মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বার্মিজ সেনাদের নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ

কূটনেতিক প্রতিবেদক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত ১২ জন কূটনীতিকের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গত রবিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আরও  কিছু সময় নেওয়া হতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক মাস আগেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আলোচনায় ছিল না। এতেই প্রমাণিত হয়, সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের কতটা চাপে ফেলেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিশ্বজুড়ে যখন শান্তিতে নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির সমালোচনা চলছে, তখন পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে খুব কম জনই তার (সু চি) বিকল্প দেখতে পাচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামী ১৬ অক্টোবর মিয়ানমার প্রসঙ্গে বৈঠকে বসবেন; যদিও তারা মনে করছেন না খুব শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নেদারল্যান্ডসের উন্নয়ন করপোরেশন বিষয়ক মন্ত্রী উলা টরনায়েস রয়টার্সকে বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে’ কোপেনহেগেন বিষয়টি আলোচ্য সূচিতে আনার চেষ্টা করছে।’ মিয়ানমার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা সম্পর্কে অবগত দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংসহ কয়েকজন জেনারেল এবং রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে রাখাইন বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিবেচনা চলছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ, তাদের সঙ্গে আমেরিকানদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধসহ আরও কিছু বিষয় আসতে পারে।’ মার্কিন ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইউরোপ, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে আলোচনার কারণে ওয়াশিংটন এ বিষয়ে সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছে।’ ইয়াঙ্গুনে নিয়োজিত ইউরোপীয় এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো এই সংকট নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তারা এ বিষয়ে একমত যে, সমস্যার মূলে সেনাবাহিনী, বিশেষত কমান্ডার ইন চিফ- যাকে যে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপে টার্গেট করা দরকার।’ মিয়ানমারে অবস্থান করা কূটনীতিকরা বলছেন, আলোচনার দ্বার খোলা রাখতে প্রথম পর্যায়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রতীকী হতে পারে। তারা উদাহরণ টেনে বলেন, গত বছর ব্রাসেলস, বার্লিন ও ভিয়েনা সফর করা মিয়ানমার সেনাপ্রধানকে ইউরোপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। ১৮ মাস আগে সু চি ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারের সঙ্গে পশ্চিমাদের সুসম্পর্ক দেখা দিলেও চীনের তুলনায় তেমনটা নয় বলে স্বীকার করেন কূটনীতিকরা। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তেমন বিনিয়োগ নেই, সামরিক সংশ্লিষ্টতাও কম। এ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিলে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বা অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, যা সু চি ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ নিয়ে ব্রাসেলসভিত্তিক একজন ইইউ কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে পারি, আবার সেখানে আমাদের যে অর্থায়ন আছে, তা খতিয়ে দেখতে পারি। আমাদের মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা আছে, কিন্তু নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ অবস্থার উন্নতি না হলে মিয়ানমারের উন্নয়নে কোনো বিনিয়োগ করবে না ইউরোপীয় কমিশন।’ ইইউর এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘এখানে অস্ত্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আমরা নিয়মিত আলোচনা করছি, আমরা কি মিয়ানমারকে সংস্কারের জন্য পুরস্কৃত করব, ধীরে ধীরে ওই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করব- নাকি আরও কঠোর হব?’ প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সরাসরি দেশ পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ালে দেশটির ওপর থেকে ইইউ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে চলে আসা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর থেকে বেশির ভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা রেখেছে। ওয়াশিংটনে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা না থাকলেও আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফরের সময় মিয়ানমার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনায় পৌঁছানোর আশা করছে ওয়াশিংটন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে একটি কড়া বার্তা দিতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু পারছে না এই বার্তাই— আবার দেশটির ওপর চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব আরও বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়- তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে আবারও মিয়ানমারের ওপর বড় পরিসরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে প্রশাসনের তেমন সমর্থন  নেই।’ রয়টার্সের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অভ্যন্তরীণ চিন্তা-ভাবনা কী- তা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর