বলিউডে একসময়ের হার্টথ্রব সুপারস্টার নার্গিস প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে আনেন ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত সুনীল দত্ত। অবশেষে সেই সুনীলের সঙ্গে গাটছড়া বাঁধেন রুপালি পর্দায় নার্গিস হিসেবে পরিচিত ফাতেমা রশিদ। কিন্তু কে ছিল সেই মনের মানুষ, যার জন্য নিজের জীবন শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন নায়িকা? সে আর কেউ নয়, ওই সময়ে অন্যতম সুপারস্টার রাজ কাপূর।
নার্গিসের এই চাঞ্চল্যকর জীবনকাহিনীই সম্প্রতি বই আকারে প্রকাশ পেয়েছে। 'দার্লিংজি: দা ট্রু লাভ স্টোরি অফ নার্গিস অ্যান্ড সুনীল দত্ত' নামের বইয়ে কিশ্বর দেশাই লিপিবদ্ধ করেছেন নার্গিসের ব্যক্তিগত জীবনের নানা অজানা দিক।
অল্প বয়সে তিনি পাগলের মতো ভালবেসে ফেলেছিলেন রাজ কাপূরকে। তারপর তার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে একসময়ে স্থির করেছিলেন, আত্মহত্যা করবেন। নিজের প্রতি অযত্ন-অবহেলা শুরু করেন। সেই সময় শুকনো মরুতে এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সুনীল দত্ত। বেঁচে যান নার্গিস। ফিরে আসেন স্বাভাবিক জীবনে।
১৯ বছর বয়সে অভিনয়ের সূত্রেই রাজ কাপূরের সঙ্গে আলাপ হয় নার্গিসের। সদ্য-যুবতী নার্গিস সুপারস্টার রাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন আলাপের প্রথম পর্বেই। কিশ্বরের বয়ান অনুযায়ী, 'প্রেমে পড়ার একেবারে উপযুক্ত বয়সেই রাজের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল নার্গিস। সেই বয়সে যদি রাজের প্রেমে না পড়তেন নার্গিস, তাহলে অন্য কোনও পুরুষকে হৃদয় দান করতেন তিনি।'
রাজের সঙ্গে মোট ১৬টি ছবিতে অভিনয় করেন নার্গিস। তার মধ্যে ৬টি ছিল রাজ কাপূর ফিল্মসেরই প্রযোজনা। অভিনয়ের মাধ্যমেই রাজের প্রতি নার্গিসের ভালবাসা আরও গাঢ় হয়। পাগলের মতো রাজকে ভালবেসেছিলেন নার্গিস। আর কে ফিল্মের প্রযোজনা ছাড়া আর কোনও ব্যানারে কাজ করাই সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ভালবাসার মানুষের প্রতি যতটা আত্মোৎসর্গিত ছিলেন নার্গিস, রাজ কাপূর ছিলেন সেই তুলনায় অনেক বেশি উদাসীন। একটা সময় নার্গিস বুঝতে পারেন এই একমুখী ভালবাসার কোনও পরিণতি নেই। রাজ কেবল ভালবাসার অভিনয় করে যাবেন নার্গিসের সঙ্গে, প্রকৃত ভালবাসা কখনোই রাজের কাছ থেকে পাবেন না তিনি। তাই নার্গিস সিদ্ধান্ত নেন দূরে সরে যাবেন রাজ থেকে।
রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে কী যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল নার্গিসকে, তা তিনি তার ব্যক্তিগত দিনলিপিতে লিখে গেছেন। প্রেম ভেঙে গেছে, পরিবারের লোকজন তাকে নিছক পয়সা কামানোর যন্ত্র বলে মনে করছেন— এমতাবস্থায় নার্গিস আত্মহত্যার কথা ভাবতে শুরু করেন। সেই সময়েই 'মাদার ইন্ডিয়া'-য় অভিনয় করার সূত্রে নার্গিসের সঙ্গে আলাপ হয় সুনীল দত্তের। সুনীল তখনও বলিউডে নবাগত বলা চলে। দু'জনের স্টার স্টেটাস-এ তখন বিস্তর ফারাক। 'মাদার ইন্ডিয়া'-য় অভিনয়ের জন্য নার্গিস পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন মোট ৫০ হাজার টাকা। আর সুনীল নাকি তখন দৈনিক ১০ থেকে ১২ টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে পেতেন। কিন্তু নীল চোখের এই নায়ককে ভাল লেগে যায় নার্গিসের। সুনীলই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রেরণা জোগান নার্গিসকে।
নার্গিস তার ডায়রিতে লিখেছেন, সেই সময় সুনীলকে নির্লজ্জের মতো বলতেন নিজের যন্ত্রণার কথা। একদিনের ঘটনা বিশেষভাবে দাগ কেটে গিয়েছিল নার্গিসের মনে। ক্রন্দনরতা নার্গিসের বিছানার পাশে বসে সুনীল তাকে বলেন, ''আমি চাই, তুমি বাঁচো।'' এই কথা শুনে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পান নার্গিস।
নার্গিস-সুনীলের প্রেম যখন শুরু হয় তখন নার্গিস সুপারস্টার, আর সুনীল নবাগত নায়ক। কিন্তু এই পার্থক্য তাদের প্রেমে কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিশ্বরের ব্যাখ্যা— ''সুনীলই নার্গিসের জীবনে প্রথম মানুষ, যিনি তাকে তার প্রাপ্য সম্মান ও ভালবাসা দিয়েছিলেন।''
সেই সময়ে গুজব রটেছিল, বলিউডে নিজের উত্থানের সোপান হিসেবে নার্গিসকে ব্যবহার করছেন সুনীল। সুনীল-নার্গিসের প্রেম যখন পাকাপাকি হয়ে যায় এবং দু'জনে বিয়ের কথা ভাবছেন— তখন বাধা হয়ে সামনে দাঁড়ায় ধর্মীয় পার্থক্য। কিন্তু কোনও বাধাকেই তোয়াক্কা করেননি তারা। এক বছরের ছোট নবাগত সুনীলের বাহুতে নিজের সুখ ও ভালবাসা খুঁজে নেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়িকা নার্গিস।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ