শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
ইন্টার ভিউ । শাকিব খান

আমার ঠিকানা কিন্তু বাংলাদেশ

ঢাকাই সিনেমার শীর্ষনায়ক শাকিব খান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানে সম্প্রতি বঙ্গ সম্মেলনের শুভেচ্ছাদূত নিযুক্ত হওয়াসহ নানা বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

আমার ঠিকানা কিন্তু বাংলাদেশ

বঙ্গদূত হলেন, প্রতিক্রিয়া কেমন?

বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বঙ্গ সম্মেলন। এর আগে কলকাতা থেকে অনেকেই এ সম্মেলনের শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে এই প্রথম আমি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলাম। আগামী ১ থেকে ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে এ সম্মেলনের আসর বসছে। উৎসবটি নর্থ আমেরিকা বেঙ্গল কনফারেন্স-এনএবিসি নামেও পরিচিত।

এই সম্মেলনে একজন বাংলাদেশি হিসেবে অংশ নিতে যাচ্ছি বলে দেশকে নিয়ে গর্ববোধ করছি। এই সম্মান আমার বাংলাদেশের।

 

বঙ্গ সম্মেলন সম্পর্কে কিছু বলুন-

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ৫২ বছর আগে আমেরিকায় প্রতিষ্ঠা করেন কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-সিএবি বা বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ। আর এই সংগঠনের অধীনে ৪২ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহির্বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ এই বাংলা ভাষাভাষী সম্মেলন। প্রতি বছর বঙ্গ সম্মেলনে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের ভিড় হয়। এবার বলিউড, ঢালিউড ও টলিউডের একঝাঁক তারকা উপস্থিত থাকবেন। বাংলা সংগীতের সবকটি শাখা নিয়ে আলাদা জমকালো আয়োজন থাকবে। সাহিত্য আসর, ফ্যাশন শো, নাটক, রিয়েলিটি শো-সহ অনুষ্ঠিত হবে চলচ্চিত্র উৎসব। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০০ শিল্পীকে এবারের উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ বছর লাস ভেগাসের এই আয়োজনে কয়েকটি পর্বে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হবে। প্রতি বছর উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে এই আসর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

 

এতে কীভাবে যুক্ত হলেন?

এর আগে কয়েকবার বঙ্গ সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব পেলেও সময়-সুযোগ না হওয়ায় আসা হয়নি। এবার লাস ভেগাসের বঙ্গ সম্মেলনে আমাকে বাংলাদেশ আউট রিচ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করায় আমি আনন্দিত। আমি আশা করি, জুলাই মাসে আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা বঙ্গ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হতে যাচ্ছেন?

আসলে বিষয়টি ঠিক এমন নয়, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ডের জন্য গত কভিডের আগেই প্রসেসিং শুরু করেছিলাম। গ্রান্টও হয়ে আছে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী কভিড শুরু হলে এই প্রসেস নিয়ে আর এগোতে পারিনি। এবার যুক্তরাষ্ট্রে অন্য কাজে আসার পর আমার আইনজীবী বললেন, বিষয়টি নিয়ে এবার নতুন করে এগোনো দরকার। তাঁর কথায় কোনো দেশের একজন হাই প্রোফাইলের অধিকারী ভিআইপি সহজে এই সুযোগ পেতে পারেন। আমার প্রোফাইল তিনি স্টেট গভর্নরের কাছে জমা দিয়েছেন। আমার কথা হচ্ছে আমাকে উইথ দ্য রেসপেক্ট একটি সুযোগ যখন তারা দিচ্ছে তখন তা গ্রহণ করব না কেন? আসলে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পেলেও এখানে আমার স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোনো ইচ্ছা নেই। আমার ঠিকানা কিন্তু বাংলাদেশ। নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশেই কাজ করতে চাই। যেমনটা করছেন অন্যান্য দেশের সেলিব্রেটিরা। যেমন বলিউডের শাহরুখ খানের কথাই বলি। তিনি দুবাইয়ে বাড়ি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড থাকাসহ আরও কয়েকটি দেশে তাঁর নাগরিকত্ব রয়েছে। কিন্তু তিনি তো ভারতেই থাকেন আর কাজ করেন। বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমারসহ আরও অনেকে ঠিক এভাবেই লাইফ লিড করছেন। এটি একটি দেশের জন্য খুবই সম্মানের বিষয়। এখানে গ্রিন কার্ড পেলে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করা যাবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সেলিব্রেটিরা এই সম্মান গ্রহণ করতে পারলে বাংলাদেশি হিসেবে আমরা কেন পারব না। এর আগে আমাদের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। তাঁর সন্তানরাও এখানে সম্মানের সঙ্গে কাজ আর বসবাস করছেন। তাঁর ছোট মেয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির লেকচারার। অন্যদিকে, অভিনেত্রী ববিতা ম্যাডামের পুত্র অনিকও কানাডার বিখ্যাত ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষ করে ওই বিদ্যাপীঠেই এখন শিক্ষকতা করছেন। এগুলো আসলে নিজ দেশের জন্যই সম্মান বয়ে আনা। ভবিষ্যতে আমার সন্তানরাও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস, পড়াশোনা আর কর্মজীবন শুরু করবে। আমি আসলে আমার জন্য নয়, আমার সন্তানের জন্যই ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।

 

শুনেছি আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য মুভি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন-

ঠিকই শুনেছেন। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটের জন্য একটি ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছি। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ফ্লোরিডা ও নিউইয়র্কের এলএ-তে  বড় আয়োজনে এর মহরত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একটি পরিবার, দেশ ও সমাজের নানা চিত্র নিয়ে ছবির গল্প গড়ে উঠেছে। গল্প লিখেছেন ফেরারী ফরহাদ আর ছবিটি পরিচালনা করবেন হিমেল আশরাফ। ছবিটির শুটিং বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে হবে।

 

দেশে ফিরছেন কখন?

মার্চের শেষ সপ্তাহেই দেশে ফিরব। দেশে কিছু ছবির কাজের প্রস্তাব আছে সেগুলো করব। নিজের প্রযোজিত ‘প্রিয়তমা’ ছবির কাজও শুরু করব। একই সঙ্গে কলকাতার কয়েকটি ছবির ব্যাপারে সেখানকার প্রযোজনা সংস্থা যোগাযোগ করেছে। ওই বিষয়ে কলকাতাও যেতে হবে। সবমিলিয়ে জুলাইয়ে বঙ্গ সম্মেলন শুরুর আগেই সব ছবির কাজ শেষ  করতে হবে আমাকে। আসলে আমার দেশের চলচ্চিত্র জগৎকে আমি আরও সমৃদ্ধ করতে নিরলস কাজ করে যেতে চাই।

 

 

 

সর্বশেষ খবর