শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এই দেশ, এই ভাষা আমার প্রধান অহংকার

ইমদাদুল হক মিলন

এই দেশ, এই ভাষা আমার প্রধান অহংকার

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রতি সপ্তাহে আমি একটা অনুষ্ঠান করি। অনুষ্ঠানের নাম ‘হে বন্ধু হে প্রিয়’। ফেব্রুয়ারি মাস। বইমেলা চলছে। এই অনুষ্ঠানে অতিথি করে আনলাম আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং প্রিয় লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে। সাহিত্য নিয়ে কথা চলছে। এক পর্যায়ে তিনি আমার ‘নূরজাহান’ উপন্যাসটির কথা তুললেন। এই উপন্যাস নিয়ে তিনি একটি অসামান্য লেখা লিখেছিলেন। সেই লেখা পড়ে আমি বুঝেছিলাম ১২০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ উপন্যাসটির প্রতিটি শব্দ তিনি লক্ষ্য করেছেন। সেদিনকার সেই অনুষ্ঠানে কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘নূরজাহান’ বিক্রমপুরের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা। এই ভাষা উপন্যাসটিকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। উপন্যাসটির প্রধান সৌন্দর্যের একটি এর ভাষা। এই উপন্যাস অন্য কোনো ভাষায়, এই স্বাদ বজায় রেখে অনুবাদ করা অসম্ভব। বাংলা ভাষার বড় গৌরবটা হচ্ছে এই জায়গায়। এই ভাষার সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। ছোট দেশ, কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন স্বাদের ভাষা। এই ভাষা ব্যবহার করে আমাদের লেখকরা লিখছেন, আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছেন। বহু বিদেশি বাংলা ভাষার প্রেমে পড়ে এই ভাষা শিখেছেন। শান্তিনিকেতনে এবং আমাদের ভাষা ইনস্টিটিউটে বহু বিদেশি ছেলেমেয়ে বাংলা ভাষা শিখছে। যে ভাষার কারণে একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর বহু দেশে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে দিবসটি পালন করা হয়। এই ভাষা নিয়ে গৌরবের শেষ নেই আমাদের। বিদেশিরা যখন আমাদের ভাষার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখান, আমাদের আনন্দের সীমা-পরিসীমা থাকে না। ২০০৬ সালে আমি জাপানে গিয়েছিলাম জাপানের চারটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে, আমার নিজের লেখা এবং বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে লেকচার দেওয়ার জন্য। সেখানে আমার যে গাইড মেয়েটি ছিল তার নাম সাওরি তাকাহাসি। এত চমৎকার বাংলা বলত, এত সুন্দর করে রবীন্দ্রনাথের গান গাইত, আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আমার বড় গৌরব বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা। এই ভাষার প্রতি যে কোনো বিদেশির মমত্ববোধ দেখলে আমি আপ্লুত হই। আমি চাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ আমার দেশে আসুক। আমার দেশটাকে জানুক, আমার ভাষাটাকে জানুক। এই ভাষার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হোক। লেখক : জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক।

সর্বশেষ খবর