বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পেশাজীবীদের হাতে বিএনপি

রাজনীতিবিদদের সংখ্যা কম এক-তৃতীয়াংশ ব্যবসায়ী আর আইনজীবী, সাবেক আমলা ও শিক্ষকদের ছড়াছড়ি

মাহমুদ আজহার

পেশাজীবীদের হাতে বিএনপি

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতেই অন্তত চারজন আমলানির্ভর রাজনীতিবিদ রয়েছেন। তিনজন রয়েছেন ডাকসাইডে আইনজীবী। একজন ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আটজন পুরোদমে আইন পেশায় যুক্ত। সাতজন রয়েছেন সাবেক আমলা। ব্যবসায়ী নেতা অন্তত চারজন। রয়েছেন একজন চিকিৎসকের পাশাপাশি সাংবাদিক নেতাও। বিএনপি চেয়ারপারসনের ৭২ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদেও পেশাজীবীদেরই আধিক্য। দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির সদস্য সর্বত্রই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিধিনিদের ছড়াছড়ি। মূল নির্বাহী কমিটিতে রাজনীতিবিদের সংখ্যা কম। ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাবেক আমলা (সেনাবাহিনী, কূটনীতিক, সচিব) চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীতে ভরপুর। কমিটির এক-তৃতীয়াংশই ব্যবসায়ী ও আইনজীবী। বিএনপির ঘোষিত ৫০২ সদস্যের কমিটি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পেশাজীবীদেরও দলীয় রাজনীতি করার বৈধতা দিয়েছে। শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া। যদিও তারাও এখন রাজনীতি করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এরসঙ্গে একমত নেই। একজন শিক্ষক বা চিকিৎসক ওই পেশার পাশাপাশি কেন দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতি করবে? এটা ঠিক মনে করি না। তবে পেশাজীবীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে জড়িত থাকাই ভালো। তবে রাজনীতিবিদরা কী করবেন? তাদেরও তো কিছু করতে হবে। নইলে তো তারা চাঁদাবাজি করবেন। তবে কারোরই টাকার রাজনীতি করা উচিত নয়।’ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আসলাম চৌধুরীকে করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। শিল্পপতি মিজানুর রহমান সিনহাকে করা হয়েছে কোষাধ্যক্ষ। বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ কুমিল্লায় সম্পাদক করা হয়েছে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজীমকে। চেয়ারপারসনের বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন ব্যবসায়ী নেতা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াহিয়া। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে তিন আইনজীবীকে যুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে জয়নাল আবেদীন নামে এক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে। ব্যবসায়ী খালেদ হোসেন শ্যামল ও ইয়াসিন আলীকেও দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান, ব্যবসায়ী লায়ন হারুন অর রশিদ, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, আইনজীবী আসাদুজ্জামান আসাদসহ অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদে রয়েছেন। প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ব্যবসায়ী শাহ শরীফ কামাল তাজ, মাহমুদ হাসান বাবু, শামসুজ্জামান, শরীফুল আলম, শাহাবুদ্দিন আহমেদও রয়েছেন কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বে। নির্বাহী কমিটির সদস্য পদেও বিশাল অংশই ব্যবসায়ী। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে প্রবীণ-নবীন ও ত্যাগীদের সমন্বয় করা হয়েছে। বিভিন্ন পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সবপর্যায় থেকেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই কমিটির অবয়ব কিছুটা বেড়েছে। সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের নেতৃত্ব তৈরি করাই লক্ষ্য। এ বিষয়ে আমরা যে কাছাকাছি পৌঁছেছি, তা বলব না। আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি থাকলেও আমাদের চেষ্টা আছে, ভাবনা আছে। এরই বহিঃপ্রকাশ ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি। আমি মনে করি, আজ বিএনপি যা করেছে, আগামীতে অন্যকে এর অনুসরণ করতে হবে।’ বিএনপি সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, কমিটিতে পেশাজীবী থাকবে। তবে মূল কমিটিতে সংখ্যায় তা কোনোভাবেই রাজনীতিবিদদের চেয়ে বেশি থাকা ঠিক নয়। বিশেষ করে বিএনপির বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করা উচিত। নির্বাহী কমিটিতে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা প্রয়োজন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড রাজনীতিবিদদের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনীতিক থাকা উচিত। গণতন্ত্র থাকাও জরুরি। রাজনীতিবিদরা যদি রাজনীতি না করেন, তাহলেই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এখন ব্যবসায়ী রাজনীতির চর্চা চলছে। এটা কাম্য নয়।’

বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে কারা আসছেন : মূল কমিটির বাইরেও বিএনপিতে আসছে অন্তত ২৬টি বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি। সেখানে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। একজন সম্পাদক ও একজন সহ-সম্পাদকসহ ১০-১২ জনের কমিটি গঠন করা হবে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতাদেরই গুরুত্ব দেওয়া হবে। কমিটির সদস্য হিসেবেও দক্ষদের প্রাধান্য থাকবে। ২৬টি বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে প্রায় ৩০০ নেতার ঠাঁই হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এ কমিটি নিয়ে কাজ করবেন। দলের অঙ্গসংগঠনের পাশাপাশি আগামী দুই মাসের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিও গঠন করা হবে।

সর্বশেষ খবর