শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুত্তাকি ব্যক্তি প্রকাশ্যে গোনাহ করে না গোপনেও করে না

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

মুত্তাকি তাকে বলা হয় যে ব্যক্তি প্রকাশ্যেও গোনাহ করে না, গোপনেও গোনাহ করে না। যেখানে মানুষে দেখে সেখানেও গোনাহ করে না এবং যেখানে মানুষে দেখে না, সেখানেও গোনাহ করে না। মানুষে কী বলবে, এই লজ্জায় যেমন প্রকাশ্যে গোনাহ করছি না, তেমনি গোপনে গোনাহ করলে আল্লাহপাক দেখেন, আল্লাহকে কি ভয় করা উচিত নয়? প্রকাশ্যে গোনাহ করলে দুনিয়ার মানুষ দেখে ফেলবে অতঃপর তিরস্কার করবে। আবার না-ও করতে পারে। মানুষের হাত থেকে রক্ষা করার মতো লোকজন দুনিয়াতে আছে। কিন্তু আল্লাহর হাত থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? সুতরাং যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে আর গোপনে গোনাহ করে সে মূলত আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। মোটকথা, মুত্তাকির এক নম্বর আলামত হলো- প্রকাশ্যে এবং গোপনে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। ২. হাদিসে বর্ণিত মুক্তির দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো- রাগের অবস্থায়ও সত্য কথা বলা। যে কোনো সত্যকে ধামাচাপা না দেওয়া। এটা হলো রসুল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত মুক্তির পথ। মিথ্যাকে যতই সুন্দর করে আপনি উপস্থাপন করেন, এটা কম দামি সুন্দর কাপড়ের মতো। বাজারে গিয়ে দোকানদারকে কাপড়ের মূল্য জিজ্ঞেস করলে একটা দেখায় ৭০০ টাকা আরেকটা দেখায় ২০০ টাকার। দেখতে ২০০ টাকারটাই সুন্দর বেশি। বাড়িতে এনে ধৌত করলে কয়েক দিনেই রং চলে যায়। আর ৭০০ টাকারটা দেখতে তেমন সুন্দর না হলেও যত ধৌত করা হবে, ততই তার সৌন্দর্য বাড়বে। মিথ্যা কথা শুনতে ভালো, বলতেও চমৎকার লাগে। আল্লাহপাক অনেক মানুষকে বলার যোগ্যতা দিয়েছেন। ফলে মানুষে অনেকের বক্তব্য শুনে মনে করে না জানি তিনি কত বড় জ্ঞানী! কিন্তু অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, এক সময় হয়তো রাস্তায় ওষুধ বিক্রি করত। ওষুধ বিক্রির ডায়ালগ ছাড়তে ছাড়তে এখন বক্তা হয়ে গেছে। অথচ আলহামদু সুরাও হয়তো সহিহ শুদ্ধভাবে পড়তে পারবে না। আল্লাহর একটা বড় নেয়ামত হলো মানুষের জবান। এই জবান যার শক্তিশালী তার আর কিছু লাগে না। এই জবান দ্বারা অনেক অসাধ্য সাধন করে মানুষ। যারা সরকারি দল করে তাদের জবান বা চাপার জোর যেমন যারা বিরোধী দল করে তাদের চাপার জোরও তেমন। এটাকে দোষণীয় মনে করতে নেই। তবে এই চাপা বা জবানকে সঠিক কাজে ব্যয় করতে হবে। যেমন আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, আমি তোমাদের একটি মহা নেয়ামত দিয়েছি, তা হলো জবান। এটা যদি সঠিক স্থানে ব্যবহার করতে পার, তাহলে জান্নাত পেয়ে যাবে, আর যদি অন্যায় কাজে ব্যবহার কর, তাহলে জাহান্নামে যাবে। একটা মানুষ ৭০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, কুফরি করে। কিন্তু মৃত্যুর আগে তার বোধদয় হলো যে, পুরো জীবন তো সর্বনাশ করলাম। জবান আল্লাহ দিলেন, হাত দিলেন, পা দিলেন, ব্রেন দিলেন, এগুলো দ্বারা জীবনভর আল্লাহর বিরোধিতা করলাম। এখন তো মরতে হবে। মৃত্যুর পর তো মুক্তির কোনো পথ দেখি না। অতঃপর সে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দাও। তারপর মুখ দিয়ে এই কালেমা পড়ে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। ফলে আল্লাহ জান্নাতকে তার আবাসস্থল নির্ধারণ করলেন। হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, আমি যখন রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, উম্মত যদি গোনাহগার হয়ে জাহান্নামের দিকে চলে যায়, তাহলে তাদের মুক্তির পথ কী? রসুল (সা.) বলেছেন, তাড়াতাড়ি তাকে বলো সে যেন পড়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। তাহলে সে ভুল পথ থেকে মুক্তির পথে এসে যাবে।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর