সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা গার্মেন্ট মালিক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে পোশাক তৈরি কারখানা জিম টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান আহমেদকে গ্রেফতার করেছে  র‌্যাব।  র‌্যাব বলছে, গ্রেফতার ইমরান জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শূরা সদস্য এবং ঢাকা মহানগর পশ্চিমের দাওয়াতি আমির। শনিবার গভীর রাতের ওই অভিযানে অস্ত্র ও বিপুলসংখ্যক জিহাদি বইসহ ইমরানের গাড়িচালক শামীম মিয়াকেও গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই ইমরানের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি  র‌্যাবের। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে  র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান আহমেদ জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শূরা সদস্য এবং ঢাকা মহানগর পশ্চিমের দাওয়াতি আমির। ইমরান সিরিয়ায় পলাতক ভয়ংকর জঙ্গি জুন্নুন সিকদারসহ অনেক জঙ্গিকে আর্থিক সহায়তা করেন। জুন্নুন সিকদারকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পাসপোর্ট তৈরিতেও অর্থ দিয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে জেলখানায় আটক জেএমবি সদস্যদের পরিবারগুলোতে অর্থ সহায়তা করতেন তিনি। ইমরান ইতিপূর্বে  র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার মাওলানা আবদুল হাকিমকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য তার স্ত্রীকে দুই লাখ টাকা দেন ইমরান। তিনি জেএমবির সামরিক শাখার অস্ত্র ও বিস্ফোরক ক্রয়ের ব্যাপারে অর্থ সহায়তা দেন বলেও  র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার ইমরানের জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ২০১২ সালে বন্ধু ওবায়েদের মাধ্যমে জসিম উদ্দিন রাহমানীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় ইমরানের। জসিম উদ্দিন রাহমানীর মাধ্যমেই তার জঙ্গিবাদে প্রবেশ। এ ছাড়া জসিম উদ্দিন রাহমানীর মাধ্যমে মিরপুর-১০-এর মাওলানা আবদুল হাকিমের সঙ্গেও তার পরিচয় হয়। মাওলানা হাকিমের মাধ্যমে ইমরানের জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি এবং নন্দীপাড়া কোরআন সুন্নাহ একাডেমির মসজিদের খতিব শায়েখ আরিফ হোসেনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এই শায়েখ আরিফ বর্তমানে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কেন্দ্রীয় দাওয়াতবিষয়ক শূরা বোর্ডের আমির বলে জানা গেছে। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ইমরান আহমেদ তার অফিস, গার্মেন্টস, ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ডা. আসাদুল্লাহ গালিব, জসিমউদ্দিন রাহমানী, জুন্নুন সিকদারের লেখা ও আইএস লোগো সংবলিত জঙ্গিবাদী বই সংরক্ষণ করেন। ওই বই থেকে উসকানিমূলক জঙ্গিবাদ-সংক্রান্ত মতাদর্শ প্রচার করতেন। তিনি ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিদেশ থেকে জঙ্গিবাদী বই সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, ইমরানের মাধ্যমে শামীম জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। ইমরানের নির্দেশে তিনি জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যের কাছে অর্থ ও পার্সেল পৌঁছে দিতেন। ইমরানের তথ্যের বরাত দিয়ে সূত্র বলছে, সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় শূরা সদস্য সাজিদ বিভিন্ন সময় সানজিদ ওরফে কামরান ওরফে লাল ভাই ওরফে হাবিবুর রহমান ওরফে কামরান ওরফে মামুন ওরফে রশিদ নামে পরিচিত। ইমরান এই সাজিদকে বিভিন্ন সময় আশ্রয় ও অর্থ সহায়তা প্রদান করেছেন। এই সাজিদ বর্তমানে জেএমবির সামরিক গ্রুপের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জেএমবির আমির আবু মুহারিবের আস্থাভাজন। সাজিদের অবস্থান সম্পর্কে ইমরান বলেছেন, থ্রিমা গ্রুপে ২৬ মের পর থেকে সাজিদের আইডি নিষ্ক্রিয়/উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নতুন কোনো নাশকতার  প্রস্তুতি নিতে পারেন। সাজিদ সিলেটের আতিয়া মহলে পুলিশের অভিযানের আগে অবস্থান করেছিলেন। ভাগ্যক্রমে তিনি অভিযানের আগে আতিয়া মহল থেকে বের হয়ে আসেন। অতঃপর তিনি ঢাকায় ইমরানের মহাখালীর বাসায় আশ্রয় নেন। পরে সাজিদকে নিয়ে ইমরান ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। সাজিদ ছাড়াও ইতিপূর্বে তিনি আবদুল হাকিম, তাওহিদ, রাশেদ, আনোয়ার ও জনি মোহাম্মদসহ জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক সদস্যকে তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর