বাংলাদেশ বিমান ‘ময়ুরপঙ্খী’ ছিনতাই প্রচেষ্টা মামলার পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদি ওরফে মাহিবি জাহানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের জিজ্ঞাসাবাদে পলাশের সাবেক ‘স্ত্রী’ ও এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা শামসুন্নাহার শিমলাও জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়েছে।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শিমলা দাবি করেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েই পলাশ আমাকে বিয়ে করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া বলেন, ‘শিমলার কাছ থেকে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পূর্বে তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে শিমলার কাছ থেকেও প্রায় অভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘পলাশের সাথে পরিচয়ের পর থেকে ডিভোর্স পর্যন্ত প্রত্যেকটা ঘটনা বর্ণনা দিয়েছেন শিমলা। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েই পলাশ তাকে বিয়ে করেছেন। যখন প্রতারণার বিষয়টা প্রকাশ্যে আসে, তখন দু’জনের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হওয়ার পর শিমলা বলেন,‘তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ আমাকে ডেকেছে। তারা আমার কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর চেয়েছে। বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার যে বক্তব্য আমি মিডিয়ায় দিয়েছে। একই বক্তব্য আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনেও দিয়েছি।’
মামলার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় চিত্র নায়িকা শামসুন্নাহার শিমলা মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কার্যালয়ে আসেন। এরপর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদে কর্মকর্তার শিমলা-পলাশ দু’জনের পরিচয়, প্রেম, বিবাহ, বিচ্ছেদসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান।
এসব প্রশ্নের জবাব দেয়ার পর শিমলা তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান বিয়ের আগে পলাশ নিজেকে লন্ডন প্রবাসী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। লন্ডন, গুলশান, নারায়নগঞ্জে নিজস্ব বাড়ি থাকার কথা জানান। কিন্তু বিয়ের পলাশের প্রতারণা ধরা পড়ে শিমলার চোখে। এরপর থেকে দু’জনের সম্পর্কের ফাটল ধরে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে দু’জনের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এরপর পলাশের সাথে কোনো যোগাযোগ ছিল না নায়িকা শিমলার। দীর্ঘ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে দেখা না করার বিষয়ে ভারতে শুটিংয়ের কারণে ব্যস্ত থাকার কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ময়ুরপঙ্খী ছিনতাই প্রচেষ্টার মামলা দায়েরের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জনের জবানবন্দি সংগ্রহ করেছে তদন্ত দল। তাদের মধ্যে রয়েছে মামলার বাদী, বিমানের ক্রু, বিমান বন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং পলাশের ঘনিষ্ট লোকজন। বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদকালে জানতে পারে পলাশ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করে। ওই টাকা শিমলার কাছে রয়েছে বলে ধারণা করেন তারা।
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে শিমলা জানায়, পলাশ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করে। বেকার থাকার কারণে আয়ের কোনো উৎস ছিল না। সংগ্রহ করা টাকাগুলো বাড়ি ভাড়া ও আমোদ-ফুর্তিতে খরচ করেছে।
চার্জশিট নাকি চূড়ান্ত প্রতিবেদন?
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ময়ুরপঙ্খী ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রায় শেষ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এখনো পর্যন্ত তদন্তে পলাশ ছাড়া আর কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পায়নি তদন্ত দল। তাই এ মামলার ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের দিকেই যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমান ছিনতাই প্রচেষ্টা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ হলেও পলাশের বাইরে আর কারো নাম পাওয়া যায়নি। মামলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা শিমলার কাছ থেকেও বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি। এখনো পর্যন্ত পলাশের বাইরে কোনো নাম আসেনি। পলাশও কমান্ডো অভিযানে মারা গেছেন। তাই মামলা চূড়ান্ত তদন্তের দিকেই যাচ্ছে মনে হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর বিমানের ফ্লাইট ‘ময়ুরপঙ্খী’ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে পলাশ আহমেদ। বিমানটি ছিনতাইয়ের প্রচেষ্টার পর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে পাইলট। পরে প্যারা কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মিদশা থেকে বিমানটি মুক্ত করে। অভিযানেই নিহত হন ‘ময়ুরপঙ্খী’ ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদ। এ ঘটনায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যাতে নিহত পলাশ আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন