রাজমাতা গায়েত্রী দেবী। উপমহাদেশের রাজকীয় ইতিহাসে অন্যতম জায়গা দখল করে আছেন জয়পুরের এই তৃতীয় রাণী। এমনকি বলিউডেও তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমা তৈরি হয়েছে। বিখ্যাত 'ভোগ' ম্যাগাজিন পৃথিবীর প্রথম দশ সুন্দরীর মধ্যে গায়েত্রী দেবীকে স্থান দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর দেশীয় রাজ্যগুলির বিলোপের সময় গায়েত্রী দেবী রাজনীতিবিদ হিসেবে চরম সাফল্য অর্জন করেন। পরিণত জীবনে গায়েত্রী দেবী ছিলেন একজন ফ্যাশান আইকনের মতো।
গায়েত্রী দেবীর জন্ম ১৯১৯ সালের ২৩শে মে। বাবা ছিলেন কুচবিহারের মহারাজা। মায়ের নাম মহারাণী ইন্দিরা দেবী। ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই ৯০ বছর বয়সে মারা যান মহারাণী গায়েত্রী দেবী।
মহারাণী গায়েত্রী দেবী নিজের গণ্ডিকে ছাড়িয়ে সবসময় বহির্বিশ্বে পা রাখতে চেয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকে তিনি পরিবারের সঙ্গে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। গায়েত্রী দেবী পড়াশোনা করেছেন শান্তিনিকেতনে। পড়াশোনার জন্য তিনি বিদেশেও গিয়েছিলেন। কয়েকটি ভাষা তিনি রপ্ত করেছিলেন।
১৯৩৯ সালে জয়পুরের রাজপুত্র মান সিং-এর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তিনি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ব্যস্ত এবং কর্মবহুল জীবনে শুধু সফল্য নয়, ব্যর্থতার সম্মুখীনও হতে হয়েছে গায়েত্রী দেবীকে।
সাবেক রাজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়া স্বতন্ত্র পার্টির স্থাপনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে গায়েত্রী দেবী রেকর্ড সংখ্যক ভোটে বিজয়ী হন। ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ সালেও স্বতন্ত্র পার্টি নির্বাচনে বিজয় লাভ করে। যদিও ১৯৬৭ সালে রাজস্থান বিধান সভা নির্বাচনে তার পরাজয় ঘটে।
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে তাকে জরুরি আইনের আওতায় একরকম বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়। অন্যায়ভাবে আয়কর চুরির অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তিহার জেলে কাটাতে হয় পাঁচ মাস। তীব্র অপমানবোধ থেকে তিনি আর কোনদিন রাজনীতিতে ক্ষেত্রে ফিরে আসেননি।
১৯৭৬ সালে সান্তা রামা রাও-এর সহযোগিতায় লেখা তার আত্মজীবনী 'অ্যা প্রিন্সেস রিমেমবার্স' প্রকাশিত হয়। রাজনীতি ছেড়ে গায়েত্রী দেবী বাকি জীবন ব্যস্ত হয়ে থাকেন নানারকম সামাজিক ও সংস্কৃতিক কর্মসূচি নিয়ে।