শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার রায়ের কপি না পেয়ে আইনজীবীদের ক্ষোভ

বিএনপির নতুন কর্মসূচি বিক্ষোভ স্মারকলিপি গণস্বাক্ষর

নিজস্ব প্রতিবেদক

রায় ঘোষণার এক সপ্তাহ পার হলেও রায়ের সত্যায়িত কপি না পাওয়ায় উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারছেন না  বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবীরা জানান, রাজনৈতিকভাবে এই মামলায় তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঠিক একইভাবে রায়ের সত্যায়িত কপি দিতেও সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

রায় ঘোষণার পরদিন থেকে প্রতিদিনই কপি পাবেন বলে আশা করছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা। গতকাল সপ্তাহের শেষ দিনেও কপি না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। আইনজীবীরা বলেন, আগামী রবি অথবা সোমবার রায়ের কপি দেওয়ার কথা তাদের জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রায় ঘোষণার পরদিন থেকেই আমরা প্রতিদিন সত্যায়িত অনুলিপির জন্য যোগাযোগ করছি। রায় ঘোষণার সাত দিন পার হলেও আমরা কপি পেলাম না।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে রাখতে ইচ্ছা করেই রায়ের কপি দিতে সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। আর কপি না পাওয়ায় আপিল করা যাচ্ছে না। তাই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কবে মুক্তি পাবেন সে বিষয়টিও আমরা স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী রবি অথবা সোমবার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি দেওয়া হতে পারে বলে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের জানানো হয়েছে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এসব মিথ্যা মামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত। সরকার কৌশলে কপি দিতে বিলম্ব করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার জানে, বেগম খালেদা জিয়ার যে জনপ্রিয়তা, তাতে নির্বাচনে গেলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। এ কারণে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠেকাতে নির্বাচনী বছরে সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।’

জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি চেয়ে আসামিপক্ষ আবেদন করলে তা যত দ্রুত সম্ভব সরবরাহ করতে হবে। তবে রায়ের কপি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। রায়ের দিনই সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা জানান, ‘রবি অথবা সোমবার রায়ের কপি পেলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের আবেদনও দাখিল করব।’ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী সরফুদ্দিন আহমেদ। এর মধ্যে তারেক রহমান বিদেশে অর্থ পাচারের এক মামলায় সাত বছরের সাজার রায় মাথায় নিয়ে ১০ বছর ধরে দেশের বাইরে পলাতক জীবন-যাপন করছেন। একইভাবে কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানও পলাতক। রায়ের পর পলাতক এই তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

১০ বছর আগে সৌদি আরব থেকে এতিমদের জন্য আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিক্ষোভ গণস্বাক্ষর স্মারকলিপি : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দুই দফা টানা কর্মসূচি শেষে দুই দিন বিরতি দিয়ে ফের তিন দিনের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে আছে— আগামীকাল দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর অভিযান, রবিবার দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরী ছাড়া দেশের সব জেলা-মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ। এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলেও দাবি বিএনপি মহাসচিবের। কর্মসূচি ঘোষণাকালে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা ব্লুপ্রিন্ট, একটা নীলনকশা। সেই নীলনকশা কী? বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি যেন আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করা। আরও নীলনকশা হচ্ছে। নতুন আদালত সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটা মামলাকে ভেঙে দুইটা করা হয়েছে। বিস্ফোরকের জন্য একটা মামলা, ভাঙচুরের জন্য আরেকটা মামলা। অর্থাৎ বিরোধী দল যারা করবে তাদের এই মামলা লড়তে লড়তে সারাটা জীবন চলে যাবে, মৃত্যুবরণ করতে হবে তাদের এই মামলা ফেস করতে করতে।’

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরবত উল্লা বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভুয়া ও জাল নথির মাধ্যমে সাজানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সাজা প্রদানের প্রতিবাদে এবং দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আমরা পরবর্তী এই কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা শান্তি চাই, কোনো সংঘাত চাই না। আমরা দেশে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করতে চাই, আগামী নির্বাচনে জনগণ যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে আমরা সেই অবস্থা তৈরি করতে চাই। সেই লক্ষ্যেই আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছি। ২২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশের জন্য আমরা অনুমতি চাইব। এটা আমরা শিগগিরই করব। তারিখ ঠিক করে নিয়ে আপনাদের জানাব। আমরা আশা করব, সোহরাওয়ার্দীতে জনসভা করার অনুমতি সরকার দেবে।’ তিনি বলেন, ‘এই ভয়াবহ নির্যাতনের অবস্থা আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য একটাই— তারা দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায় এবং আগামী নির্বাচনে আবার জয়ী হতে চায়। তারা জানে, সুষ্ঠু, অবাধ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হলে তারা জয়লাভ করতে পারবে না বলেই এই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর