কেন নজরুলকে জন্ম-মৃত্যুতে মনে করতে হবে : শাহীন সামাদ
৭০ থেকে ৮০ সালে আমাদের সামনে মিডিয়া বলতে ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের নানা অনুষ্ঠান প্রচার হতো প্রায় বছরজুড়ে। এ ছাড়া ঢাকা ও এর আশপাশে প্রায় সারা বছরই নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের নানা অনুষ্ঠানে হতো। কিন্তু এখন টিভি চ্যানেল ও রেডিও সংখ্যা বেড়েছে; কিন্তু সেই অর্থে ওই ধরনের অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়েনি। এখন আমাদের ডাক আসে নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের জন্ম বা প্রয়াণ দিবসে। আমি এ বিষয়টি মানতে পারি না। কেন আমাদের নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথকে মনে করতে হবে তাদের জন্ম কিংবা প্রয়াণ দিবসে। তাদের সৃষ্টি কি এখনই ঠুনকো। বছরজুড়ে টিভিতে গানের অনুষ্ঠান করেন সব ধরনের শিল্পী আর নজরুল ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের ডাক আসে তাদের জন্ম বা প্রয়াণ দিবসে। কেন? এই নজরুলচর্চাকে বাড়াতে হলে দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। একটি হলো- নজরুলসংগীতে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে আর বিষয়ভিত্তিক গানের প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে হবে। নজরুলসংগীত বেঁচে আছে শুধু নজরুলসংগীত শিল্পীদের ভালোবাসার কারণে। কোনো অডিও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাও পাচ্ছে না নতুন নজরুলসংগীত শিল্পীরা। সবার একান্ত সহযোগিতা ছাড়া নজরুলচর্চার প্রসার হবে না।
কিছু নজরুলশিল্পীর গান শুনে কষ্ট হয় : সুজিত মুস্তফা
প্রতিটি গানেরই গুণগত মান আছে। আর সেই গুণগতমান যখন হারাতে বসব তখন আমরা শ্রোতা হারানোর পাশাপাশি শিল্পীকেও হারাব। আর নজরুলসংগীতের বিষয়ে বলতে হয়, বর্তমানে কিছু নজরুলসংগীত শিল্পীর গান শুনে আমার কষ্ট হয়। তাদের অনেকেই গানের সুরকে বিকৃত করে পরিবেশন করে। কিন্তু এ কথাও সত্য, আমরা যদি নজরুলের নতুন শ্রোতা তৈরি করতে চাই তাহলে সুরের কিছু পরিবর্তন করতে হবে। একটি কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আমরা নতুন শ্রোতা তৈরি করব কিন্তু পুরনো শ্রোতাদের হারাব না। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, এখনো যারা নজরুলসংগীত শোনেন তারা কিন্তু একটি নস্টালজিয়া থেকেই গান শোনেন। অনেক সময় সুর বিকৃতির কারণে তারা নতুনদের গান শোনেন না। এ কথাও সত্য, নজরুলের সব গানের সুর কিন্তু পরিবর্তন হয় না। আমাদের দেশে নজরুলের প্রচার আরও বাড়াতে হলে এ বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে। একটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব কিছু এগোতে হবে। আর কোনো লক্ষ্য নেই।
স্বর্ণালি অধ্যায় এখন স্থবির হয়ে পড়েছে : শবনম মুশতারি
আমরা নজরুলসংগীতের যে স্বর্ণালি অধ্যায় কাটিয়ে এসেছি, এ সময়ে এসে মনে হচ্ছে তা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রায় বছরজুড়ে কোনো না কোনো অনুষ্ঠান লেগেই থাকত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে। এখন কষ্ট লাগে, এত টিভি চ্যানেল কিন্তু নজরুলের কোনো অনুষ্ঠান নেই। শুধু নজরুলের প্রয়াণ ও জন্মদিনে আমরা তাদের মনে করি। আমাদের হয়তো অনেকের জানা নেই, নজরুলের গানের ভাণ্ডার এত বিশাল আর তারই ভাণ্ডারে এত ধরনের গান আছে যে, বছরের সব সময় প্রচার করা সম্ভব। আমাদের দেশে নজরুলচর্চাকে আরও প্রসার করতে হলে দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। একটি হলো- আমাদের নজরুল একাডেমির কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। আর টিভি চ্যানেল ও অডিও প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে নজরুলকে তুলে ধরতে হবে। নজরুলের দর্শন নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানী করবে।
নজরুল চর্চায় কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই : ফাতেমা তুজ জোহরা
নজরুলের গানচর্চার প্রধান অন্তরায় হলো পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। দুঃখজনক হলেও সত্য, নজরুলসংগীতের জন্য পৃৃষ্ঠপোষক সেভাবে পাওয়া যায় না। ফলে এখন দেশে ভালো মানের নজরুলসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হচ্ছে না। পৃৃষ্ঠপোষকদের বেশি বেশি নজরুলসংগীতের অ্যালবাম বের করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে আশার কথা হলো, শত বাধা সত্ত্বেও অনেক শিল্পীই নজরুলকে নিয়ে কাজ করছেন। নজরুলকে অল্প কথায় মূল্যায়ন করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। কাজী নজরুল ইসলাম একজন অলৌকিক মানুষ ছিলেন। এ জন্য সংক্ষিপ্ত কর্মময় জীবনে তিনি এ বিশাল পরিমাণ কাজ করে যেতে পেরেছেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ জ্ঞানী একজন মানুষ। তা না হলে, এমন অসাধারণ সব কবিতা আর গান তিনি কীভাবে রচনা করে গেছেন! নজরুল তার গানে বাণী আর সুরের এমন সমন্বয় ঘটিয়েছেন যা আর কোনো গীতিকবি বা সংগীতজ্ঞের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তিনি তার গানগুলোতে রাগ ও সুরের মিশ্রণের পাশাপাশি
বহু ভাষারও মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। বাংলার পাশাপাশি আরবি, ফার্সিসহ নানা ভাষার শব্দ সুনিপুণভাবে ব্যবহার করেছেন। তার রাগপ্রধান গানগুলোর বাণী অনেক শক্তিশালী। গানগুলোতে তিনি রাগ ও সুর নিয়ে খেলা করেছেন। নজরুল আমার হৃদয়ে বসবাস করছেন। যতদিন বাঁচব তার সাধনাতেই আত্দনিয়োজিত থাকব, তার আলোতে উদ্ভাসিত হব।