাস্তাঘাটে আলোচনা সমালোচনা যা হয় বা হওয়ার তা হতে দিন। হিরো আলমকে নিয়ে যদি আমার বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন, মন্ত্রীরা কথা বলেন তাহলে তার প্রতি অবিচার হয় না? নিশ্চয়ই হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যা নয় তাই তাকে বুঝায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হয়। তার গুরুত্ব বেড়ে যায় এবং গুরুত্ব বাড়লে সে তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলতে পারে। এ দেশে শুধু কেন অন্যান্য দেশেও যত অমঙ্গল যত দুর্যোগ দুর্বিপাক সবই কারও কারও নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবার কারণে। যে যা নয় নিজেকে তার চাইতে অনেক বেশি বড় ভাবলে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। সেই সংঘাতে পড়ে আমরা অনেকে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। কারোরই অমন করা ঠিক না। সেদিন হঠাৎই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে মারাত্মক সত্য কথা বলেছেন। কিন্তু তার বলা শোভা পায় কি না এটা ভেবে দেখা দরকার। কারণ তিনিই তো মন্ত্রী। তার দায়িত্বে পরিচালিত রাস্তাঘাট যদি উপযোগী না থাকে তাহলে সে দায়ভার তো তাকেও বহন করতে হবে। হ্যাঁ, এটা ঠিক তার মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য বিভাগগুলো যদি ভালোভাবে না চলে চলার ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে। তার কথা যদি কেউ না শুনে তাকে শোনাতে হবে। তারপরও যদি পারা না যায় তাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। এ জন্য তো সাধারণ মানুষ কষ্ট পেতে পারেন না। যে কোনো দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্বশীল মানুষকে দায়িত্বের প্রমাণ দিতে হয়। শুধু কথা বলে হয়তো সাময়িক বাহবা পাওয়া যেতে পারে, সভা-সমাবেশে চিৎকার ফাৎকার করে হাততালি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ওসবে কাজের কাজ কিছু হয় না। সে জন্য সবার প্রতি অনুরোধ, বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ পার পেতে পারে না। পার পেতে হলে দেশের কল্যাণ করতে হলে বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে।

 

লেখক : রাজনীতিক

 www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর