রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → কিরণ চন্দ্র রায়

ইউটিউব শিল্পী তৈরি করতে পারে না

ইউটিউব শিল্পী তৈরি করতে পারে না

বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়। বর্তমানে তিনি ব্যস্ত টিভি শো নিয়ে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছেন এ জনপ্রিয় গানের শিল্পী। গান ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- আলী আফতাব

 

বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই?

এখন আমি বেশি ব্যস্ত আছি টিভি শো নিয়ে। এরই মধ্যে টিভিতে কিছু গানের শো করেছি। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমির কিছু শিক্ষামূলক কাজ করছি। শিল্পকলার এ কাজটির মধ্য দিয়ে নতুন শিল্পীরা আমাদের লোকসংগীত সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।

 

নতুন কোনো গান করছেন?

নতুন গান করে আর কী হবে। মাঝে মধ্যে মনে হয়, ইউটিউবের এ যুগে আমরা অনেকটা বেমানান। এখনকার শিল্পীরা ইউটিউব নিয়ে এতো বেশি মাতামাতি করছে, যা আমাদের শিল্পী সমাজের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ইউটিউব কোনো দিন শিল্পী তৈরি করতে পারে না।

 

এখন তো শিল্পীরা গান থেকে মিউজিক ভিডিওর প্রতি বেশি মনোযোগী। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?

প্রথমতো গান হচ্ছে শ্রবণের বিষয়। গান যদি শুনতে ভালো না লাগে, এর মধ্যে যতই মিউজিক ভিডিও দেওয়া হোক, তা দর্শক ভালোভাবে গ্রহণ করবে না। আর এ কারণে আজকাল গানগুলো দর্শক-শ্রোতারা বেশি মনে রাখে না।

 

নতুনরা কেমন গান করছে?

নতুনরা এখন ভালো গান করছে। কিন্তু তাদের আরও গানের চর্চা করতে হবে। গানটা হচ্ছে গুরুমুখী বিদ্যা। শুধু ইউটিউব দেখে গান শেখা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষক। আর একটি বড় বিষয় হচ্ছে গানের চর্চা। আমরা এখনো প্রায় প্রতিদিন গানের চর্চা করি।

 

লোকগানে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারে আপনার অভিমত কী?

এটাও দৈনদশার পরিচয়। আমরা যদি আমাদের বাংলা গানে শাশ্বত যন্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে বিদেশি যন্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের উচিত লোকজ যন্ত্র ব্যবহার করে নতুনদের এ গানে উৎসাহ দেওয়া। সংস্কৃতির জানালা খোলা। কিন্তু দেখতে হবে কতটুকু গ্রহণ করলে আমার স্বকীরতা নষ্ট হবে না। সেটুকু মাথায় রেখে অগ্রসর হতে হবে। লালনের গানের সুর-বাণী অক্ষত রেখে বুঝে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি পরিমিতি বোধ না থাকে তাহলে সে গানের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হবে। গানের ক্ষেত্রে দেখতে হবে আমাদের সংস্কৃতি যেন নষ্ট না হয়।

 

এ গানের জন্য একটা সময় আপনি চাকরিও ছেড়েছেন।

হ্যাঁ, গান গাওয়া আমার নেশা। সংগীতের সুরের মধ্যে আমার দেহ-আত্মা মিশে আছে। শিক্ষকতা ও গান-দুটো একসঙ্গে চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। তারপরও দীর্ঘদিন পরম ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দুটি কাজ চালিয়ে গেছি। তবে বয়সের কারণে আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। তাই একনিষ্ঠভাবে সংগীত সাধনার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এখন যত দিন বাঁচব, ততদিন গান নিয়েই ব্যস্ত থাকব। আমি আমাদের লোকসংগীতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই।

 

এ দেশের বাউল সম্প্রদায় নিয়ে কিছু বলুন?

আমাদের দেশে যখনই কোনো দুর্যোগ আসে তা হোক প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক। সর্ব প্রথম আঘাতটা এসে লাগে সংস্কৃতির ওপর। সংস্কৃতি না থাকলে একটি জাতির আর কী বাকি থাকে। সংস্কৃতিই হচ্ছে একটি জাতির পরিচয়ের মূল জায়গা বা সম্পদ। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বাউলদের অবস্থা মোটেও ভালো নয়।

সর্বশেষ খবর