বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
গঠিত হচ্ছে চলচ্চিত্র ফেডারেশন

চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের কাজ কী?

আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের কাজ কী?

চলচ্চিত্র ফেডারেশন গঠনে সমিতির কর্মকর্তাদের বৈঠক

‘চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে এবার চলচ্চিত্রের ১৮টি সমিতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠন করবে ফিল্ম ফেডারেশন। আগামী এক মাসের মধ্যে ফেডারেশন গঠনের সব কার্যক্রম চূড়ান্ত হবে।  চলচ্চিত্রের মন্দা, সিনেমা হলের অচল অবস্থা, দর্শকশূন্যতা, অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলী সংকট নিরসনে কাজ শুরু করতে চাই আমরা।’ গত  শনিবার এফডিসিতে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অফিসে ১৮ সংগঠনের নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। জানা গেছে, এই ফেডারেশনের সদস্য হবেন চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাঁদের মধ্য থেকে দুজন প্রধান দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট হতে পারেনি চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। কারণ এ বৈঠকে বরাবরের মতো প্রদর্শক সমিতিকে উপেক্ষিত রাখা হয়েছে। মানে এর আগে ১৮ সংগঠনের গঠিত ‘চলচ্চিত্র পরিবার’ ও ‘চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি’তেও রাখা হয়নি প্রদর্শক সমিতিকে। ফলে প্রদর্শক সমিতি ও পরিবার বা স্বার্থ সংরক্ষণ সমিতি চলচ্চিত্রের নানা ইস্যুতে বারবার মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চলচ্চিত্রকারদের কথা হলো- সব সংগঠনের একতায় যে কোনো নতুন সংগঠন গঠিত হলেই এর লক্ষ্য ফলপ্রসূ হতে পারে। নতুবা আবারও সব উদ্যোগ ভেস্তে যাবে। এ বিষয়ে চলচ্চিত্র সমিতিগুলোর নেতাদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

 

কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না

মোহাম্মদ হোসেন

[প্রযোজক সমিতির সাবেক নেতা]

আগে যারা চলচ্চিত্র পরিবার ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি গঠন করেছিল তারা আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। পুরোপুরি সফল হতে না পারার মূল কারণ ছিল নিজেদের মধ্যে বিভক্তি। এখন যদি সব সমিতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্যিকার অর্থে কার্যকর একটি ফেডারেশন করতে পারে তাহলেই কেবল চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সেই ফেডারেশন যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। এ ছাড়া চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচানোর আর কোনো পথ বা সুযোগ নেই। কারণ চলচ্চিত্র দীর্ঘদিন ধরে মহাক্রান্তিকাল পার করছে। দুঃসময়ে আছে। আগে পরিবার ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটিতে প্রদর্শক সমিতিকে রাখা হয়নি। এটি মোটেও ঠিক হয়নি। কারণ চলচ্চিত্রের কোনো অংশকে বাদ দিয়ে কিছু করলে তাতে ঐক্যের অভাবে সফলতা আসবে না। এবার যেন কোনো সমিতিকে বাদ দেওয়া না হয়। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করলেই প্রকৃত লক্ষ্য মানে চলচ্চিত্রের উন্নয়নের উদ্যোগ সফল হবে।

এটি পুরনো হীন মানসিকতা

সুদীপ্ত কুমার দাস [কর্মকর্তা, প্রদর্শক সমিতি]

নিকট অতীতেও প্রযোজক, পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী সমিতিসহ কথিত ১৮ সংগঠনের যে জোট সেটা প্রথম আমরা দেখতে পাই মাসুদ পারভেজের নেতৃত্বে। পরবর্তীতে আবারও চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি এবং চলচ্চিত্র পরিবারের কর্মকান্ড আমরা দেখেছি। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় ২০১০ সালে যখন আমদানি নীতিতে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় তখন তারানা হালিমের নেতৃত্বে তারা আন্দোলন করে হুমকি দিল এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদবির করে এই সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করাল। পরবর্তীতে এই স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি ও পরিবার যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধেও আন্দোলন করল। সিনেমা হল থেকে ভারতীয় ছবির পোস্টার ছিঁড়ে এনে এফডিসির ভিতরে আগুন জ্বালাল। আমিসহ প্রদর্শক সমিতির কয়েকজন নেতার কার্টুন এঁকে তার মধ্যে থুথু দেওয়ার কথাও বলা হয়। তখনো আমরা বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলাম আপনারা একতরফা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসুন। গত ২ বছরে প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির সঙ্গে ৩/৪টি যৌথ সভা করেছি। এখন তারা ‘সিনেমা হল বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে’- এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, আমরা তাদের স্বাগত জানিয়েছি। বিলম্বে হলেও তাদের বোধদয়ে আশার আলো দেখেছি। কিন্তু সর্বশেষ তাদের কথিত ফেডারেশন গঠনের উদ্যোগের সঙ্গে আমাদের যুক্ত না করাটা সেই পুরনো হীন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী যে কয়টি রাষ্ট্রে ফিল্ম ফেডারেশন রয়েছে তাতে প্রদর্শক, পরিচালক, শিল্পীসহ সব সংগঠনেরই সদস্য ভুক্ত আছে। যে কারণে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। সমগ্র ভারতে ১৪ হাজার সিনেমা হল ছিল। তার মধ্যে ২ হাজারের কিছু বেশি সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। এখন ১০ হাজার ৫০০ এর মতো সিংগেল সিনেমা হল এবং দেড় হাজারের মতো মাল্টিপ্লেক্স স্ক্রিন চালু আছে। আমাদের মতো তাদের এত বড় ধস নামেনি। এর বড় কারণ হলো ঐক্যবদ্ধভাবে তারা যে কোনো সমস্যার মোকাবিলা করে। কিন্তু আমাদের সেই ১৯৮৩ সালের জানুয়ারিতে এফডিসির উদ্যোগে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ২/৩টি সাব কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। যেগুলো বেশ কার্যকারিতা দেখায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০০২ সালে এসে প্রযোজক সমিতি একতরফাভাবে এগুলো ভেঙে দেয়। এই দুর্ভাগ্যজনক অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা চাইছিলাম করোনার আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য চলচ্চিত্র শিল্প ও ব্যবসা অঙ্গনে একটি কার্যকর ঐক্য গড়ে উঠবে। কিন্তু আমাদের সেই আশা সম্ভবত দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আমি সচেতন এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে আহ্বান জানাব, পুরনো মানসিকতা পরিহার করে সময়ের প্রয়োজনে সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেবেন।

 

চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ

সোহানুর রহমান সোহান

[সভাপতি, পরিচালক সমিতি]

চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়। সিনেমা হল কমে গেছে, ভালো ছবি নির্মিত হচ্ছে না, বাজেট নেই, সব শাখায় দক্ষ লোক নেই। সবকিছু মিলিয়েই আমাদের কাছে মনে হয়েছে, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ফেডারেশন না করলেই নয়। কীভাবে চলচ্চিত্রকে ঘুরে দাঁড় করানো যায়, তার শতভাগ চেষ্টাই আমরা করব এই ফেডারেশন দিয়ে। ইন্ডাস্ট্রির লোক ও বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ এনে চলচ্চিত্রের উন্নয়নের কাজ কীভাবে করা যায়, সেগুলো নিয়ে আগে আলোচনা করব। আমাদের কোথায় কী সমস্যা, সেগুলো উঠে আসবে। চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচাতে হবে। আর আমি পরিচালক সমিতির সভাপতি হিসেবে প্রদর্শক সমিতিকে ফেডারেশনে যুক্ত করার পক্ষে। কারণ প্রদর্শক হলো চলচ্চিত্রের অন্যতম একটি অংশ। তাদের বাদ দিয়ে আর কোনো সংগঠন নয়।

 

প্রদর্শকদেরও যুক্ত করা হবে

জায়েদ খান [কর্মকর্তা, শিল্পী সমিতি]

সমিতিগুলো সবসময় বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করে। অনেক দিন থেকেই মনে হয়েছে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সব সমিতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা দরকার। চলচ্চিত্রের বর্তমান যে ভঙ্গুর অবস্থা তাতে একত্রিত হয়ে কাজ না করলে এই শিল্পের কোনো উন্নয়ন কখনই হবে না। আগে সিনিয়র অভিনেতা ফারুক ভাইয়ের নেতৃত্বে চলচ্চিত্র পরিবারে অনেক ইতিবাচক কাজ হয়েছে। পরে তিনি এমপি ও অসুস্থ হয়ে পড়লে কাজ আর এগোয়নি। ফারুক ভাই ও আরেক সিনিয়র অভিনেতা আলমগীর ভাইও চেয়েছিলেন চলচ্চিত্র ফেডারেশন গঠিত হোক। এই ফেডারেশনে প্রদর্শক সমিতিকেও যুক্ত করা হবে। আগামী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  সিনেমা হল মালিকরা চলচ্চিত্রের মূল এবং বড় একটি অংশ। আমরা তাদের এবং চলচ্চিত্র  সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়েই এই শিল্পের উন্নয়নে  একসঙ্গে পথ চলতে চাই।

সর্বশেষ খবর