বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → তিমির নন্দী

স্বাধীন দেশে বসবাস করছি এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়

স্বাধীন দেশে বসবাস করছি এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়

গর্বিত কণ্ঠযোদ্ধা তিমির নন্দী। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে শব্দসৈনিক হিসেবে যুক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধের গতিকে করেছেন ত্বরান্বিত। এ দেশের আধুনিক গানেও রয়েছে তার অসামান্য অবদান। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন? শুরু হয়েছে মহান বিজয়ের মাস। কোন কোন চ্যানেল-রেডিওতে অনুষ্ঠান করবেন?

জি, ভালো আছি। বিজয়ের মাস এলেই তো একটু ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সে হিসেবে গতকাল রেডিওতে বিজয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং ছিল। এটি গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেছি আমি। আজ সালমা আকবরের উপস্থাপনায় বিটিভিতে ‘প্রাণে মনে অন্তরে’ অনুষ্ঠানে থাকব। ৫ তারিখে জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে একটি অনুষ্ঠান। একই দিন রাত ১১টায় ‘তোমায় গান শোনাব’ গান করব মাছরাঙা টিভিতে। ১০ তারিখে অন্য একটা অনুষ্ঠান রয়েছে (বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়)। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় এনটিভিতে লাইভ অনুষ্ঠান ও একটি রেকর্ডিং রয়েছে। আর ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে থাকব। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে বাংলাদেশ বেতারের সরাসরি অনুষ্ঠান ‘জলসা’য় গাইব। এছাড়া আরও বেশকিছু রেকর্ডিং, লাইভ অনুষ্ঠান ও কিছু শো করার কথা আছে।

 

বিজয় দিবসটি কীভাবে অনুভব করেন?

বিজয় দিবস আমার কাছে বিশাল ব্যাপার, শ্রেষ্ঠতম অর্জন। নতুন প্রজন্ম তো যুদ্ধ, নৃশংসতা দেখেনি। তাই তাদের কাছে বিজয় দিবসের অনুভূতি কিছুটা ভোঁতা। বিজয় দিবসে আমাদের বড় অর্জন হচ্ছে একটি স্বাধীন মানচিত্র, একটি স্বাধীন পতাকা।

 

 

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই।

তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে, সেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব ছিল। মানুষকে উজ্জীবিত করার জন্য কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে গান করতাম। গান গাইতে গরুর গাড়িতে করে কুড়িগ্রাম থেকে বগুড়া গিয়েছিলাম, পাক হানাদাররা রংপুরে এসে পড়েছিল বলে। গ্রুপে সব সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন। কয়েকজন মিলে আসাম গেলাম, সেখান থেকে কলকাতা। ফিরে এসে মাকে বোঝালাম। মা বললেন, ঠিক আছে যুদ্ধ করবি, তাহলে কণ্ঠ দিয়ে কর! আমি অবাক হলাম, কণ্ঠ দিয়ে আবার যুদ্ধ করা যায় নাকি! পরে বুঝলাম, অবশ্যই যায়। একসময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যাওয়ার সৌভাগ্য হলো। সেখানে অনেক পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা। শরণার্থী শিল্পীগোষ্ঠীর হয়ে গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করতাম।

 

সংগীত জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন। ক্যারিয়ারের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দীর্ঘ দশ বছর পর নতুন অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন গত ১১ অক্টোবর...

হ্যাঁ, এ বছরই আমার সংগীত জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৯ সালে সংগীত জীবনের ৪০ বছর পূর্তিতে সর্বশেষ অ্যালবামটি প্রকাশ করেছিলাম। এরপর দীর্ঘ দশ বছর পর নতুন অ্যালবাম ‘মেঘলা দু’চোখ’ প্রকাশ করেছি। জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। অ্যালবামে মৌলিক-আধুনিক ১৪টি গান রয়েছে। একটি বাদে সবকটি গানের সুর আমার নিজের।

 

কেন আপনাকে বিশেষ দিনগুলোতেই শুধু দেখা যায়?

আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে তো সারা বছরই ব্যস্ত থাকার কথা! কিন্তু আমাকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে ভেবে নিয়ে শুধু মার্চ, ডিসেম্বর আর শোক দিবসে ডাকা হয়। আমার প্রশ্ন, কেন আমাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট সময় স্মরণ করা হয়? টিভি, রেডিও বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে সারা বছর কেন স্মরণ করা হয় না? এই নির্দিষ্ট সময়ই যেন আমাদের মতো শিল্পীদের চাহিদা বাড়ে!

 

দেশকে কেমন দেখতে চেয়েছিলেন?

আমার কাছে তো একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করছি এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। কিন্তু এ প্রজন্মের অনেক তরুণই আসলে বুঝতে পারছে না মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস কোনটা! তবে এখনকার সরকারের সময় আমরা সেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর