সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইউপি চেয়ারম্যানসহ নিহত ৪

স্থানীয় নির্বাচন শেষ, তবু থামছে না সহিংসতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউপি চেয়ারম্যানসহ নিহত ৪

৪ জুন ইউনিয়ন পরিষদের শেষ ধাপের নির্বাচন শেষ হলেও থামছে না সহিংসতা। জয়পুরহাটে মুখোশধারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত সদর উপজেলার ভাদশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ১৯৯০ সালে দেশবাংলা পত্রিকার ফটোসাংবাদিক ছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার আগে-পরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, তার জীবন হুমকির মুখে। নিরাপত্তা চাইলেও পুলিশ সহায়তা করছে না। এদিকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় শুক্রবার বিজয়ী     সদস্যের সমর্থকদের সঙ্গে পরাজিত সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজনের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই প্রার্থীর সমর্থকরা। দ্বিতীয় দফায় সংঘাতেও প্রাণ হারান একজন। এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকায়। সব মিলে এবার ইউপি নির্বাচনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪০। একই সঙ্গে গত ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনের জেরেও মুন্সীগঞ্জে একজন নিহত হয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

গুলিতে আহত ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু : জয়পুরহাটে মুখোশধারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত সদর উপজেলার ভাদশা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি গতকাল ভোর ৬টায় ঢাকার পপুলার হাসপাতালে মারা যান। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান আজাদ ৪ জুন রাতে একই উপজেলার দুর্গাদহ বাজার থেকে মোটরসাইকেলে নিজ বাড়ি কোঁচকুঁড়ি গ্রামে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে একদল মুখোশধারী তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আট দিন পর তিনি মারা যান। নিহতের বড় ভাই মুকুল মাস্টার বলেন, আজাদ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এ কারণে তার শত্রুও বেড়ে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বীরাই তার ওপর হামলা চালাতে পারেন। এ ছাড়া নির্বাচিত হওয়ার পর চাঁদাবাজিসহ সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করার কারণেও তাকে হত্যার জন্য আক্রমণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে তার ধারণা। চেয়ারম্যান এ কে আজাদ ১৯৯০ সালে দেশবাংলা পত্রিকার ফটোসাংবাদিক ছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার আগে-পরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, তার জীবন হুমকির মুখে। নিরাপত্তা চাইলেও পুলিশ সহায়তা করছে না।

হবিগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় বৃদ্ধাসহ নিহত ২ : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় এক বৃদ্ধাসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন খড়কি গ্রামের আলফু মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৩০) ও একই গ্রামের বৃদ্ধা মিরাশী বেগম। শুক্রবার সংঘর্ষে আহত হন ফারুক মিয়া। শনিবার সকালে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর জেরে শনিবার আবার সংঘর্ষে নিহত হন মিরাশী বেগম। মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম আজমিরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার দুপুরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী সদস্য মনাই মিয়ার সমর্থকদের সঙ্গে পরাজিত সদস্য প্রার্থী আবদুল হাইয়ের সমর্থকদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ফারুকসহ ছয়জন আহত হয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে আহত ফারুক মারা যান বলে জানান ওই পরিদর্শক। পরিদর্শক আজমিরুজ্জামান আরও জানান, ফারুকের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শনিবার আবার সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পরাজিত সদস্য প্রার্থী আবদুল হাইয়ের বোন মিরাশী বেগম বুকে আঘাত পেয়ে মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পৌরসভা ভোটের বিরোধে সংঘাত, গুলিতে তরুণ নিহত : মুন্সীগঞ্জে পৌর নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় এক তরুণ গুলিতে নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও দুজন। জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, শনিবার মধ্যরাতে শহরের পাঁচঘড়িয়াকান্দি এলাকায় এ ঘটনার পর অস্ত্র ও গুলিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শৈবাল কুমার বসাক জানান, নিহত মো. জনির (১৭) পেটে গুলি লেগেছিল।

 পুলিশ জানান, গত ডিসেম্বরে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান বাবুলের লোকজনের সঙ্গে বিজয়ী কাউন্সিলর জাকির হোসেনের সমর্থকদের বিরোধ চলছিল। এর জেরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ শহর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান বাবুলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন ও ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর