সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস প্রসঙ্গে

সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী (সৌরেন)

জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস প্রসঙ্গে

বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস পালিত হচ্ছে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। জাতীয়পরিসংখ্যান  দিবস বিভিন্ন কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহির্বিশ্বের সঙ্গে মানসম্মত তথ্যের আদান-প্রদান নিশ্চিত করে উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস’ পালন হয়ে আসছে। পরিসংখ্যান আইন পাসের ফলে জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (NSO) হিসেবে বিবিএস একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।  সঠিক ও সময়োপযোগী পরিসংখ্যান প্রণয়নে জনগণকে সঠিক তথ্য প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ আবশ্যক, তাই পরিসংখ্যানকে আরও জনকল্যাণমুখী ও মানুষের দোরগোড়ায় উপস্থাপনের নিমিত্তে একটি ‘জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস’ খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশে অনেক জাতীয় দিবস পালন হয়ে থাকে, কিন্তু জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস নেই। বিষয়টি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগদানের পর থেকেই আমাকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক কর্মরত থাকাকালীন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমি প্রতিবছর ২৭ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস’ হিসেবে উদযাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সদয় বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সারসংক্ষেপ প্রেরণ করি। ৮ জুন ২০২০ তারিখ সোমবার বেলা ১২টায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতিবছর ২৭ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস পালনের প্রস্তাব যুক্তিসহকারে উপস্থাপন করি। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রতিবছর ২৭ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস’ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফলশ্রুতিতে ১৯৭৪ সালের ২৬ আগস্ট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা তৎকালীন চারটি পরিসংখ্যান সংস্থাকে একীভূত করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। সঠিক, সময়োপযোগী এবং মানসম্মত পরিসংখ্যান প্রস্তুত করে দেশের পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস অফিশিয়াল পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও প্রকাশ করে থাকে। জনশুমারি, কৃষিশুমারি, অর্থনৈতিক শুমারিসহ বিভিন্ন ধরনের সার্ভে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করে থাকে বিবিএস। জাতীয় ও স্থানীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে নিয়োজিত পরিকল্পনাবিদ, নীতিনির্ধারক, সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও এবং জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রকাশের দায়িত্ব বিবিএস নিয়মিতভাবে পালন করে আসছে।

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিসংখ্যানের অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকার আগারগাঁওয়ে ২ একর ১৪ শতক জমির ওপর নির্মাণ শেষে একটি সুদৃশ্য ও দৃষ্টিনন্দন পরিসংখ্যান ভবন উদ্বোধন করেন। অতঃপর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়নের অন্যতম শক্তি ‘পরিসংখ্যান ও তথ্যপ্রযুক্তি’ বিবেচনায় ২০১২ সালে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত ও গণমুখী করার লক্ষ্যে তিনি বিস্তৃত পরিসরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন ‘পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।’ পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান তথা এর আইনগত ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩’ মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়। দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান উন্নয়নে জাতীয় কৌশলপত্র অনুমোদিত হয়। NSDS হলো পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত একটি বিস্তারিত, বাস্তবসম্মত, অংশগ্রহণমূলক, পরিবর্তনশীল ও রাষ্ট্রীয় স্বত্বাধীন একটি পরিকল্পনা দলিল। কথার কথা নয়, সঠিক পরিসংখ্যানভিত্তিক নির্ভরযোগ্য তথ্যের আলোকে আজ আমরা উন্নয়নের সূচকগুলো অর্জন করে চলেছি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDGs) অর্জনে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশকে বলা হয়ে থাকে এমডিজি বাস্তবায়নের রোল মডেল। এ সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে আগামীতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনের মাধ্যমে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ সরকার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এসডিজি (SDGs) পরীবিক্ষণে ডাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হালনাগাদ ও Disaggregated Data প্রস্তুতে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কাজ করছে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগদানের পর থেকে আমার ভাবনায় ছিল এ ভবনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করার। এ বিষয়ে আমাকে বিবিএস-এর কয়েকজন সহকর্মী সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। জাতির পিতার হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠান তথা পরিসংখ্যান ভবনের লবিতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই জাতির পিতাকে।  বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫), ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রভৃতির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিবিএস-এর বস্তুনিষ্ঠ ও সময়োচিত পরিসংখ্যান সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও বেগবান করছে। সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে- এ প্রত্যাশা করি।  সঠিক পরিসংখ্যান চর্চার আকাক্সক্ষায় শুরু হোক আগামীর স্বপ্ন।

লেখক : সাবেক সিনিয়র সচিব গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সর্বশেষ খবর