বছর পাঁচেক বয়সী ক্যারিয়ারে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছেন গায়িকা ন্যান্সি। একইভাবে হয়েছেন তুমুল বিতর্কিতও। ক্যারিয়ারের মধ্যভাগ থেকেই 'বিতর্ক' শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে। প্রথম বিতর্ক নিজের খামখেয়ালি আচরণ এবং লাগামহীন কথাবার্তার কারণে। তাই সংগীতপাড়ার বেশির ভাগ মানুষই ন্যান্সিকে 'অতি মেজাজি' বলে ডাকেন। তবে এই শিল্পী বেশি বিতর্কে জড়িয়েছেন নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, একাধিক বিয়ে এবং কথিত আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে। তার বিতর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-
খামখেয়ালি আচরণ-লাগামহীন মুখ: ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ন্যান্সি সংগীতপাড়ায় সমালোচিত হয়েছেন নিজের খামখেয়ালি আচরণের কারণে। তাই তাকে 'অভদ্র এবং বেয়াদব' হিসেবেই বেশির ভাগ সংগীতকর্মী মনে করেন। পাশাপাশি ন্যান্সির কথাবার্তায় কখনোই লাগাম ছিল না। সবাই তাকে নিয়ে ভীত থাকত কখন কাকে কী বলে বসে! নিজের সম্মান রক্ষা করতে তাই কখনোই কেউ তার সঙ্গে কথা বাড়াত না। এই 'ঝগড়াটে' স্বভাবের কারণেই তাকে ভিতরে ভিতরে সবাই এড়িয়ে চলত। সর্বশেষ ন্যান্সি 'কথিত আত্মহত্যা'র চেষ্টার পর সুস্থ হয়েও সবার সঙ্গে ঝগড়ায় জড়ান। বিশেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি যথেষ্ট বাজে ব্যবহার করেন। ব্যাপারটি গালাগালি পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। তাকে কেউ ফোন করলেই বাজে ব্যবহারের শিকার হতেন।
'অতি মেজাজি' ন্যান্সি!: সংগীতপাড়ায় ন্যান্সিকে সবাই 'মেজাজি' হিসেবে ডাকে। সবাই গায়কীর যেমন প্রশংসা করেন তেমনি কারণ ছাড়া হঠাৎ ক্ষেপে যাওয়াকে সবাই সমালোচনা করেন। ন্যান্সির সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তার এই 'ঠাণ্ডা-গরম মেজাজ'র কারণে নাস্তানাবুদ হননি এমন কর্মী কম আছেন। পারিশ্রমিক নিয়েও তিনি নানা বিতর্কিত ঘটনা জন্ম দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
একাধিক বিয়ে: একাধিক বিয়ে করে পর্যন্ত সমালোচিত হয়েছিলেন ন্যান্সি। কারণ, প্রথম স্বামী ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভের সঙ্গে প্রেমের বিয়ে ছিল তার। বিয়ের পর পরিচিত গায়িকা হন ন্যান্সি। তখন স্বামীর সঙ্গে মানসিক দূরত্ব হতে থাকে ন্যান্সির। কারণ, ন্যান্সি সদ্য জনপ্রিয় হওয়ায় ছিলেন রঙিন স্বপ্নে, আর তার স্বামী তাকে রাখতে চেয়েছিলেন স্বাভাবিক। এ থেকেই দ্বন্দ্ব শুরু। বিভিন্ন সূত্রে এটাও জানা যায়, ন্যান্সির কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তার প্রথম স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে স্বামীকে ডিভোর্স দেন ন্যান্সি। ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাজারে এ কথাও প্রচলিত আছে, ন্যান্সি যাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন সে ছিল প্রথম স্বামীর বন্ধু। সেখান থেকেই পরিচয়।
স্বামীর সামাজিক মর্যাদা: ন্যান্সির দ্বিতীয় স্বামী নাজিমুদ্দিন জায়েদ পেশায় ময়মনসিংহ পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী। প্রেমের বিয়ে তাদের। জনপ্রিয় একজন শিল্পী এমন একজন মানুষকে বিয়ে করায় শুরুতে প্রশংসিত হন ন্যান্সি। কিন্তু পরবর্তীতে আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবারের কাছে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ায় ন্যান্সির মনে স্বামীর সামাজিক মর্যাদা নিয়ে হতাশা জন্মায়। বিষয়টিকে তিনি শান্তভাবে সমাধান না করে উল্টো নিজের স্বভাব অনুযায়ী উত্তেজিত হয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। এ নিয়ে তার নিজের শহরে নানা সমালোচনা রয়েছে।
রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ: ন্যান্সির মধ্যে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আছে বলে মনে করে বিভিন্ন মহল। বর্তমান সরকারের সমালোচনা এবং বিএনপির প্রশংসা করে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তখন তিনি প্রচণ্ড সমালোচিত হয়েছেন। এরপর তিনি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন, সরকারবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ায় অঘোষিতভাবে তার সব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আরও পরিষ্কার হয়। কারণ, বিএনপি সমর্থক অনেক শিল্পী আছেন। কারও কোনো সমস্যা না হয়ে শুধু কি তার সমস্যা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন সবার। সংগীতপাড়ায় গুঞ্জন রয়েছে- স্বামীর বুদ্ধিতে ন্যান্সি রাজনীতিতে জড়াতে চাচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ মনে করছেন, ন্যান্সির মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নেই। রয়েছে বোকামি।
ঘুমের বড়ি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য: সুস্থ হয়ে ন্যান্সি বলছেন, তিনি আত্মহত্যা করতে চাননি। ঘুমানোর জন্য তিনি বড়ি খেয়েছেন। একেক গণমাধ্যমে ঘুমের ওষুধের সংখ্যা একেকটা বলছেন। এ নিয়ে তিনি বর্তমানে তুখোড় বিতর্কে রয়েছেন। প্রথমে যে ডাক্তার বলেছিলেন তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে প্রচুর ঘুমের বড়ি খেয়েছেন, সেই ডাক্তার মিথ্যা বলেছেন বলে ন্যান্সি দাবি করেন। সাংবাদিকরাও মিথ্যা লিখেছেন বলে তার ধারণা। কিন্তু সবার প্রশ্ন- ঘুমানোর জন্য অল্প কয়েকটা বড়ি খেলে কেন তাকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে?