১৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:০৮

বৈসাবি উৎসবে জলকেলিতে মাতোয়ারা পাহাড়

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

বৈসাবি উৎসবে জলকেলিতে মাতোয়ারা পাহাড়

সাংগ্রাই অর্থাৎ জলকেলি বা জলোৎসব। মারমা ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘রিলংপোয়ে’। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে মারমা ও রাখাইন সম্প্রাদয় এ উৎসব পালন করে থাকে। এটি তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব। মূলত নতুন বছরকে বরণ ও পুরোন বছরকে বিদায় জানাতে একে অপরকে জল ছিটিয়ে গ্লানি দূর করাই হচ্ছে সাংগ্রাই। শনিবার সকাল ৯টায় রাঙামাটির কাউখারী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের বিদ্যালয় মাঠে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) উদ্যোগে আয়োজিত এ সাংগ্রাই উৎসবের সূচনা করেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার। 

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থার (মাসস) সভাপতি অং সুই প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. তারিকুল ইসলাম, রাঙামাটি জোন কমান্ডার বিএম মো.আশিকুর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা উপস্থিত ছিলেন। 

অন্যদিকে কাশিতে ঘণ্টা বাজার সাথে সাথে শুরু হয় জলোৎসবের আমেজ। বিদ্যায়ল মাঠে তৈরিকৃত প্যান্ডেলে আগে থেকে রাখা হয় বড় বড় পানির পাত্র। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে প্রস্তুত মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরা। একে অপরকে জল ছিটিয়ে চলে কাবু করার চেষ্টা। এসময় কৃত্রিম বর্ষণে উৎসবে আমেজ ছড়িয়ে পড়ে পাহাড় জুড়ে। তখন এ জলোৎসব শুধুমাত্র যুবক-যুবতীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না উৎসবে মাতোয়ারা হয় পাহাড়ি বাঙালী সব সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ। দিনব্যাপী চলে এ উৎসবরে জোয়ার। নাচে-গানে পার হয় দিন। 

মারমা সম্প্রদায় ছাড়াও উৎসবে যোগ দিয়েছিল চাকমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, গুর্খা, অহমিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই, লুসাই, চাক, রাখাইন, খুমী, বমসহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার নারী-পুরুষ। শিশু, কিশোর, তরুণ, তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ সমবেত হয় এ উৎসবে। রাঙামাটির মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠেছে পাহাড়ি জনপদ। পার্বত্য তিন জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে রাঙামাটি পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। যেন এক অন্যরকম ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলনমেলা।

এদিকে গত ৪ এপ্রিল রাঙামাটিতে শুরু হওয়া বৈসাবি উৎসব সাংগ্রাইয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় অর্ধ মাসব্যাপী চলে এ বৈসাবি। পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু-কে কেন্দ্র করে এতো দিন তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ছিল এক উৎসবের নগরী।
 
জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে থাকে এ বৈসাবি। যেমন-চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু ও মারমারা সাংগ্রাইং নামে পালন করে থাকে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর