বুধবার, ১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেওয়ার জন্য বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। কোথাও কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখলে সবাই (দেশবাসী) যেন আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। আমরা শান্তি চাই, সমৃদ্ধি চাই। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, তা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দেশ হয়েছে, দারিদ্র্যমুক্তও হবে।’ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছি। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে কেউ কোনো ধরনের গেইম খেলার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ব্যবস্থা নেব। এটা নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবুজ আমাদের জাতীয় পতাকার রং। এই সবুজের মধ্যে লাল রং দিয়ে বাংলাদেশ লেখা হয়েছিল। আইসিসির আপত্তির কারণে তা পরিবর্তন করে সাদা লেখা হয়েছে। এটাতে পাকিস্তানের জার্সির সঙ্গে মেলানোর কিছু নেই, ঠিক হবে না।’ সংসদ নেতা বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা শান্তি চাই, সমৃদ্ধি চাই। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কিছু মানুষকে ব্যবহার করা হয় মানুষ হত্যার জন্য। যাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করানো হয়, বলা হয় তারা বেহেশতে যেতে পারবে। নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বেহেশতে যাবে, এটা কীভাবে তারা চিন্তা করে? যারা এদের ব্যবহার করে ধর্মান্ধ করছে, মানুষকে হত্যা করাচ্ছে, যারা শিক্ষাটা দিচ্ছে, তারা আগে কেন বেহেশতে যাচ্ছে না? যারা শিক্ষা দিচ্ছে তারা তো নিজেরা মরছে না। ব্যবহার করা হচ্ছে কিছু যুবসমাজকে। অবাক লাগে, কিছু সম্পদশালী ধনী পরিবার, উচ্চশিক্ষিত পরিবারও ধর্মান্ধের পথে যাচ্ছে। আমি জানি না, যারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তারা কীভাবে এভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যায়? আমরা চাই এই ধর্মান্ধতা থেকে মানুষ মুক্তি পাক।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, অবাধে লুটপাট করেছে তারা। তাদের হাত থেকে বিচারকরাও রেহাই পায়নি। তাদের অপকর্মের কারণে ওয়ান-ইলেভেনের সৃষ্টি হয়।

সংসদ নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। শহরভিত্তিক নয়, গ্রামের অর্থনীতিকে আমরা শক্তিশালী করছি। গ্রামীণ অর্থনীতিকে আমরা শক্তিশালী করে যাচ্ছি। গ্রামের মানুষ যেন নগরের সেবা পান, সেই ব্যবস্থাও করছি। দেশের সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে পানির জন্য হাহাকার ছিল। আমরা সেই সমস্যার সমাধান করেছি। কিছু জায়গায় পানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেখানে পানি জমা হয়, সেই ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করা হবে। পানি দিয়ে শরবত নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার কি না, তা আগে দেখুন। ওয়াসা যদি এ ক্ষেত্রে দায়ী থাকে, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বন্ধ পাটকল আমরা চালু করেছি। ইতিমধ্যে আমরা সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি। এর পরও শ্রমিকরা বেতন পান না। মিলগুলোকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কি না, সেখানে আগে হাত দিতে হবে। অনেকে সম্পদ রক্ষা না করে লুটপাট করে। এই লুটপাট হচ্ছে কি না তা আমরা ধরব।’ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবির জবাবে তিনি বলেন, ৩৫ বছরে যদি কেউ চাকরিতে প্রবেশ করে, ট্রেনিং নিতে নিতে তাদের বয়স ৩৮ বছর হয়ে যাবে। ৩৮ বছরে যে চাকরিতে প্রবেশ করবে, তাকে ২২ বছরের মধ্যে অবসর নিতে হবে। তারা তো পূর্ণাঙ্গ পেনশন পাবে না। তাই এমন দাবি তো বাস্তবসম্মত নয়।’ যারা আন্দোলন করেন তাদের এ বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যাল গোডাউন থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যালের গুদাম থাকবে না। এগুলো সব সরিয়ে নিতে হবে। এ জন্য মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যারা কেমিক্যাল ব্যবসায়ী রয়েছেন, শুধু তারাই সেখানে প্লট বরাদ্দ পাবেন। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠকে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য মজুদের জন্য গুদাম নির্মাণ, সমাজকল্যাণ ভবন নির্মাণ ও চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ এবং বুড়িতিস্তা নদীর তীর সংরক্ষণসহ মোট সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। অবশ্য সাত প্রকল্পের মধ্যে চারটিই সংশোধিত প্রকল্প। এই সাত প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে বলেন, সভায় চারটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করা হয়েছে ‘সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্প’। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ‘চট্টগ্রাম ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ’ প্রকল্প প্রথমবারের মতো সংশোধন করা হয়েছে। ২ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার এই প্রকল্প ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সীগঞ্জ’ প্রকল্প প্রথমবারের মতো সংশোধন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নীলফামারী জেলার চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ এবং বুড়িতিস্তা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এদিকে ২ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নয়, মানবিকসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও যেন কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর