শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দীনের দাওয়াত রসুলের সুন্নত

এম এ মান্নান

দীনের দাওয়াত রসুলের সুন্নত

আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে, তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ প্রদান করবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবে।’ (সুরা আলে ইমরান-১১০)। দীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রে এটি হলো মুমিনদের জন্য ঐশী গাইডলাইন।

কোরআন শরিফে মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রসুলের মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ।’ অন্য আয়াতে তিনি বলেন, রসুল তোমাদের কাছে যা এনেছেন তা তোমরা আঁকড়ে ধর এবং তোমাদের যে কাজ থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।’ উপরোক্ত দুটি আয়াতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণের  তাগিদ দেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে। সুন্নতে রসুল অনুসরণ করলে মানুষ পথভ্রষ্ট হয় না। বিদায় হজে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মাঝে আমি দুটি বিষয় রেখে গেলাম। যতদিন তোমরা এ দুটি বিষয় আঁকড়ে থাকবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।’ বিষয় দুটি হলো, ‘আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসুলের সুন্নত’। রসুল (সা.)-এর সুন্নত মতো চললে আল্লাহর অশেষ রহমত পাওয়া যায়, মাগফিরাত লাভ হয়। আল্লাহ রসুল (সা.)-কে উদ্দেশ করে উম্মতদের বলতে বলেন, ‘বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। তোমাদের মাগফিরাত দান করবেন। আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সাহাবায়ে কেরাম সুন্নতে রসুল অনুসরণের গুরুত্ব বুঝেছিলেন। তাই তাঁরা সুন্নতের অনুসরণকে কর্তব্য বলে ভেবেছেন। ওমর (রা.) এক সফরে যাচ্ছিলেন। চলতে চলতে হঠাৎ এক জায়গায় এসে তিনি থামলেন। কিছুক্ষণ বসে আবার দাঁড়িয়ে গেলেন। লোকেরা প্রশ্ন করল, জনাব! আপনি এমন করলেন কেন জানতে পারি? তিনি উত্তরে বললেন, রসুল (সা.)-এর সঙ্গে একবার এই পথে আমরা সফরে যাচ্ছিলাম। তখন এই জায়গাটাতেই তিনি ইস্তেঞ্জা করেন। আমার এখন যদিও ইস্তেঞ্জার প্রয়োজন হয়নি, তবু তাঁর অনুসরণে আমি এখানে একটু বসলাম। একেই বলে রসুলের যথার্থ অনুসরণ। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর সুন্নত পালন করা খুবই জরুরি। যেমন মেহমানদারির ক্ষেত্রে রসুল (সা.)-এর সুন্নত হলো, তিন দিন সাধারণ আর এক দিন উত্তমরূপে মেহমানদারি করা। এর অতিরিক্ত যদি কেউ মেহমানদারি করে, তবে তা তার জন্য সাদাকা হবে। রসুল স্বয়ং তাঁর উম্মতদের মেহমানদারির সুন্নত দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। এক ইহুদি রসুল (সা.)-এর মেহমান হলো। রাতে সাধ্যমতো তিনি মেহমানকে আপ্যায়ন করলেন। ভোরে উঠে দেখেন মেহমান নেই। তার বিছানা মলমূত্রে নষ্ট হয়ে গেছে। তরবারিখানা পড়ে আছে। রসুল (সা.) তার বিছানা সাফ করলেন। তারপর দ্রুত তার পিছু নিলেন। অবশেষে তার কাছে গিয়ে বললেন, ভাই আপনার খুব কষ্ট হয়েছে নিশ্চয়, এই নিন আপনার তরবারি। এতে মেহমান যারপরনাই বিস্মিত হলেন। তিনি রসুল (সা.)-কে কষ্ট দিয়েছেন আর তাকে বলা হচ্ছে কষ্ট পেলেন কি না। শুধু কাজে নয়, রসুল (সা.) মুখেও ঘোষণা করেন, যে আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। রসুল (সা.)-এর উত্তম চরিত্র সম্বন্ধে কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রবান।’ রসুল (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘আমাকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে উত্তম চরিত্রের পূর্ণতাদানের জন্য।’ কীভাবে তিনি পূর্ণতা দিলেন; যেমন কাজে তেমনি কথায়ও। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘তোমার সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তার সঙ্গে তুমি সম্পর্ক স্থাপন কর। যে তোমার ওপর জুলুম করেছে তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, যে তোমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে তুমি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর।’ এক ইহুদির কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন রসুল (সা.)। ধার শোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিশোধের জন্য ইহুদি পীড়াপীড়ি শুরু করল। সে রসুল (সা.)-এর জামা ধরে টানাটানি শুরু করল। হজরত ওমর (রা.) সইতে পারলেন না। কিন্তু রসুল (সা.) তাকে কিছুই বললেন না। তার ধার পরিশোধের ব্যবস্থা করলেন। দীনের দাওয়াত প্রদানে রসুল (সা.) সীমাহীন দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি। আবু জাহেল রসুল (সা.)-এর  চাচা। রসুল (সা.)-এর সেজদার সময় তিনি গরুর ভুঁড়ি চাপিয়ে দিতেন। বাড়ির সামনে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন। এত কিছুর পরও তিনি আবু জাহেলের মঙ্গল চাইতেন। মক্কায় একবার ভীষণ ঝড়বৃষ্টি হলো। প্রচ- বর্ষণে মানুষ দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে বসে রইল। এই ঝড়ের রাতে আবু জাহেলের দুয়ারে করাঘাত হলো। কয়েকবার আওয়াজের পর আবু জাহেল দরজা খুললেন এই মনে করে যে, নিশ্চয় কোনো পথিক এ প্রবল বৃষ্টিপাতে কষ্ট পেয়ে আশ্রয় চাচ্ছে। কিন্তু দরজা খুলতেই দেখেন, রসুল (সা.) সামনে দাঁড়িয়ে। তিনি যা-তা বলে গালিগালাজ করলেন। রসুল (সা.) গালিগালাজের পরোয়া করলেন না। কারণ তিনি সত্যের দাওয়াত দিতে এসেছেন। তিনি ভাবছিলেন এ কঠিন সময়ে হয়তো পাষাণ আবু জাহেলের হৃদয়টা পাষাণ থাকবে না। মানুষের মঙ্গলের আকাক্সক্ষী ছিলেন সব সময় রসুল (সা.)। এজন্য পথহারা মানুষকে দীনের পথে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে সারা জীবন সচেষ্ট থেকেছেন। আমাদেরও উচিত দাওয়াতের ক্ষেত্রে রসুল (সা.)-কে অনুসরণ করা।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

সর্বশেষ খবর