বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরীক্ষার প্রয়োজন নেই প্রাথমিকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরীক্ষার প্রয়োজন নেই প্রাথমিকে

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, গোটা শিক্ষাব্যবস্থা এখন পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। প্রাথমিক স্তরে পরীক্ষার কোনো আবশ্যকতা নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ভালো শিক্ষা পাওয়া নয়। এখন তাদের লক্ষ্য কেবল প্রথম হওয়া।

গতকাল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির ‘সহজপাঠ : শিশুর সামগ্রিক বিকাশ’ শীর্ষক এক আলোচনা চক্রে এ মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এ সময় গোটা শিক্ষাব্যবস্থার গলদ তুলে ধরার পাশাপাশি প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির সমালোচনা করেন তিনি।

শিশুদের পাঠক্রমের সঙ্গে ‘আনন্দযোগ নেই’ উল্লেখ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শোচনীয়। এখানে শিশুদের পরীক্ষার নামে রীতিমতো পীড়ন করা হচ্ছে। এতে বিন্দুমাত্র আনন্দযোগ নেই। শিক্ষাব্যবস্থা এখন পরীক্ষাসর্বস্ব। জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আমরা নষ্ট করে ফেলেছি।’ শিক্ষার শোচনীয় অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্পর্কে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমরা শিশুবান্ধব শিক্ষা চাই। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের যোগ চাই। শিক্ষায় খেলাধুলা, নাচ-গান, ছড়া, চারুকলা ইত্যাদি থাকবে। কিন্তু সর্বশেষ শিক্ষা কমিশনে গান-নাচকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হলে একটি শ্রেণি থেকে কোনোরকম ভাবনাচিন্তা না করেই প্রতিক্রিয়া হলো, সরকার দেশের সব মেয়েকে বাইজি বানানোর চেষ্টা করছে। এমনকি তাদের এই বীভৎস মন্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় চেষ্টা করল নৃত্যের সমার্থক শব্দ বের করতে।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষা কমিশন যখন ছড়া, চারুকলা, নৃত্য শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ করার কথা বলছে, তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ভাবনাচিন্তাই নেই।’ স্বাধীনতার পর গঠিত কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে তারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় ‘নৈতিক শিক্ষাকে’ অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কর্মকর্তারা তাদের সেই পরামর্শ উপেক্ষা করে মাদ্রাসায় ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনামলে তার এক পরিচিতের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতিতে নতুন ধারা প্রবর্তন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সে সময়ে নিয়ম করা হলো, কেউ যদি পাবলিক পরীক্ষায় কোনো একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হন, তবে পরবর্তী বছরে শুধু সেই বিষয়ে পরীক্ষা দিলেই চলবে। মজার ব্যাপার হলো, এরশাদ সাহেবের কোনো এক পরীক্ষার্থী আত্মীয়ের জন্য এই পদ্ধতি গৃহীত হয়েছিল। এ ছাড়া সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয় পক্ষ এখনো খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না বলেও মনে করেন তিনি। কবি, সাংবাদিক আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজির অধ্যাপক শাহীন ইসলাম, শিশু অধিকারকর্মী নুরুন্নাহার নূপুর, লেখক আনিসুল হকসহ ‘সহজপাঠ’ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবকরা।

সর্বশেষ খবর