বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ড

সাত দিনেও অগ্রগতি নেই, সন্দেহের তীর উগ্রপন্থিদের দিকে

মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাত দিনেও কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফারুকী হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে মতাদর্শগত বিরোধ সামনে রেখে তারা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফারুকীর মতাদর্শের বিরুদ্ধে অনলাইনে যারা সরব ছিলেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আনসারুস সুন্নাহ নামে দুটি উগ্রপন্থি দলের নাম উঠে এসেছে। ফারুকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ দুটি গ্রুপের যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ফারুকীর মতাদর্শের বিরুদ্ধে অনলাইনে সরব ছিল দুই উগ্রপন্থি দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আনসারুস সুন্নাহ। এ দুটি দল তাদের নিজেদের ওয়েবসাইটে ফারুকীকে বিদাতপন্থি ও কুফুরি আকিদাপন্থি বলে আখ্যায়িত করে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে। ফারুকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ দুটি দলের যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য কারা তার বিরুদ্ধে অনলাইন ব্লগ, ইউটিউব ও ফেসবুকে মাজারের পূজারি, দজ্জাল, খাজাবাবাসহ বিভিন্ন নামে অপ্রচার চালিয়েছেন তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এসব ঘটনায় হামলাকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। কিন্তু তারা তা ব্যবহার করেননি। গত বছর আগস্টে খুলনায় নতুন মতাদর্শ প্রচারকারী ‘মুসলিম উম্মাহ’র প্রধান, তার ছেলে ও গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের ঘটনায়ও ঘাতকদের হাতে অস্ত্র ছিল কিন্তু তারা ব্যবহার করেননি। সর্বশেষ ফারুকী হত্যাকাণ্ডের সময়ও ঘাতকদের হাতে অস্ত্র ছিল কিন্তু তা ব্যবহার হয়নি। ফারুকীর গলা কাটার সময় ঘাতকরা তাকে ‘তুই অনেক বেদাতি ও ‘শিরকি’ কাজ করেছিস’ বলেছিলেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা জানান, আনসারুল্লাহর প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানীসহ কিছু লোককে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হলেও তাদের বিরাট অংশ এখনো সক্রিয়। তাদের কেউ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। প্রয়োজনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী ও তার সহযোগীদের নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এদিকে, ফারুকী হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তেমন কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তারা। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার আশিকুর রহমান বলেন, ফারুকীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। তবে তারা মোটামুটি একটি লাইনআপ তৈরি করেছেন। ওই লাইনআপ ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (পশ্চিম) শেখ নাজমুল আলম বলেন, ফারুকী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ফারুকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এমন সব বিষয়ই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও হত্যাকারী সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, মাওলানা ফারুকী হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর শাখা। সংগঠনের নগর শাখার সভাপতি এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়- এ ধরনের জঘন্য ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে গোটা দেশ স্তম্ভিত। একটি গণতান্ত্রিক সরকার বিদ্যমান থাকা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ ভয়াবহ পরিণতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত, ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর ১৭৪ পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী।

সর্বশেষ খবর