আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭) উত্তরাধিকার যুদ্ধে জয়লাভের পর ‘আলমগীর পাদশাহ গাজী’ উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর রাজত্বকালে উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটে।
উত্তর-পূর্বে আসাম এবং চট্টগ্রামে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে। উত্তরাধিকার যুদ্ধের সময় অহমীয়রা গৌহাটি দখল করে নেয়, যার জন্য উভয় পক্ষে যুদ্ধ ছিল অবশ্যম্ভাবী। শাহ সুজার স্থলাভিষিক্ত মীরজুমলা কোচবিহার অধিকার করে আসামের অভ্যন্তরে রাজধানী গড়গাঁও-এ প্রবেশ করেন। বর্ষা মৌসুম মুঘল সৈন্য বাহিনীর অনুকূল ছিল না এবং এ জন্য তাদের বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অবশেষে অহমরাজ জয়ধ্বজের সঙ্গে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটে, অসমরাজ মুঘল সম্রাটকে নিয়মিত কর দিতে সম্মত হন এবং যুদ্ধের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য হন। দাবরঙ প্রদেশের অর্ধেকাংশ মুঘল অধিকারে এলেও অহমীয়রা কামরূপ পুনর্দখল করে। আরাকান, মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখার সুবিধার্থে মীরজুমলা বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে জাহাঙ্গীরনগরে (ঢাকা) স্থানান্তর করেন। তিনি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সম্রাট শাহজাহান এবং শাহজাদা সুজা প্রদত্ত বাণিজ্য অধিকার ভোগের অনুমতি দেন। মীরজুমলার উত্তরাধিকারী শায়েস্তা খান যখন বাংলায় আসেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৩। তিনি দুবারের মেয়াদে (১৬৬৩-১৬৭৮ এবং ১৬৭৯-১৬৮৮) বাংলার সুবাহদারের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর শাসনামলের পুরো সময়ই কোচবিহার তাঁর অধীনে ছিল। শায়েস্তা খান মুঘল নৌবাহিনী পুনর্গঠন করেন। তিনি পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানের সহায়তায় আরাকানিদের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।