বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
রাজউক পরিকল্পনার বিশ বছর পেরিয়ে গেছে

নির্মাণই শেষ হচ্ছে না তিনশ ফুট সড়ক

রাজধানীর কুড়িল থেকে বালু নদের ব্রিজ হয়ে শীতলক্ষ্যার কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত তিনশ ফুট চওড়া ১৩ কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণকাজ যেন শেষই হচ্ছে না। পূর্বাচল নতুন শহরের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ সৃষ্টির জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক ১৯৯৪ সালে রাস্তাটি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। কিন্তু পরিকল্পনার ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও সাড়ে ৬ কিলোমিটার রাস্তাও নির্মাণ করতে পারেনি রাজউক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি, ঠিকাদারের দায়সারা কাজ, দফায় দফায় পরিকল্পনা পরিবর্তনসহ নানা টালবাহানায় রাস্তাটি অসমাপ্ত অবস্থাতেই ফেলে রাখা হয়েছে।
ইদানীং আবার রাস্তাটির দুই পাশে ১০০ ফুট প্রশস্ত লেক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আরেক দফা সড়কের নির্মাণকাজ পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বছরের পর বছর ধরে নির্মাণাধীন সড়কটি জুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ, ধুলাবালির ওড়াউড়ি, বর্ষায় কাদা-পানির মাখামাখি পথচারীসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের চরম বিপাকে ফেলছে। এ সড়কে যাতায়াতকারী মানুষেরও দুর্ভোগের অন্ত থাকছে     না। অন্যদিকে কুড়িল-কাঞ্চন ব্রিজ-গাউছিয়া বাইপাস সড়কের মাধ্যমে রাজধানীর যানজট নিরসনের শুভ উদ্যোগটি রীতিমতো অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, শুরুতে ১৯৯৪ সালে প্রগতি সরণির উত্তর প্রান্ত কুড়িল থেকে বালু নদসংলগ্ন পূর্বাচল প্রকল্প পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩০০ ফুট প্রস্থের রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। এ সড়কটিতে চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে ও দুই পাশে দুই লেনের দুটি সার্ভিস রোড রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। নির্মাণাধীন চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে ভবিষ্যতে দুই লেন করে আরও চার লেনের জন্য জমি সংরক্ষিত রাখারও সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। তা ছাড়া সংযোগ সড়কের দক্ষিণ পাশে রেলপথ নির্মাণের জন্যও ৬০ ফুট জমি সংরক্ষণ করা হয়েছে। দুটি সার্ভিস রোডের জন্য দুটি স্বতন্ত্র ব্রিজ এবং মধ্যবর্তী স্থানে এক্সপ্রেসওয়ের জন্য পৃথক একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এর পর থেকেই চলতে থাকে নকশা আঁকাআঁকি, টেন্ডার কর্মকাণ্ড আর মাটি ভরাটের নানা তৎপরতা। সব শেষে কয়েক লেনে ভাগ করে পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। তবে প্রতিটি কাজের নামেই দফায় দফায় সময় ক্ষেপণ, পরিকল্পনা পরিবর্তন, সংযোজনের নামে অর্থের অপচয়ও ঘটতে থাকে সমানতালে। ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশের আরেকটি ‘গেটওয়ে’ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হয়েছে বালু নদের ওপর সংযোগ সেতু ‘বালু ব্রিজ’। রাজউকের তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। ১০৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘সেতুটি চার লেনে নির্মিত হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ৩০০ ফুট সংযোগ সড়ক। সড়কটিও চার লেনে নির্মিত হবে। বালু সেতুর পাশে অ্যাপ্রোচ সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত মস্তুল মৌজার জনগণ প্রথম পর্যায়ে নির্মাণে বাধা প্রদান করে। সেসব শান্তিপূর্ণভাবে মিটিয়ে সড়ক নির্মাণে কিছুটা সময় ক্ষেপণ হয়েছে। তবে এখন জোরেশোরে নির্মাণকাজ চলছে এবং ২০১৫ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আনোয়ার হোসেন। তবে সংযোগ সড়কটির নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় নির্মিত সেতুর সুযোগ সুবিধা এখনো নেওয়া যাচ্ছে না। অতিসম্প্রতি রাজউক ৩০০ ফুট সড়কের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়ার লেক নির্মাণের পরিকল্পনা সংযোজনের চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ফলে রাস্তা নির্মাণের কাজ আরেক দফা বাধাগ্রস্ত ও দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। রাজউক কর্মকর্তারা বলেন, পূর্বাচল সংযোগ সড়ক এবং এর পাশে জলাধার নির্মিত হলে খিলক্ষেত, কুড়াতলী, কুড়িল, বরুয়া, ডুমনী, তলনা ও ঢেলনাসহ আশপাশের বিশাল অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে। হাতিরঝিলের মতো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে সংযোগ সড়কটি। জলাধার নির্মাণের ফলে এলাকার বৃষ্টির পানি ধারণক্ষমতাও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে জলাবদ্ধতা সমস্যা আর থাকবে না বলেও মনে করছেন রাজউক কর্মকর্তারা।
৩০০ ফুটের জন্য জমি নিয়ে ৬৪ ফুট চওড়া রাস্তা! : পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে ৩০০ ফুট রাস্তা নির্মাণে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ৩০০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা করা হবে বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ন্যূনতম দামে জমি অধিগ্রহণ করে মাত্র ৬৪ ফুট চওড়া রাস্তা নির্মাণ করছে রাজউক। শুধু তাই নয়, রাজউকের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন কাজে ওই রাস্তার জন্য দুই পাশে ১০০ ফুট করে আরও ২০০ ফুট জায়গা নতুন করে অধিগ্রহণ করার কথা রয়েছে। একদিকে বর্তমানে মাত্র ৬৪ ফুট চওড়া মূল রাস্তা, অন্যদিকে নতুন করে জমি অধিগ্রহণের আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রাজধানীর খিলক্ষেত, ডুমনি ও রূপগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ। রাজউকের নকশা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৬৪ ফুট রাস্তার মধ্যে ১০ ফুট প্রশস্ত বিভাজক রাখা হয়েছে। সেখানে গাছপালা লাগানো হবে। এ ছাড়া উভয় পাশে ৩৩ ফুট করে মোট ৬৬ ফুট জায়গা রাখা হয়েছে বনায়নের জন্য। ৩৮ ফুট করে ৭৬ ফুট রাখা হয়েছে স্টর্ম স্যুয়ারেজের জন্য। এ ছাড়া এক পাশে ৩৬ ফুট ও অন্য পাশে ৪৮ ফুট- মোট ৮৪ ফুট জায়গা রাখা হয়েছে সিসি ব্লক স্থাপনের জন্য। এতে দেখা যাচ্ছে, ৩০০ ফুট জায়গার মধ্যে কেবল রাস্তার জন্য আছে ৬৪ ফুট। তবে রাজউকের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, আপাতত এরকম রাস্তা হলেও পরে আরও প্রশস্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুড়িল প্রগতি সরণি থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার জন্য ২০ বছর আগে জমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। তখন বলা হয়েছিল, মূল রাস্তা ১০০ ফুট চওড়া হবে। এর দুই পাশে ৫০ ফুট করে অযান্ত্রিক যানবাহন চলার জন্য রাস্তা থাকবে। তার পাশে আরও ৫০ ফুট করে জায়গা রাখা হবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য। কিন্তু রাজউকের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) দুই পাশে আরও ২০০ ফুট জায়গা ওয়াটার বডি হিসেবে রাখার কথা বলা হয়। ফলে নতুন করে আরও ২০০ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে রাজউক। এর পরই এলাকার জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের অভিযোগ, অতীতে ৩০০ ফুট জমি অধিগ্রহণের সময় একবার তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আবারও জমি অধিগ্রহণ করলে নতুন করে তারাই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সংযোগ সড়কের পাশে জলাধার নির্মাণ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে সম্প্রতি জোয়ারসাহারা, খিলক্ষেত ও বরুয়া এলাকাবাসীর পক্ষে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. ওমর আলী, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, ৯৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুজ্জামান দর্জি, তালেরটেক বাড়ি মালিক কল্যাণ সমিতির নেতা মো. জয়নাল আবেদীন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সেলিমসহ এলাকাবাসী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বার বার রাজউকের জুলুম, অত্যাচার ও নিষ্পেষণের করাল গ্রাস থেকে বাঁচান মর্মে আবেদন জানান। কুড়িল থেকে বোয়ালিয়া খাল পর্যন্ত ১০০ ফুট প্রশস্তের জমি অধিগ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেন এলাকাবাসী। তারা জলাধারের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ না করে সংযোগ সড়কের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতেই জলাধার নির্মাণের দাবি করেন। এ ছাড়া বোয়ালিয়া খালের ওপর রাজউকের পৃথক তিনটি ব্রিজ নির্মাণেরও বিরোধিতা করেন তারা। নতুন করে ১০০ ফুট প্রস্থের জমি অধিগ্রহণ করা হলে স্থানীয় জমি মালিকরা নিঃশেষ হয়ে যাবেন বলেও দাবি করেন এলাকাবাসী।

সর্বশেষ খবর