ঢাকা আর কলকাতার মধ্যে আবারও চলচ্চিত্র বিনিময় হলো। ঢাকার ছবি ‘সম্রাট’ এর বিনিময়ে কলকাতা থেকে এলো ‘অভিমান’। নিয়ম অনুযায়ী আগে কলকাতায় মুক্তি পেল ‘সম্রাট’। মানে ২৩ ডিসেম্বর কলকাতার আশেপাশের তিনটি সিনেমাহলে মুক্তি পেয়েছে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত শাকিব খান-অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘সম্রাট’ ছবিটি। এ ছবির বিনিময়ে আমদানি করা কলকাতার নির্মাতা রাজ চক্রবর্তী নির্মিত জিৎ, সায়ন্তিকা ও শুভশ্রী অভিনীত ‘অভিমান’ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩০ ডিসেম্বর। ভারতীয় এই ছবিটি সেখানে মুক্তি পায় চলতি বছরের ৬ অক্টোবর। আর এখানকার ‘সম্রাট’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল গত ঈদে। এদিকে ছবি বিনিময়ে নীতিমালা সহজ করতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে আমদানিকারকরা।
বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ছবি বিনিময়ের ক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশের ছবি ভারতে মুক্তি পেতে হবে। সেখানে মুক্তির পর সেন্সর সার্টিফিকেট ও সিনেমাহলে প্রদর্শনের কাগজপত্রসহ আবেদন করার পরই বাংলাদেশি ছবির বিপরীতে আনা ভারতীয় ছবিটি এখানে সেন্সর করা ও মুক্তির অনুমতি মিলবে। এই নিয়মের আওতায় ‘সম্রাট’ ছবিটি ২৩ ডিসেম্বর ভারতে মুক্তি পাওয়ায় এখন ‘অভিমান’ এখানে মুক্তি পাচ্ছে। আগে এ ধরনের নিয়ম না থাকায় বাংলাদেশের ছবি ভারতে রপ্তানির পর তা সেখানে মুক্তি পায়নি। অথচ বিপরীতে আনা ভারতীয় ছবি ঠিকই এখানে মুক্তি পেয়েছে। ফলে ব্যাহত হয়েছে ছবি বিনিময়ের মূল লক্ষ্য। এই বিনিময়ের উদ্দেশ্য হলো দুদেশে যেহেতু সিনেমাহল কমে গেছে তাই এক দেশের ছবির বাজার অন্য দেশে সম্প্রসারিত করা এবং বাংলাদেশের ছবির স্বল্পতা পূরণ করে স্থানীয় সিনেমাহলকে বন্ধের হাত থেকে রক্ষা করা। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ দেশের ছবি যদি ভারতে মুক্তি না পায় তাহলে বাংলাদেশের নির্মাতারা কোনোভাবেই লাভবান হবে না। এদিকে নতুন নিয়মের কারণে কলকাতায় আগে ঢাকার ছবি মুক্তি পেলেও সেখানে তা অনেকটা যেনতেনভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। জানা গেছে কলকাতার প্রদর্শকরা ঢাকার ছবি সেখানে প্রদর্শনে আগ্রহ দেখায় না। বিনিময় নীতিমালার কারণে বাংলাদেশে তাদের ছবি চালাতে হবে এজন্যই বাধ্য হয়ে কোনোভাবে বাংলাদেশের ছবি ভারতে প্রদর্শন করা হয়। তবে একটি সূত্র বলছে এর আরেকটি কারণ হলো আমাদের ছবির মান আর তাদের ছবির মানের ক্ষেত্রে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। এই কারণে এ দেশের ছবি সে দেশের দর্শক দেখবে না বলেই তাতে এই অনাগ্রহ। ২০১৩ সালে বিনিময়ের আওতায় বাংলাদেশের ৮টি ছবি সেখানে পাঠানো হলেও এর মধ্যে একটি মাত্র ছবি ‘মা আমার স্বর্গ’ ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে কলকাতার শুধুমাত্র ‘সোসাইটি’ সিনেমাহলে প্রদর্শন করা হয়। ছবিটির রপ্তানিকারক উপহার সিনেমা ও খান ব্রাদার্সের কর্ণধার চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বললেন ভিন্ন কথা। তার কথায় ‘মানের প্রশ্ন তো আছেই একই সঙ্গে তখন রপ্তানি করা ছবিগুলো এনালগ পদ্ধতির হওয়ায় তা সেখানে প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি। অনেক আগেই কলকাতার সিনেমাহলগুলো ডিজিটাল হয়ে গেছে। শুধু সরকারি আদেশ মানতে রপ্তানি করা ছবির মধ্যে ‘মা আমার স্বর্গ’ ছবিটি সোসাইটি সিনেমাহলটি ভাড়া নিয়ে আমি নিজে প্রদর্শন করেছি। এই হলটিতে তখনো এনালগ প্রজেক্টর ছিল।’
২০১৩ সালে রপ্তানিকৃত খান ব্রাদার্সের ৪ ছবির মধ্যে সেখানে শুধু ‘মা আমার স্বর্গ’ প্রদর্শন হলেও এর বিনিময়ে আমদানি করা ভারতের যুদ্ধশিশু, খোকাবাবু, খোকা ৪২০ ও বেপরোয়া মানে ৪টি ছবিই প্রদর্শন হয়েছে।‘সম্রাট’ ছবিটি কলকাতা শহরে নয়, মুক্তি দেওয়া হয়েছে এই শহরের আশেপাশে মফস্বলের তিনটি সিনেমা হলে। যে সব সিনেমাহলে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয় সেগুলো হল—রূপশ্রী (হুগলী), কালিগঞ্জ টকিজ (কালিগঞ্জ) এবং মোহন (হরিপাল)। এদিকে কলকাতার ছবি ‘অভিমান’ মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক সিনেমাহলে। প্রদর্শক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় ছবির ঘাটতি পূরণ করতে ও আমাদের সিনেমাহল বাঁচাতে ভারতের ছবি আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু একটি কারণে এই লক্ষ্য ব্যর্থ হতে চলেছে। নিয়ম অনুযায়ী এ দেশের ছবি সেখানে প্রদর্শনের পর এর সেন্সর সার্টিফিকেট ও সিনেমাহলে কাগজপত্রসহ সরকারের কাছে আমদানির আবেদন করতে হবে। সেখানকার সেন্সর সার্টিফিকেট ও সিনেমাহলের কাগজপত্র পেতে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
এসময়ে আমদানিকৃত ছবিটি সেখানে মুক্তি পেয়ে তা পাইরেসিও হয়ে যায়। পাইরেসি হওয়ার পর ভারতীয় ছবিটির সেল এখানে কমে যায় ও ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ে আমদানিকারক।
তাই সরকারের কাছে আবেদনের সময় সেন্সর সার্টিফিকেট জমার পরিবর্তে সেন্সর বোর্ডে ছবিটি জমা দেওয়ার সময় সার্টিফিকেটটি জমা দেওয়ার বিধান করলে আগে সরকারি অনুমতি পাওয়ায় আর ক্ষতির মুখে পড়বে না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাই অবিলম্বে নিয়মটি চালু করে বিনিময়ের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’