আজ বাবা দিবস। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হবে দিবসটি। সাধারণত বিশ্বের ৪২টিরও বেশি দেশে জুনের তৃতীয় রবিবার দিবসটি পালিত হয়। উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, ১৯১০ সালে ওয়াশিংটনের স্পোকান শহরে এ দিবসটি পালিত হয়। প্রথম দিবসটি পালন করে সোনোরা লুইস ডড নামের ব্যক্তি। বর্তমানে ৮৭টি দেশে বাবা দিবস পালন করা হচ্ছে।
তবে ইতিহাস বলছে, বাবা দিবসের শুরু মূলত মা দিবসের হাত ধরেই। সময়ের সঙ্গে মা দিবসের সঙ্গে বেড়েছে বাবা দিবসের জনপ্রিয়তা। আজ দিবসটি উপলক্ষে পত্রিকা ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
এ দিনটিতে বাবাদের নানাভাবে শুভেচ্ছা জানানো বা স্মরণ করা হয়। ফেসবুকের অনেক ব্যবহারকারী তাদের বাবাকে নিয়ে মন্তব্য করেন, ছবি শেয়ার করেছেন। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন উপহারসমাগ্রীর দোকানে ক্রেতাদের তাদের বাবার জন্য পাঞ্জাবি, হাতঘড়ি, ব্যাগ, ফটোফ্রেম, বই, শুভেচ্ছা কার্ড ও চকোলেটসহ নানা রকম উপহারসামগ্রী কিনতে ভিড় করতে দেখা যায়। ফুলের দোকানগুলোয় ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
কীভাবে বাবা দিবসটির প্রচলন হলো?
মা দিবস কয়েকশো বছর ধরে পালন করা হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাবা দিবসটি অনেক নতুন। দিবসটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালু হয় এবং এর শুরু নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সম্ভবত গ্রহণযোগ্য গল্পটি হলো, ওয়াশিংটনের সোনোরা লুইস স্মার্ট নামের একজন নারী এই দিন উদযাপন শুরু করেন। ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেলে তার বাবা পরিবারটিকে বড় করে তোলেন। ১৯০৯ সালে সোনোরা গির্জার একটি বক্তব্যে মা দিবসের কথা জানতে পারেন। তখন তার মনে হলো, বাবার জন্যও এরকম একটি দিবস থাকা উচিত।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক তার এই আইডিয়াটি গ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবসটি পালন করা হয়, যদিও তা আনুষ্ঠানিক ছিল না। ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসাবে পালন করা হবে। ছয় বছর পর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে আইনে পরিণত করেন।
বিশ্বজুড়ে কীভাবে দিবসটি পালন করা হয়?
মেক্সিকো
মেক্সিকোয় বাবা দিবস বা ডিয়া ডেল পেড্রো উদযাপিত হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। এদিন মেক্সিকো সিটিতে তের মাইল লম্বা একটি দৌড় প্রতিযোগিতা হয়, যাকে বলা হয় ক্যানেরা ডিয়া ডেল পেড্রো। বাবাদের সঙ্গে সঙ্গে ওই দৌড়ে অংশ নেন সন্তানরাও।
জার্মানি
জার্মানিতে এই দিনে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে বাবারা বরং একেকটি গ্রুপ হয়ে হাইকিং করতে যান। কখনো কখনো মদ বা খাবার ভর্তি টেনে তোলার মতো খেলা করেন।
নেপাল
নেপালে সন্তানরা এই দিনে তাদের পিতামাতাকে মিষ্টি কিনে দেন। কখনো কখনো সন্তানরা তাদের বাবার কাছ থেকে আশীর্বাদ নেন।
যাদের বাবা মারা গেছেন, তারা সেই সমাধিস্থানে গিয়ে বাবাকে স্মরণ করেন।
ফ্রান্স
ফ্রান্সে বাবা দিবসটি ঐতিহ্যগতভাবে একটি ক্যাথলিক উৎসব। তবে উনিশ শতকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এটির পুনঃপ্রচলন ঘটানো হয়। এখন এই দিনে সবরকম উপহার দেয়া হয়ে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে গোলাপ ফুলও।
ফ্রান্সের প্রথা হলো এটা যে, বাবা জীবিত থাকলে তাকে লাল গোলাপ দেওয়া হবে। কিন্তু বাবা যদি মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তার সমাধিতে সাদা গোলাপ রেখে আসা।
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডে বাবা দিবস পালন করা হয় প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের জন্মদিনে, ৫ ডিসেম্বর বাবা দিবস পালন করা হয়, যাকে দেশটির জনক বলে মনে করা হয়। এদিন হলুদ রঙের কাপড় পরা সেখানকার প্রথা।
বাবা দিবস পালনে দেশ ভেদে দেখা যায় ভিন্নতা। বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়ে থাকে বাবা দিবস। দিনটি পালনে সন্তানেরা বাবাকে তার পছন্দের উপহার দিতে খুব ভালোবাসে। আর বাবারাও সন্তানের কাছ থেকে উপহার পেয়ে খুব আনোন্দিত হন। অধিকাংশ দেশে ছেলেমেয়েরা তাদের বাবাদের কার্ড, ফুল কিংবা কেক উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বাবা দিবসের উপহার হিসেবে আরও প্রচলিত আছে বাবা দিবসের মগ, টি-শার্ট, বই ইত্যাদি।
আমাদের দেশে একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, বড় হবার সাথে সাথে মা-বাবার সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। আমরা ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও তা খুব সহজে প্রকাশ করি না । মায়ের সাথে যদিওবা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। কিন্তু বাবার সাথে বন্ধুত্ব খুব কম সন্তানেরই হয়ে উঠে। কেন এই দূরত্ব থাকবে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষটির সাথে? আসুন সব জড়তা কাটিয়ে একটি দিন না হয় বাবার আনন্দের জন্য কিছু করি। কিছু না হোক নিজে হাতে একটি কার্ড তৈরি করে বাবাকে দিয়ে বলি- বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসি। দেখুন বাবার মুখের প্রাঞ্জল হাসি, যে হাসি সত্যি অমূল্য এবং তুলনাহীন। বাবা দিবসে এটাই আশা করছি পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানের কাছে যে ‘বাবা’ শুধু একটা শব্দ নয় বরং হয়ে উঠুক সহজ- সাবলীল বন্ধুত্বপূর্ণ একটি নিরাপদ আশ্রয়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ